রাঙামাটিতে নির্মাণাধীন ভবনে দুর্ঘটনা, নিহত ৩

রাঙামাটি শহরে একটি নির্মাণাধীন ভবনে মাটি চাপা পড়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন একজন।

রাঙামাটি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2019, 08:20 AM
Updated : 2 June 2019, 11:57 AM

রোববার দুপুরে রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজ সড়কে একটি ভবনের ভিত্তি নির্মাণের সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জেলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার উদয়ন চাকমা জানান।

নিহতরা হলেন- সেন্টু মিয়া (৪১), আঙ্গুর আলী (৬৫) ও মো. পাপ্পু (৩৫)। 

আহত সাইফুল ইসলামকে (৪০) জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান উদয়ন।

উদয়ন চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, শ্রমিকরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে মাটি কাটার কাজ করছিলেন কোনো প্রকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না রেখেই।

“মাটি কাটতে কাটতে যখন বড় গর্ত তৈরি হয়, তখনই উপর থেকে মাটি ধসে পড়ে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।”

রাঙামাটি পৌরসভার স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর করিম আকবর বলেন, রোববার দুপুর ১টার পর মহিলা কলেজের পাশেই পারভীন নামের এক স্কুল শিক্ষিকার নির্মাণাধীন ভবনের ভিত নির্মাণের জন্য মাটি কাটার কাজ চলছিল। এ সময় মাটিচাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী এসে হতাহতদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।

ভবনটির মালিক পারভীন আক্তার রাঙামাটি পৌর এলাকাধীন কাটাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। তিনি জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম উদ্দিন এবং মহিলা আওয়ামী লীগের পৌর কমিটির সভাপতি জ্যোৎস্না আক্তারের ছোটবোন। একই সড়কে এদের সব ভাইবোনের বাসভবন রয়েছে।

দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মহিলা কলেজ সড়কের পাশে একটি কাঁচা ঘরকে আড়াল রেখে নিচ থেকে অন্তত ত্রিশফুট পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে ভবন নির্মাণের কাজ করছিলেন পারভীনের নিয়োজিত শ্রমিকরা। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে মাটি কাটার এই কাজে নিয়োজিত ছিলেন ১১ জন শ্রমিক। ভবনটির কয়েকটি পিলার নির্মাণ করা হয়েছে পুরোটাই কাপ্তাই হ্রদের উপর। হ্রদের পানি কম থাকার সুযোগ ব্যবহার করেই এই কাজ চালানো হচ্ছিল।

বছর দুয়েক আগে একই এলাকায় একটি ভবনধসের ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছিলেন।

পারভীনের এই ঘরটি কাপ্তাই হ্রদের জায়গায় নির্মিত হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ বলেছেন। 

দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ‘হ্রদ দখল করে’ ভবন নির্মাণে বিস্ময় প্রকাশ করে ভবন মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মামুনুর রশীদ। 

তিনি বলেন, “আমি বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গেও কথা বলব। এই ভবন মালিকের বিরুদ্ধে অবশ্যই হত্যা মামলা হওয়া উচিত। হ্রদ দখল করে ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি।”

এদিকে এই দুর্ঘটনায় নিহত তিনজনের প্রত্যেকের পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা করে ও আহতকে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

রাঙামাটি কোতয়ালি থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি বলেন, এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করার প্রক্রিয়া চলছে।

এ ব্যাপারে পারভীন আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।