ধর্মঘটে ভোগান্তি চরমে, গা নেই পরিবহন নেতাদের

ডিজেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে সারাদেশের পরিবহন ধর্মঘটে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হলেও তাতে গা করছেন না পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2021, 07:10 AM
Updated : 5 Nov 2021, 10:18 AM

শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার যাত্রীরা চলাচলে হয়রানি পোহাচ্ছেন।

প্রয়োজনে ঘর থেকে বেরিয়ে গন্তব্যে যেতে না পেরে বাসস্ট্যান্ড থেকে ফিরে গেছেন অনেকে। বাস চলাচল বন্ধের মধ্যে নিয়োগ পরীক্ষা দিতে যারা বেরিয়েছিলেন, সময় ধরতে তাদের উঠেছে নাভিশ্বাস।

ডিজেল ও কেরসিনের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মবিরতির ঘোষণা আসে।

সারা দেশ থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।

রাজশাহী

শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে রাজশাহীর সব রুটে দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা বাসসহ সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কিছু যানবাহনে আন্তঃরুটে যাত্রীরা চলাচল করলেও দুরপাল্লার যাত্রীরা পড়েছেন বেকায়দায়।

রাজশাহীর মোহরপুরের সাইফুল ইসলাম ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। জরুরি প্রয়োজনে বুধবার দুই দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি এসে আটকা পড়েছেন।

সাইফুল বলেন, শনিবার সকাল থেকে তাকে অফিস করতে হবে। শুক্রবার বেলা ১১টার শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে করে গন্তব্যে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাউন্টারে আসার পর তার টিকিট ফেরত নেওয়া হয়। ফলে বিকল্প পথে যাওয়ার পথ খুঁজছেন তিনি।

আরও কয়েকজন যাত্রী জানালেন, তারাও সকাল থেকে একই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী বলেন,  “তেলের দাম বাড়ানো হলেও যানবাহনের ভাড়ার বিষয়ে কোন ঘোষণা আসানি। এ অবস্থায় আমরা বেশি ভাড়া নিতে চাইলে যাত্রীদের ঝামেলা হবে। তাই বাধ্য হয়ে বাস বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ভাড়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার পর রাস্তায় যানবাহন নামানো হবে।

শুক্রবার সকালের যাদের আগাম টিকিট ছিল তাদের ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

রাজশাহী বিভাগীয় সকড় পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব বলেন, হঠাৎ করে ডিজেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি এবং এর সঙ্গে সমন্বয় করে বাসের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি সুরাহা হয়নি। এ কারণে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কর্মবিরতি চলছে।

তিনি বলেন, “আমাদের প্রথম দাবি তেলের দাম কমানো। তবে দাম না কমানো হলেও ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। এরপর যানবাহন সড়কে নামবে।”

গাজীপুর

গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের শুক্রবার সকালে দূরপাল্লার কিছু বাস চলাচল করলেও যাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় রাস্তায় ট্রাক ও কভার্ডভ্যানও দেখা গেছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহন চলাচল কমতে থাকে।

সকালে কিছু পরিবহন শ্রমিক বিচ্ছন্নভাবে এসব গাড়িতে হামলা করলে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ঢাকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পরীক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েন।

গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া পেয়ারবাগান এলাকায় ঢাকা-বাইপাস সড়কের উত্তরবঙ্গের বাস কাউন্টারে সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ৬টার উত্তরবঙ্গগামী কিছু বাস চলছে। এ সব বাসের যাত্রীদের দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি ভাড়া গুণতে হয়েছে।

পেয়ারাবাগান বাসকাউন্টারে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কথা হয় মো. রুবেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাকে সিরাজগঞ্জ পাঠানোর জন্য মক্কা ট্রাভেলস বাসের টিকিট কিনতে কাউন্টারে গেলে তার কাছে ১৫০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা চাওয়া হয়।

পরে বিকল্প গাড়ি না পেয়ে তিনি মায়ের জন্য ৩০০ টাকায় টিকিট কেটেছেন।

রাজশাহীর জলি সপ্তাহখানেক আগে সন্তানদের নিয়ে গাজীপুরে বোনের বাড়ি বেড়াতে আসেন। শুক্রবার ৭টার দিকে অপেক্ষা করছিলেন রাজশাহীর গ্রামের বাড়িতে ফেরার জন্য। প্রায় এক ঘন্টার মতো অপেক্ষা করে কোন বাস না পেয়ে আবার বোনের বাড়ি ফিরে যান।

