সুনামগঞ্জের পানিবন্দি মানুষ এখন খাবার সংকটে

পানিবন্দি তিনটি দিন পেরিয়ে এসে খাবারের সংকটে পড়েছে সুনামগঞ্জের বন্যাদুর্গত মানুষ; এই বিপদে গবাদিপশু নিয়ে কী করবেন, সেই মাথাব্যথাও তাদের ভোগাচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিশামস শামীম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2022, 02:49 PM
Updated : 19 June 2022, 02:49 PM

জনপ্রতিনিধিরাও বলছেন, তাদের কাছে মানুষ ত্রাণ চাইছে; কিন্তু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ২৯ লাখ মানুষের এই জনপদে সবার কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না।

সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন গ্রামের দিকে মানুষ; যারা এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেননি।

সদর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের কৃষক আবদুর রহমান রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা গরু-বাছুর মসজিদের ছাদে রেখেছি। নিজেরা আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি। কিন্তু খাবার তো পাচ্ছি না।”

জেলা শহরের সার্কিট হাউস থেকে শহরের কিছু মানুষকে রান্না করা খাদ্য বিতরণ করছে প্রশাসন। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে অভিযোগ করেছেন বাসভাসিরা।

বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগের কেউ কেউ বানভাসী মানুষের দিকে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু সুনামগঞ্জ-সিলেট পথে যান চলাচল এখনও স্বাভাবিক হয়নি; সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানিও রয়েছে। 

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “আমরা মানুষকে সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রতিটি উপজেলার মানুষ বন্যা কবলিত। ঘরবাড়ি ডুবে আছে।

“আমাদের সব অফিসের নিচতলা পানির নিচে। সুনামগঞ্জে বহু ক্ষতি হয়েছে। পানিও ধীরে ধীরে নামছে।” 

এদিকে রোববার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ ও সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

পাউবো জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে মেঘালয়ে। সুনামগঞ্জেও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। পানি ধীরে ধীরে নামছে। এখনও অনেক বাসাবাড়ি ও অফিসে পানি আছে।”

সদর উপজেলার বৈঠাখালি গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমার গ্রামের সবার ঘর ডুবে আছে। মানুষ আশ্রয় পাচ্ছে না। কোনো ত্রাণ পাচ্ছে না। কেউ খোঁজও নিচ্ছে না।”

রাধানগর গ্রামের বাবুল মিয়া বলেন, “ঘরে হাঁটুপানি। মাচা বেঁধে পরিবার আশ্রয় নিছে। কিন্তু খাবার নেই, খুব সংকটে আছি।” 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঈনুল হক বিকালে বলেন, “আমার  ইউনিয়নের সবার ঘরে হাঁটুপানি। কাঁচা ঘর ভেঙে যাচ্ছে। সবাই আমাদের কাছে ত্রাণ চায়, আমরা দিতে পারছি না। আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষকে স্থান দিতে পারছি না।”

এই অবস্থার মধ্যে রোববার বিকালে সুনামগঞ্জ বিজিবির সিইও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুবুর রহমান সদর উপজেলার বৈঠাখালি, রাজারগাঁও গ্রামে বানভাসী দুই শতাধিক মানুষকে ত্রাণ দিয়েছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পলিন বখত বিকালে শহরে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সেলিম আহমদ বিকালে তাহিরপুর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।

বানভাসী মানুষ অভিযোগ করেছেন, চারদিকে পানি। এর মধ্যে তারা ডাকাতের আতঙ্কে ভুগছেন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় গুরুতর অসুস্থ মানুষকেও হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না। শহরে কিছু দোকানপাট খুললেও জিনিসপত্রের দাম তিনগুণ রাখছেন দোকানদাররা।

তবে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, “নিত্যপণ্যের দাম যারা বেশি রাখছে তাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হচ্ছে।”

শহরের বাইরে গ্রাম এলাকার পানিবন্দি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন হচ্ছে। কারণ, সেখানে বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষ মোবাইল চার্জ করতে পারছেন না। কাঁচা ঘরবাড়ি বানের পানিতে ডুবে থেকে ধসে পড়ছে বলেও অনেক গ্রামবাসী জানিয়েছেন।

শান্তিগঞ্জ উপজেলার উজানিগাঁও গ্রামের রেহানা বেগম বলেন, “পানিতে ডুবে থেকে আমার গ্রামের শতাধিক মানুষের ঘর ধসে পড়ছে। এগুলো কাঁচা ঘর। সবখানে পানি থাকায় মানুষ রান্না করতে পারছে না। খাবার পাচ্ছে না।”

সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, “আমার ইউনিয়নের সবাই পানিবন্দি। আমরা সবার কাছে পৌঁছাতে পারছি না। ত্রাণ থাকলেও দিতে পারছি না। ত্রাণের চাহিদা বেশি।

একই উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল হক বলেন, “গ্রামের মানুষ অসহায়। সবাই ত্রাণ চায়, সহায়তা চায়।”