‘উদাসীনতা’ রেখে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ান: সরকারকে ফখরুল

সরকারকে ‘উদাসীনতা ও অবজ্ঞার মনোভাব’ পরিহার করে বন্যা মোকাবিলায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2020, 09:22 AM
Updated : 1 August 2020, 09:22 AM

শনিবার সকালে কোরাবানির ঈদের নামাজ শেষে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের পর সাংবাদিকদের সামনে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন। 

ফখরুল বলেন, “আমরা সমগ্র দেশের বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে, অনুরোধ করেছি। একই সঙ্গে সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, উদাসীনতা ও অবজ্ঞা বাদ দিয়ে অবিলম্বে এই বন্যা দুর্গত মানুষের সাহায্যার্থে… শুধু ত্রাণ নয়, দুর্গতদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা তারা যেন গ্রহণ করেন।”

এবার ঈদ এসেছে এমন সময়ে যখন সারা বিশ্বের মানুষ করোনাভাইরাসের মহামারীতে বিপর্যস্ত। পাশাপাশি দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় চলছে বন্যা।

ফখরুল বলেন, “এবারকার বন্যা বেশ দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। সেক্ষেত্রে তাদের (সরকার) লং টার্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত, যেটা তারা কখনোই করেন না এবং অন্যের মতামতকে তারা কোনো প্রাধান্য দেন না।”

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম কখনোই পর্যাপ্ত নয়। এখন পর্যন্ত তা আমরা দেখিনি।”

‘সীমিত সাধ্যের মধ্যেও’ দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে বিএনপির কেন্দ্রীয় ত্রাণ কমিটি কাজ শুরু করেছে বলে দাবি করেন দলটির মহাসচিব।

খালেদা জিয়া ‘বেশ অসুস্থ’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমাদের নেত্রী এখনো বেশ অসুস্থ আছেন। তার সমস্যাগুলো এখনো সমাধান করা সম্ভব হয়নি। কারণ প্রকৃতপক্ষে তিনি তো চিকিৎসার সুযোগই পাচ্ছেন না।”

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে ৬ মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয় বিএনপি প্রধানকে।

এরপর থেকে গুলশানের বাসাতেই রয়েছেন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ৭৫ বছর বয়সী খালেদা। বাইরে থেকে তার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা গিয়ে শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে আসছেন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়ে আসছিলেন।

চলমান করোনাভাইরাস মহামারীর প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, “আজকে দেশে যে অবস্থা হয়েছে, হাসপাতালগুলোতে যাওয়া যায় না, ডাক্তার সাহেবরা আসতে পারছেন না এবং বিদেশে গিয়ে যে চিকিৎসা করাবেন, তারও সুযোগ নেই।

“সেই কারণে এখনো তিনি ঠিক উন্নত চিকিৎসার সুযোগটা পাননি। আমরা সেই সুযোগের অপেক্ষায় আছি। আমরা আশা করব যে, তিনি সেই সুযোগ …।”

বেলা ১১টায় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে গিয়ে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “যখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারের বাইরে ছিলেন, তখন প্রত্যেক বছর আমরা তাকে নিয়েই কবর জিয়ারত করতে আসতাম। দুর্ভাগ্য, সম্পূর্ণ একটা মিথ্যা মামলায় তাকে আজকে আটক করে রাখা হয়েছে এবং বিভিন্ন রকম শর্ত আরোপ করে রাখা হয়েছে।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছাও জানান দলটির মহাসচিব।

তিনি বলেন, “ঈদুল আজহার যে মূল কথা, সেই ত্যাগের মহিমায় সবাইকে উজ্জীবিত হয়ে ত্যাগ স্বীকার করে একদিকে এই ভয়ঙ্কর ভাইরাসের মোকাবিলা করতে হবে, অন্যদিকে বন্যায় যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাকে মোকাবিলা করা এবং গণতন্ত্র এর জন্য সংগ্রামকে অব্যাহত রাখবার জন্য আজকে আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়েছি।

“আমরা দোয়া চেয়েছি, আল্লাহতালা যেন সবাইকে সুস্থ রাখেন, দেশনেত্রীকে সুস্থ রাখেন এবং দেশনেত্রী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে মুক্ত হয়ে আমাদের মাঝে আসেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দেশে ফিরে আসবেন। গণতান্ত্রিক পরিবেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে এই প্রত্যাশা আজকের দিনে আমরা করছি।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এ সময় মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন।

‘খালেদার সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সাক্ষাত’

শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করবেন দলের মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।

তার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতেই এ সাক্ষাত বলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন। গত রোজার ঈদের সময়ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন।