ময়মনসিংহ কারাগার থেকে বেরিয়ে আশরাফ শামীম সাংবাদিকদের বলেন, “মানুষ যে সুন্দর বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখে তারই বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে আমাকে ভালোবেসে যাওয়া।”
Published : 20 Feb 2024, 09:01 PM
জনদুর্ভোগ ও নগরীর সমস্যা নিয়ে পোস্টার ডিজাইন করার অভিযোগে গ্রেপ্তার কবি ও গ্রাফিক ডিজাইনার শামীম আশরাফের নামে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন।
রোববার রাতে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আশরাফ শামীমকে সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছিল কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার দুপুরে তাকে ময়মনসিংহের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. তাজুল ইসলাম সোহাগের আদালতে হাজির করা হয়। তখন তার আইনজীবী জামিনের আবেদনের ওপর শুনানি প্রার্থনা করেন।
শুনানি শেষে বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন বলে আদালত পরিদর্শক মো. সফিকুল ইসলাম জানান।
শহরের আঠারো বাড়ি বিল্ডিং এলাকায় শামীমের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘গ্রাফিটি’ থেকে রোববার রাত ১০টার তাকে আটক করে পুলিশ।
শামীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পোস্টার ডিজাইনের মাধ্যমে তিনি ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এবং সিটির সদ্য সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটুর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক সফিকুল বলেন, বিকালে জামিন মঞ্জুরের চিঠি কারাগারে পৌঁছলে শামীমকে মুক্তি দেওয়া হয়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শামীম কারাগার থেকে বের হলে সংস্কৃতিকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা তাকে বরণ করে নেন।
কারাগার থেকে বেরিয়ে আশরাফ শামীম সাংবাদিকদের বলেন, “মানুষ যে সুন্দর বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখে এবং এখনও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে কাজ করে যেতে চায়, তারই বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে আমাকে ভালোবেসে যাওয়া। এই ভালোবাসা নিয়ে সকল অন্যায় নিপীড়ন ফিরিয়ে দিলাম এবং এই শহরের মানুষও সেভাবে ফিরিয়ে দিল। সত্য ও ভালোবাসার জয় হয়েছে।”
সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা
আশরাফ শামীমের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন।
সিটি করপোরেশনের পক্ষে প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার নন্দী বাদী হয়ে মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলাটি করেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী আবদুল মালেক জানান, বিচারক বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। ১ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
মামলায় বলা হয়, ৭ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন দেয়ালে সিটি করপোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নু করার অভিপ্রায়ে বেআইনিভাবে সিটি করপোরেশনের লোগো ব্যবহার করে আসামির ডিজাইন করা ও মুদ্রিত পোস্টার সাঁটানো হয়।
“পোস্টারের বক্তব্য ছিল- শোষক নয় সেবা চায় নগরবাসী, হোল্ডিং ট্যাক্সের পাহাড়সম বোঝা কেন সাধারণ মানুষের উপর চাপাও, দেশের একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে ঠিকাদার একজন, মালিক একজন, শাসকও একজন, আপনি জানেন কি? ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সড়ক উন্নয়ন ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্কসহ নাগরিক সেবা উন্নতকরণ প্রকল্পে ১৫৭৫ কোটি টাকার মধ্যে ৩০০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে বাকি টাকা ফেরত গেল কেন?
মামলায় আরও বলা হয়, এ ধরনের কুতথ্য সমাজে প্রচার করে মানুষের মনে সিটি করপোরেশনের নাম ক্ষুণ্নু ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে, যা তথ্য সন্ত্রাসের কাজ।”
এ ছাড়া অনুমতি ছাড়া সিটি করপোরেশনের লোগো ব্যবহার, কম্পিউটার ডিভাইসে ডিজাইন করে নেতিবাচক পোস্টার সাঁটানো, নাগরিকদের বিভ্রান্ত তথ্য সরবরাহ ও ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে প্রচার করে তথ্য সন্ত্রাস সৃষ্টি করে আসামি সাইবার নিরাপত্তা আইনে অপরাধ করেছেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী বলেন, “সিটি করপোরেশন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এর লোগো ব্যবহার করে যদি কেউ অপপ্রচার করে তাহলে আইনের দৃষ্টিতে অবশ্যই তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যেহেতু আশরাফ শামীম সিটি করপোরেশনের লোগো ব্যবহার করে সে অপপ্রচার চালিয়েছে, তাই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
শামীমকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ
এদিকে শামীমকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মঙ্গলবার ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণাসহ বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধনও করেন সংস্কৃতিকর্মীরা। তারা বলছেন, নাগরিক সমস্যা নিয়ে পোস্টার করা কোনো অপরাধ নয়।
ময়মনসিংহের কবি ও অনুবাদক সাঈদ ইসলাম বলেন, “এই শহরের সবচেয়ে পরিচিত মুখদের একজন কবি ও গ্রাফিক ডিজাইনার আশরাফ শামীম। হঠাৎ কী কারণে তাকে আটক করা হল, তা সবার কাছেই রহস্য। আমরা মনে করি, একজন নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে কোনোভাবেই খর্ব করার সুযোগ নেই।”