মধুমতি নদীর অবৈধভাবে তোলা বালু যাচ্ছে বেআইনি ইটভাটায়

ফরিদপুরে মধুমতি নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে অনুমোদনহীন ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে।

ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2021, 08:44 AM
Updated : 18 Jan 2021, 11:12 AM

মধুখালী উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের মিটাইন গ্রামের ‘এম এম কে বি ব্রিকসের’ মালিক মিটুল মোল্লার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, মধুমতি নদী ঘাট সংলগ্ন এলাকায় একই স্থানে ছয়টি ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন মিটুল মোল্লা। নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে রাখা হচ্ছে দুইটি জায়গায়; সেখান থেকে ভেকু দিয়ে বালু কেটে ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়।

স্থানীয় বাসিন্দা আলফাজ হোসেন বলেন, “গত এক সপ্তাহ ধরে মধুমতি নদীতে ছয়টি বড় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিন-রাত বালু উত্তোলন করছেন ইটভাটা মালিক মিটুল মোল্লা। বালু উত্তোলন করে পাইপের মাধ্যমে সামাদ ফকিরের বাড়ির বিপরীতে এবং ঘাট সংলগ্ন এলাকায় বালুর স্তুপ করে রাখা হচ্ছে।”

সোমবার সকালে মিটাইন ঘাট সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মধুমতি নদীতে একটি জায়গায় ছয়টি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, যেখানে প্রায় ২৫ জন শ্রমিক কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

ঘাট সংলগ্ন মাঝিবাড়ি-রায়জাদাপুর সড়কের উপর বাঁধ দিয়ে ড্রেজারের পাইপ নেওয়া হয়েছে। বাঁধ দেওয়ার কারণে সড়কের কিছু অংশ ধ্সে গেছে।

ওই একই এলাকায় মিটুল মোল্লার ইটভাটায় গিয়ে দেখা গেছে, চারপাশে ফসলি জমি ও বাড়িঘরের মাঝেই নির্মাণ করা হয়েছে ইটভাটাটি। আর ফসলি ক্ষেতের মধ্যে ইট রাখা হয়েছে।

মিটাইন গ্রামের যেখানে বালু রাখা হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দা সামাদ ফকিরের স্ত্রী গোলাপী বেগম বলেন, “ইটভাটা মালিক মিটুল গত এক সপ্তাহ ধরে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে এখানে রাখছে। এখান থেকে বালু তার ভাটায় নেবে বলে আমারা শুনেছি।”

মিটাইন গ্রামের বাসিন্দা আশরাফ হোসেন বলেন, ইটভাটা মালিক মিটুল মোল্লা গত বছরও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে মধুমতি নদী থেকে বালু উত্তোলন করেছে। এবছরও বালু উত্তোলন শুরু করেছে।

“মিটুল মোল্লার ইটভাটা এম এম কে বি ব্রিকসেরও অনুমোদন এখনও পায়নি। সবকিছু ম্যানেজ করে অবৈধভাবে ইটভাটা চালাচ্ছে আবার অবৈধভাবে নদী থেকে বালুও উত্তোলন করছে। দেখার কেউ নেই।”

স্থানীয় বাসিন্দা রাশেদ বলেন, “কৃষি জমিতে ইটভাটা করা হয়েছে। ধোঁয়া এবং ধুলার কারণে আমরা এলাকায় বসবাস করতে পারি না। আমরা কিছু বললে মিটুল ও তার লোকজন আমাদের হুমকি ধামকি দেয়। এ কারণে আমরা চুপ করে থাকি।”

এ বিষয়ে জানতে বাগাট ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মিটাইন এলাকা) আব্দুর রব মুন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি তাবলিকে এসেছি প্রায় ২০ দিন। এলাকায় না থাকায় কিছু বলতে পারছি না। এলাকায় এসে খোঁজ নিব।”

এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) তানিয়া তাবাচ্ছুম জানান, বালু উত্তোলনের বিষয়টি তারা আগে জানতেন না। খুব দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তফা মনোয়ার বলেন, “উপজেলাতে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার কোনো সুযোগ নেই। এখনই বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।”

এ দিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এম এম কে বি ব্রিকসের মালিক মিটুল মোল্লা বলেন, “বাড়ি তৈরি করার জন্য নদীতে ছয়টি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছি। ৈএর জন্য কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি।”