পরিস্থিতি ঠিক হলে পরে গন্তব্যে রওনা হবেন বলে জানান জলি।

গাজীপুর মহানগরের চান্দনা-চৌরাস্তা মোড় এলাকায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ময়মনসিংহের গাড়ির অপেক্ষায় যাত্রীদের জটলা দেখা গেছে।  কিন্তু দীর্ঘ সময় কোনো বাস না পেয়ে অনেকেই ফিরে গেছেন।

মহানগরের পূবাইল থানার মীরের বাজার এলাকার মাহাদী ফ্যাশনে চাকরি করেন আহাদ আলী; থাকেন টঙ্গীতে। শুক্রবার সকালে বিশেষ প্রয়োজনে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে যাওয়ার জন্য চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকা গেলেও কোনো বাসের দেখা মেলেনি।

চান্দনা-চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ডে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানার খয়রাকুড়ি এলাকার বেবি সাহাকে দীর্ঘসময় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

যাত্রীরা জানান, সকাল থেকে দু/একটি বাস চললেও ২০০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা আদায় করছে। এর উপর আবার লাঠি-সোটা নিয়ে দলবেঁধে স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকরা চলন্ত গাড়ির গতিরোধ করে যানবান চলাচলে বাঁধা ও হামলা করছেন।

পরিবহন শ্রমিকেদের হামলা থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও বাদ যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন চালকেরা।

স্থানীয় অটোরিকশা চালক আব্দুর রহিম জানান, “আমাদেরতো তেল লাগে না। তেলের দাম বাড়ানো-কমানোর সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আরপরও আমাদের রোডে চলতে গেলে পরিবহন শ্রমিকরা হামলা করছে।”

রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি পরীক্ষায় অংশ নিতে কয়েকজন পরীক্ষার্থী ময়মনসিংহ থেকে বাসে করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। কিন্তু সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চান্দনা-চৌরাস্তায় গিয়ে তাদের বহনকারী বাসটি স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকদের বাঁধার মুখে পড়ে।

তাদের একজন সৈকত মিয়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ডিস ওয়াশার পদে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার কুর্মিটোলা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে সকাল ১০টার পরীক্ষা ধরতে যাচ্ছিলেন। 

আরেক চাকরি পরীক্ষার্থী আশিক মাহমুদ বলেন, “পরিবহন ধর্মঘটের কারণে ঢাকায় চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিতে পারব কি না এখনও তা অনিশ্চিত।”

পরিবহন শ্রমিকদের হামলার বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে শুক্রবার সকাল থেকে গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দূরপাল্লার কোন পরিবহন চলছে না। তবে দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোথাও বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর তার জানা নেই।

কোনাবাড়িতে সালনা হাইওয়ে থানার ওসি মীর গোলাম ফারুক জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও দূরপাল্লার বাস-ট্রাক চলাচল করছে না। কোথাও যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়ে গাজীপুর জেলা সড়ক পরিহবণ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান উদ্দিন সরকার বলেন, ভাড়ার সঙ্গে তেলের মূল্য বৃদ্ধির কোন সমন্বয় না হওয়ায় কেন্দ্রীয় পরিবহন নেতাদের সিদ্ধান্তে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।

“হয় তেলের মূল্য কমাতে হবে, তা না হলে ভাড়া বাড়াতে হবে। তা না হলে এ ধর্মঘট চলবে।”

চাঁদপুর

শুক্রবার সকাল থেকে চাঁদপুরের বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ভোর থেকে চাঁদপুর থেকে কুমিল্লাগামী বোগদাদ পরিবহনের কয়েকটি বাস চলতে দেখা গেছে।

ধর্মঘটের কারণে চাঁদপুর পৌর বাস টার্মিনালে সকল রুটের বাস সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

চাঁদপুর-কুমিল্লা রুটের বাস চালক মানিক পাটওয়ারী জানান, হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করায় মালিক ও শ্রমিকরা বিপাকে পড়েছে। এসব ক্ষেত্রে বিশেষ করে শ্রমিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানাই।

একই রুটের আরেক বাস চালক মিজানুর রহমান বলেন, ”সরকার কোন সিদ্ধান্ত না দিলে বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। আমরা চাই, সরকার আমাদের দিকে লক্ষ রেখে ভালো কিছু সিন্ধান্ত জানাবে।”

বাস বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানান মোরশেদ আলম নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধি করার কারণে যাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্থ বেশি হবে। কারণ পরিবহনের পক্ষ থেকে ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হবে। এটা অমানবিক।

“আজকে বাস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়তে হয়েছে। বাড়তি ভাড়া খরচ করে বিকল্প পথে যেতে হবে।”

চাঁদপুর ট্রাফিক পুলিশের টিআই জহিরুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে বোগদাদ পরিবহনের কয়েকটি বাস কুমিল্লা গিয়েছে। এছাড়া অন্যরুটের সব বাস বন্ধ।

এদিকে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে চাঁদপুরে লঞ্চ মালিকরা কোন ধর্মঘটের ডাক দেয়নি; বাড়েনি ভাড়াও। চাঁদপুর ধেকে সিডিউল অনুযায়ী সকল রুটের লঞ্চ চলাচল করছে।

বাস চলাচল বন্ধ থাকায় অধিকাংশ যাত্রী লঞ্চে করে ঢাকা যাচ্ছেন। 

লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি বিপ্লব সরকার বলেন, “চাঁদপুর থেকে সব রুটে লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে। আগের নিয়মেই ঘাট থেকে লঞ্চগুলো ছেড়ে যাচ্ছে। ভাড়া বাড়ানো হয়নি। আরও দু-একদিন পর আমাদের নির্দেশনা আসতে পারে।”

নারায়ণগঞ্জ

ধর্মঘটে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। কিছু লোকাল বাস চলাচল করলেও সেগুলোতে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, শিমরাইল, মদনপুর এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা ও গাউছিয়ায় এলাকায় বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের ঘন্টার পর ঘন্টা বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অনেকে বাধ্য হয়ে পিকআপ ভানে, সিএনজি অটোরিকশা ও  রিকশাভ্যানে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছেন।

সকালে নারায়ণগঞ্জ-সুনামগঞ্জ রুটে বিআরটিসির কিছু চলাচল করতে দেখা গেছে। পণ্যবাহী কিছু ট্রাকও চলাচল করেছে। তবে সেটা অন্যান্য দিনের তুলনায় খুবই কম।

সাইনবোর্ড থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দির যাত্রী মাদ্রাসা  শিক্ষক আব্দুস সোবহান শুক্রবার সকাল থেকে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোন বাস পাননি।

তিনি বলেন, গত বুধবার ছুটিতে তিনি নারায়ণগঞ্জ বাড়িতে এসেছিলেন। তাকে দুপুরের মধ্যে মাদ্রাসায় ফিরতে হবে। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে তিনি কোন বাস পাচ্ছে না।

নোয়াখালীর যাত্রী বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা দেওয়ান আবুল কালাম বলেন, “কয়েকঘন্টা অপেক্ষা করে গাড়ির দেখা পায়নি। পরিবহন মালিকেরা ধমঘট ডেকে মানুষকে জিম্মি করে ফেলেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

“একদিকে তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। আবার ধর্মঘটের কারণে গাড়ি নেই।”

নোয়াখালীর বাড়িতে বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেলেও ধর্মঘটের কারণে যেতে পারছেন না বলে জানালেন সানারপাড় এলাকায় আশিকুর রহমান।

অসহায় কন্ঠে তিনি বলেন, “ ধর্মঘটের কারণে বাস চলাচল করছে না। বাড়ি যেতে বার বার ফোন করছে। ছোট বোনের বিয়ের কিছু মালপত্র আমার সঙ্গে। এখন কি করব বুঝতে পারছি না।”

চট্টগ্রামগামী যাত্রী দেলোয়ার হোসেন বলেন, সরকারের এভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। নিম্ন সাধারণ মানুষের আয় তো বাড়েনি। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। ভোগান্তিতে পড়বে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

এদিকে বিআরটিসি শিমরাইল কাউন্টারের সুপারভাইজার সুরুজ মিয়া বলছেন, ধর্মঘটের  কারণে বেসরকারী গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় অন্যান্য দিনের তুলনায় তাদের পরিবহনে যাত্রী বেড়েছে। আর ভাড়াও আগেরটাই নেওয়া হচ্ছে।

শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক মশিউর রহমান অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে বলেন, স্থানীয় বাসগুলো যে যার মতো করে ভাড়া নিচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা আসার পর যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী উৎসব পরিবহনের ব্যবস্থাপক মো, কাজল জানান, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে।

নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক কামরুল ইসলাম জানান, ধর্মঘটের কারণে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

সাভার

ধর্মঘটের কারণে সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

শুক্রবার ছুটির দিনে প্রয়োজনে সড়কে বেরিয়ে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।

কিছু লোকাল কিছু বাস বের হলেও সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে পরিবহন শ্রমিকদের একটি অংশ সড়ক অবরোধ করে সেগুলোর চলাচল বন্ধ করে দেয়।

গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও রিকশার ভাড়া বেড়েছে কয়েকগুন।

এদিকে ধর্মঘটের প্রতিবাদে সকালে সড়ক অবরোধ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে।

মিরপুর বাঙলা কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী আবরার হোসেন বলেন, ভোর বেলায় তিনি ভর্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এসেও কোন গাড়ি পাননি। কোন উপায় না পেয়ে দ্বিগুন রিকশাভাড়া দিয়ে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের গিয়ে দেখেন তার মত অনেকেই বাসের অপেক্ষায় রয়েছেন।

বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রের ভতি পরিক্ষার্থী তাসনিয়া রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিজেদের ব্যক্তিগত যানবাহন আছে। তারপরও আমি শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিকে সমর্থন করি।

চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে ভোগান্তির কবলে পড়া রফিক মিয়া বলেন, “অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকার যেমন হুট করে তেলের দাম বাড়িয়েছে তেমনি পরিবহন শ্রমিক-মালিকরাও পরিবহন যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে ধর্মঘট ডেকে বসেছেন।”

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী মাইনুল ইসলাম জানান, পরিবহন না পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ সমূহের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় সাধারণ যাত্রী ও পথচারীরা তাদের প্রতিবাদে অংশ নেয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে নেয়।

সিলেট

পরিবহণ ধর্মঘটে সিলেটে থেকে দূরপাল্লার ও স্বল্পপাল্লার বাস বন্ধ রয়েছে। ট্রাক পিকআপভ্যান চলাচল না করায় পণ্যপরিবহনও বন্ধ রয়েছে।

তবে শুক্রবার সকালে নগরী ও আশপাশের এলাকায় কিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে।

জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জানান,হঠাৎ করে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের পরিবহন খাতে নতুন সঙ্কটের সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে গাড়ি ভাড়াসহ পরিবহন খরচ বাড়বে। এর প্রভাব সকল স্তরে পড়বে। তাই সরকারকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পরিহার করতে হবে।

তিনি বলেন, ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ডিজেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করা না হলে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার অনুযায়ী পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

এ দিকে ধর্মঘটের কারণে বিভিন্ন স্থানে আটকরা পড়েছেন যাত্রীরা; বাস না থাকায় অপিরিসীম  দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।

ঢাকা থেকে সিলেট আসা ব্যবসায়ী আবুল হাসান জানান, ব্যবসার কাজে বুধবার সিলেট এসেছিলাম। হঠাৎ ধর্মঘটের কারণে ঢাকা ফিরতে পারছি না। বাস চলাচল না করলেও ট্রেন চলাচল করছে। কিন্তু ট্রেনের টিকেট পাওয়া যায়নি।

এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ট্রেনের উপর চাপ বেড়েছে বলে জানালেন সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার খলিলুর রহমান।

তিনি বলেন, “সিলেট থেকে ঢাকা ও চট্রগ্রামগামী ট্রেনের সব সিট বুকিং হয়ে গেছে। এখন শত শত মানুষ টিকেটের জন্য স্টেশনে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু তাদের টিকেট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”