ঢাকার আশুলিয়ায় একসঙ্গে খুন হওয়া বাবা-মা ও ছেলেকে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে পাশাপাশি শায়িত করেছেন স্বজনরা। তারা এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন।
সোমবার কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের গরুড়া ফুলবাড়ী গ্রামে বাড়ির পাশে রামদেবপুর ফুলবাড়ী কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।
শনিবার আশুলিয়ার একটি বহুতল ভবনের চারতলার ফ্ল্যাট থেকে গার্মেন্ট শ্রমিক দম্পতি মুক্তারুল হোসেন বাবুল (৫০), তার স্ত্রী শাহিদা বেগম (৪০) এবং ছেলে মেহেদী হাসান জয়ের (১২) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বাবুল গরুড়া ফুলবাড়ী গ্রামের গ্রামের মৃত সইর উদ্দিনের ছেলে।
ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার ভোরবেলায় তাদের লাশ গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়। এসময় স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে সকাল সাড়ে ৯টায় তাদের দাফন করা হয়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাবুলদের বাড়ির সামনে শামিয়ানার নীচে স্বজনরা বসে আছেন। কারও মুখে কথা নেই; নিঃস্তব্ধ চারপাশ।
বাবুলের বড় ভাই আইনুল হক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বাবুল পরিবারের সবার ছোট, এ কারণে আদরের ছিল। ১৭ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে চট্টগ্রাম চলে যান তিনি। সেখানে গার্মেন্টে চাকরির সময় এক সহকর্মীকে বিয়ে করেন। মেহেদী হাসান জয় সেই ঘরের সন্তান।
“একদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান সেই স্ত্রী। এরপর ছেলে মেহেদীকে গ্রামের বাড়িতে রেখে ঢাকায় চলে যান বাবুল। আশুলিয়ার গার্মেন্টে কাজ নেন। সেখানে শাহিদা বেগমের সঙ্গে পরিচয়ের পর তাকে বিয়ে করেন।”
শাহিদার বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা মধ্যপাড়া গ্রামে। গত রোজার ঈদের সময় ছেলেকেও আশুলিয়ার জামগড়ায় নিয়ে স্কুলে ভর্তি করেন বাবুল। সেই থেকে তিনজন একসঙ্গে ছিলেন বলে জানান আমিনুল ইসলাম।
বাবুলের বড় বোন মরিয়ম বেগম বলেন, “প্রতিবছর দুই ঈদে পরিবার নিয়ে গ্রামে আসত বাবুল। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর আয়োজনে বাড়ি আসার কথা ছিল। আমরা অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু পরে বাবুল আসবে না বলে বড় ভাইকে (আইনুল) জানিয়ে দেয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাবুলের সঙ্গে তাদের শেষ কথা হয়। এরপর মুঠোফোন বন্ধ হয়ে যায়।”
বাবুলের চাচাত ভাই মোহাম্মদ হাজী বলেন, “বাবুলদের সঙ্গে কারও কোনো ঝামেলা ছিল না। কেন বাবুলসহ তার পরিবারকে নৃসংশভাবে হত্যা করা হল? এটার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।”
দাফনের পর কবরের পাশে ছেলে লোকমান আলীকে নিয়ে বেড়া তৈরি করছিলেন বাবুলের বড় ভাই ইউসুফ আলী।
এ সময় লোকমান আলী বলে, “মেহেদী (বাবুলের ছেলে) আমাদের সঙ্গে খেলাধুলা করত। সাত দিনের জন্য ঢাকায় গিয়ে আর ফিরে আসেনি। আজ তাকে মা-বাবার সঙ্গে কবরে রেখে দিলাম।”
কোষারাণীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, “বাবুলের বিরুদ্ধে এলাকায় কখনও অভিযোগ শুনিনি। সে ভালো একজন মানুষ ছিল। কিন্তু কী এমন হয়েছিল যে এইভাবে গলা কেটে পুরো পরিবারকে হত্যা করা হলো! আমরা এর সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের বিচার চাই।”
[প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ০২ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক]