রাঙামাটির তিন উপজেলায় ভোট বর্জন

রাতে ব্যালট বাক্স ভরে দিনে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর ও কাউখালি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন একাধিক প্রার্থী।

ফজলে এলাহী রাঙামাটিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2019, 05:26 AM
Updated : 18 March 2019, 01:21 PM

এর মধ্যে বাঘাইছড়িতে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদের চার প্রার্থী, নানিয়ারচরে তিন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদের সাত প্রার্থী এবং কাউখালিতে এক চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা ভোট বর্জন করেছেন।

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে সোমবার সকাল ৮টায় দেশের ১৫ জেলার ১১৬ উপজেলায় ভোট শুরুর পর থেকে ভোটবর্জনের ঘোষণা আসতে থাকে।

বাঘাইছড়ি

বাঘাইছড়ি উপজেলার চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমর্থিত বড়ঋষি চাকমার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাবেক চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা।

বড়ঋষি চাকমা জনসংহতি সমিতির সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন অংশের নেতা। আর সুদর্শন জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) অংশের কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক।

দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বাঘাইছড়িতে প্রার্থী না দেওয়ায় দুই আঞ্চলিক দলের মধ্যেই চলছে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

বড় ঋষি চাকমা বলেন, “গতকাল রাতেই বিভিন্ন কেন্দ্রে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ব্যালট বাক্সে ভরা হয়েছে। আজ সকাল থেকে আমার সমর্থক ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমার প্রতিপক্ষ বিপুল সংখ্যক বহিরাগত ও সশস্ত্র কর্মী নিয়ে এলাকায় ভোটসন্ত্রাস করলেও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমি ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলাম। আমার সাথে তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীও নির্বাচন বর্জন করছেন।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রাঙামাটির রিটার্নিং অফিসার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম শফি কামাল বলেন, “বাঘাইছড়িতে একজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও একাধিক ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা আমরা শুনেছি। অন্য উপজেলাগুলোতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট চলছে। কোথাও কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি।”

বড় ঋষি চাকমা লিখিত অভিযোগ করলে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান রিটার্নিং অফিসার শফি।

এদিকে সকালে রাঙামাটি সদরের বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ভোটারদের উপস্থিতি একেবারেই কম। পৌর এলাকায় রিজার্ভবাজারের কেন্দ্রগুলোতে ছোটোখাটো লাইন দেখা গেলেও তবলছড়ি এলাকার তিনটি কেন্দ্র সকাল সাড়ে ৯টার দিকেও প্রায় ফাঁকা ছিল।

এ উপজেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি চাকমার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শহীদুজ্জামান রোমান।

সকালে শহরের কেন্দ্রগুলোতে আওয়ামী লীগের কর্মীদের উপস্থিতি দেখা গেলেও রিজার্ভবাজার ও তবলছড়ির কেন্দ্রগুলোতে অরুণ কান্তির আনারস প্রতীকের কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি।

কাউখালী

কাউখালির চেয়ারম্যান পদে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমর্থিত অর্জুন মনি চাকমার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের সামশু দোহা চৌধুরী।

সামশুর বিরুদ্ধে ‘নির্বাচনে অনিয়ম, জালভোট, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া এবং তার ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার’ অভিযোগ এনে বেলা ১২টার দিকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান অর্জুন। 

সামশুর সমর্থকদের বিরুদ্ধে ‘ব্যাপক জালভোট’ দিয়ে নির্বাচনের শৃংঙ্খলা ও বিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগ তুলে পুনর্নির্বাচনেরও দাবি জানান তিনি। 

অর্জুন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় এ উপজেলায় নৌকার প্রার্থী ছাড়া আর কোনো প্রার্থী রইল না।

অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউখালি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শতরূপা তালুকদার বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হচ্ছে এবং কেন্দ্রে কেন্দ্রে বিপুল ভোটার উপস্থিত রয়েছে। তবুও তিনি কেনো অভিযোগ করে সরে গেলেন বুঝতে পারছিনা।”

নানিয়ারচর

নানিয়ারচরে জনসংহি সমিতির (এমএন লারমার) সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী রূপম দেওয়ান এবং একই পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী জোন্তিনা চাকমা ও পঞ্চানন চাকমা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।   

নানিয়ারচর উপজেলায় পাঁচ প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছিলেন। এদের মধ্যে রূপম ও বর্তমান চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা দুই জনই পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সমর্থিত। এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জাতীয় দলগুলোর কোন প্রার্থী নেই।

রূপমের অভিযোগ, “রাতেই বেশিরভাগ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শেষ হয়ে গেছে।এখন আমরা ও আমাদের ভোটাররা কেন্দ্রেই যেতে পারছিনা। তাই সঙ্গত কারণেই নির্বাচনে থাকার কোন মানে নেই। তাই আমিসহ তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং চার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্জন করে নির্বাচন থেকে সরে গেলাম।”

একই সময় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রন বিকাশ চাকমা, সুজিত তালুকদার, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কোয়ালিটি চাকমা  ও কণিকা চাকমা ও এ সময় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।   

ভোট বর্জনের ঘোষণার পর তারা নানিয়াচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসউদ পারভেজের কাছে নির্বাচন স্থগিতের জন্য আবেদন জানান।

মাসউদ বলেন, তিন চেয়ারম্যান ও চার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন স্থগিত করার জন্য যে আবেদন জমা দিয়েছেন তা রিটার্নিং অফিসারকে জানানো হয়েছে।

রাঙামাটির রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম শফি কামালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন।