পাহাড় ধস: আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে অজানার পথে

রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে বাড়িঘর হারানো শতাধিক পরিবার প্রায় তিন মাস আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার পর অজানার পথে পা বাড়িয়েছে।

রাঙামাটি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Sept 2017, 12:40 PM
Updated : 5 Sept 2017, 01:26 PM

মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় দেওয়া হলেও ঝুঁকির কারণে পুরনো আবাসস্থলে ফিরতে পারছেন না তারা। তাদের পুনর্বাসনেও নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান জানান, প্রথম দিন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪০ পরিবারকে বিদায় দেওয়া হয়েছে।

সরকারি সহায়তায় সম্পূর্ণ বাড়িঘর হারানো পরিবারকে দেওয়া হয়েছে দুই বান ঢেউটিন, ছয় হাজার টাকা ও ৩০ কেজি চাল। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের ১০০০ করে টাকা ও ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত জামাল আহমেদ বলেন, “প্রশাসন বলছে, একই স্থানে আর ঘর করা যাবে না। তাহলে আমরা এখন কী করব? টিন নিয়ে কোথায় লাগাব?”

জরিনা খাতুন, মো. হাবিবসহ ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারের কাছে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন। বিদায় নেওয়ার পর  আত্মীয়বাড়ি যাবেন বলে কেউ কেউ জানালেও অনেকেই জানেন না তারা কী করবেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, “তাদের এভাবে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে আমারও ব্যক্তিগতভাবে ভালো লাগছে না, কিন্তু কিছু করার নাই। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে পুনর্বাসনের নির্দেশনা এলে সেই মোতাবেক আমরা পদক্ষেপ নেব।

“এত বড় দুর্যোগের পর বিপুলসংখ্যক মানুষকে টানা প্রায় তিন মাস ধরে প্রতিবেলায় খাবারের ব্যবস্থা করা, দুটি ঈদে তাদের হাসিমুখে রাখা, তাদের জন্য ন্যূনতম কিছু করার প্রচেষ্টার মাধ্যমে সরকার প্রমাণ করেছে, সরকার খুবই আন্তরিক।”

দেশের সাম্প্রতিক বন্যার কারণে স্বাভাবিকভাবেই পাহাড় ধসের ইস্যুটি কিছু সময়ের জন্য আলোচনার বাইরে চলে গেলেও এ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চয়ই সরকার পদক্ষেপ নেবে বলে জানান তিনি।

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে গত ১২  ও ১৩ জুন রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে বিভিন্ন এলাকায় ১২০ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন দুই শতাধিক মানুষ, বিধ্বস্ত হয় কয়েক শ বাড়িঘর। সে সময় সরকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে।

বৃষ্টি থামলে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা কমিয়ে শুধু পৌরসভায় ছয়টি রাখা হয়। সেখানে ছিল প্রায় ১৩০০ মানুষ। মঙ্গলবার রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসের নবনির্মিত ভবনের আশ্রয়কেন্দ্রের সবাইকে বিদায় দেওয়া হয়।

রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী পাহাড়ে যেকোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে অনুমোদন নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এখন থেকে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে বলে আশা করেন তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার, জেলার পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু শাহেদ চৌধুরী, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা বিশ্বনাথ মজুমদার, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জসীমউদ্দীন বাবুল বিদায় অনুষ্ঠানে ছিলেন।