৫ অগাস্ট সংঘটিত একটি ঘটনা নিয়ে করা বিস্ফোরক ও নাশকতা মামলায় জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
Published : 11 Dec 2024, 03:58 PM
মায়ের মৃত্যুতে পরিবারের আবেদনে প্যারোলে কারাগার থেকে বের হলেও ছাত্রলীগের এক নেতার হাতকড়া নিয়ে দাফনকাজে অংশ নেওয়ার ছবি, ভিডিও ফেইসবুকে ছড়ানোর পর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা চলছে।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কেদারগঞ্জ গ্রামের সেই ছবি, ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন- মায়ের লাশ বহনের সময়ও হাতে হাতকড়া থাকতেই হবে?
ছাত্রলীগের ওই নেতার নাম জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা পৌর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রুবাইত আজাদ সুস্থির।
জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে আবুল হোসেন কেদারগঞ্জ গ্রামের মৃত কবির হোসেনের ছেলে। জাহাঙ্গীরের মা আলেয়া খাতুন (৬৫) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার সকালে মারা যান।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি খালেদুর রহমান বলেন, “গত ৫ অগাস্ট সংঘটিত একটি ঘটনা নিয়ে করা বিস্ফোরক ও নাশকতা মামলায় জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ১২ নভেম্বর থেকে তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে আটক।”
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ডিউটি অফিসার এসআই মিজানুর রহমান জানান, মায়ের দাফনে অংশ নেওয়ার জন্য পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মঙ্গলবার বেলা ১টা থেকে বেলা ৫টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা সময়ের জন্য জাহাঙ্গীরকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
হাতকড়া হাতে জাহাঙ্গীরের একটি ভিডিও ফেইসবুক পেইজে শেয়ার করে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক ওবায়দুর রহমান চৌধুরি জিপু লিখেছেন, “হাতে মিথ্যা মামলার হাতকড়া, কাঁধে মায়ের লাশ....জাহাঙ্গীর কীভাবে তোমাকে সান্ত্বনা দেব? সে ভাষা আমার জানা নেই।”
সেই ভিডিওতে দেখা গেছে, হাতে হাতকড়া এবং দড়ি বাঁধা অবস্থায় পুলিশের গাড়ি থেকে জাহাঙ্গীর নামছেন। জাহাঙ্গীর শোকে স্বজনদের বুকে আছড়ে পড়ছেন তখনো হাতে হাতকড়া। হাতকড়া হাতে নিয়েই সেরেছেন ওজু। পরে যখন কাঁধে মায়ের লাশের খাটিয়া নিয়ে যাচ্ছিলেন জাহাঙ্গীর, তখনও তার হাতে ঝুলছিল হাতকড়া।
এই লেখায় মন্তব্য করেছেন অনেকে। বশির উদ্দিন নামের একজন লিখেছেন “এরকম দৃশ্য যেন কোনো দলের ভাইয়ের না আসে।”
জোয়ার্দ্দার জুয়েল নামের একজন লিখেছেন, “কখনো ভুলবো না...হাতে হাতকড়া কাঁধে মায়ের লাশ...।”
নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আত্মগোপনে থাকা এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “এর আগে আমরা দেখেছি জেলা ছাত্রলীগের নেতা হিমেলকে তার পিতার দাফনকাজের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয় তখনও তার হাতে হাতকড়া ছিল। হাতকড়া হাতে নিয়েই সে তার মায়ের গলা জড়িয়ে কেঁদেছে। এসব দৃশ্য খুবই কষ্টকর। যুবলীগ নেতা বাহারুলকেও তার স্বজনের দাফনের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল তখনও তার হাতে হাতকড়া ছিল।
“মঙ্গলবারও যখন জাহাঙ্গীরের কাঁধে ছিল মায়ের লাশ তখনও তার হাত ছিল দড়িতে বাঁধা। এটা হয়ত আইনের বিধান। তারপরও বলবো, প্রয়োজনে এই বিধান পরিবর্তন করা দরকার। অন্তত স্বজনের দাফনকাজের সময় সে যেনো পুরোপুরি মুক্ত থাকে। তার হাতে যেন হ্যান্ডকাফ না থাকে।”
তবে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী জানিয়েছেন, “আইনে এমন বিধান নেই। প্যারোলে হলেও তিনি তখন সাময়িকভাবে মুক্ত, তাই অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পাহারায় থাকলেও হাতে হাতকড়া পরিয়ে রাখার বিধান নেই।”
তবে জাহাঙ্গীরের মামা আলাউদ্দিন বলেন, “জাহাঙ্গীর তার মায়ের দাফনে অংশ নিতে পেরেছে। মায়ের জন্য দুহাত তুলে দোয়া করতে পেরেছে এতেই আমরা খুশি।”
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারের জেলার মো. ফখর-উদ্দিন মঙ্গলবার রাতে বলেন, “কোনো নিকটাত্মীয় মারা গেলে তার দাফনকাজে অংশ নেওয়ার জন্য কয়েক ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার বিধান আছে। মৃত ব্যক্তির স্বজনরা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করে এভাবে মুক্তির অনুমতি পেতে পারেন।
“এই পদ্ধতিতেই মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তাকে আবার বেলা ৫টার আগেই কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।”
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান বলেন, “কেউ প্যারোলে মুক্ত থাকাকালীন সময়ে যাতে কোনো অপ্রীতিকর বা আইন শৃঙ্খলা বিঘ্ন হয়-এমন কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ মোতায়ন রাখা হয়। জাহাঙ্গীরের প্যারোলে মুক্তির ক্ষেত্রেও আইন অনুযায়ী সবকিছু করা হয়েছে।”