উপজেলার চাখার ইউনিয়নের সাকরাল শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রতিবেশী এই দুই বাসিন্দার বিয়ে শনিবার রাতে ধুমধাম করে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় সাতশ মানুষ এতে আমন্ত্রিত ছিলেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে মেয়ে ও জামাতার সঙ্গে বসবাস করতেন বানু বেগম। বেশ আগেই স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। কয়েক মাস আগে সেখানে বাসিন্দা হয়ে আসেন ভিক্ষুক আশরাফুল; আট বছর আগে তিনি স্ত্রীকে হারিয়েছেন।
আশরাফুল আলী গণমাধ্যমকে বলেন, “মুই নতুন এহানে আওয়ার পর মোর লগে তার পরিচয় হইছে। মুই তারে জিগাইছি, আপনের কি কেউ আছে? সে কইছে, মোর স্বামী নাই।
“তহন মুই তারে কইছি আপনে কি মোরে বিয়া করবেন? সেও মোরে বিয়া করতে রাজি হইছে”, যোগ করেন আশরাফুল।
“তার ঘরে আইতাম-জাইতাম। তহন হে কয়, মোরে বিয়া করবেন? মুইও রাজি হইছি। মোর আর মোর স্বামীর ল্যাইগ্যা সবাই দোয়া করবেন। মুইও নামাজ পইরা আমনেগো সবাইরে দোয়া করমু”, যোগ করেন বানু।
বানু বেগমের একমাত্র সন্তান মুক্তা বেগম বলেন, প্রায় ১৯-২০ বছর আগে মায়ের সঙ্গে বাবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। তিনি (বাবা) বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। বাবার সঙ্গে তার যোগাযোগ থাকলেও; মায়ের নেই।
মুক্তা বলেন, “প্রথমে আমি বিয়েতে রাজি ছিলাম না। চেয়ারম্যান ও এলাকার মানুষ যখন বুঝিয়েছে তখন রাজি হয়েছি। আমারও তো সংসার আছে। কতদিন অন্যের ছেলে (মেয়েজামাই) মায়ের ভরণপোষণ দিবে। তাই মা যা চায় তাতেই আমি রাজি হয়েছি।”
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা খলিলুর রহমান জানান, আশরাফুল আলী অসুস্থ হলে তাকে দেখার মতো কেউ ছিলেন না। বানু বেগমেরও স্বামী নেই। দুজনই নিঃসঙ্গ ছিলেন। এই বিয়ের মধ্য দিয়ে দুইজন নিঃসঙ্গ মানুষ এক হয়েছেন।
সাকরাল শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি কবির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, “পরিচয়ের পর তাদের মধ্যে ভাব হইছে। পরে আমরা বিষয়ডা চেয়ারম্যান সাবরে জানাই। তিনিই দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করেন।
চাখার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুল ইসলাম টুকু বলেন, এ বছর শীতে কম্বলের বরাদ্দ কম ছিল। তাই রাতের বেলা ঘরে ঘরে গিয়ে কম্বল বিতরণ করেছেন। একরাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের মাঝে কম্বল বিতরণ করতে গিয়ে জানতে পারেন আশরাফুল-বানুর কথা।
“বৃদ্ধ বয়সে একা থাকাটা কষ্টকর, তাই এরপর সবার সঙ্গে কথা বলে দিনক্ষণ ঠিক করি। সব সময় নবদম্পতির পাশে থাকব”, যোগ করেন ইউপি চেয়ারম্যান।