স্বামীকে জিম্মি করে গর্ভবতী নারীকে ‘দলবেঁধে ধর্ষণ’, ৫ দিন পর মামলা

ওয়াজ শুনে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে ছয়জন যুবক তাদের গতিরোধ করে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে।

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2024, 03:37 PM
Updated : 28 Feb 2024, 03:37 PM

পাবনায় এক ব্যক্তিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তার গর্ভবতী স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগে পাঁচ দিন পর মামলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

পাঁচ দিন আগে শুক্রবার রাতের এ ঘটনায় বুধবার আমিনপুর থানায় মামলা হয়েছে জানিয়ে ওসি হারুনুর রশিদ বলেছেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

তিনি বলেন, সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি ইউনিয়নের চর কেষ্টপুরে গত শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। বুধবার ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন- চর কেষ্টপুরের সেলিম উদ্দিন প্রাং (২৩), একই এলাকার মো. শরীফ (২৪), রাজীব সরদার (২১), রুহুল মণ্ডল (২৬), লালন সরদার (২০) ও সিরাজুল (২৩)।

আসামিরা ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। আর ভুক্তভোগী নারীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাবনা জেনারেল হানপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

মামলার বিবরণে বলা হয়, ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে চর কেষ্টপুরের একটি ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে ডেকোরেশনের কাজ করছিলেন ভুক্তভোগী নারীর স্বামী। টাকার প্রয়োজনে ওই নারী রাতে তার স্বামীর কাছে যান। সেখানে ওয়াজ শুনে রাত ১২টার দিকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে তাদের গতিরোধ করেন ছয়জন যুবক। পরে তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়।

এক পর্যায়ে স্বামীকে অস্ত্র দেখিয়ে জিম্মি করে ওই নারীকে ভুট্টাক্ষেতে নিয়ে দুজন ধর্ষণ করেন। পরে ওই নারীর স্বামী তাদের কাছ থেকে ছুটে গিয়ে স্থানীয় লোকজনকে জানায়। তারা দলবদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে একজনকে আটক করে পিটুনি দেন এবং বাকিরা পালিয়ে যান।

এরপর ওই নারীকে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

লিটন ও রাজ্জাক নামে স্থানীয় দুই ব্যক্তি বলেন, ওয়াজ মাহফিল চলা অবস্থায় রাত ১টার দিকে ওই নারীর স্বামী তাদের কাছে এসে জানান, কয়েকজন ছেলে তাকে মারধর করে তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে গেছে। এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে তারা গিয়ে একজনকে হাতেনাতে ধরে পিটুনি দেয়।

পরে ওই নারীকে উদ্ধার করে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেন কাদেরীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তার পরামর্শে হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে নিফাস ও শহিদ নামে স্থানীয় আরও দুজন জানান।

ওই নারীর স্বামী বলেন, “আমার স্ত্রী তিন মাসের গর্ভবতী ছিল। গর্ভের সন্তান মারা গেছে। যারা ধর্ষণ করেছে, তাদের পক্ষ থেকেও নানা হুমকি ও চাপ আসছে। বলছে, এ ঘটনায় আমাদের কিছুই হবে না, তোমাদেরই বিপদ হবে; তাই মীমাংসা কর।”

মামলা করতে দেরি হল কেন? এ প্রশ্নে তার ভাষ্য, “ঘটনার দিনই থানায় মৌখিক অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু আসামিরা ভয়-ভীতি দেখানোর কারণে দেরি হয়েছে।”

আটক ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে ওই ব্যক্তির স্বামী বলেন, মামলা না হওয়ায় স্থানীয়রা তাদের ছেড়ে দেয়।

ঘটনার বর্ণনায় ভুক্তভোগী নারী বলেন, “আমি ও আমার স্বামী আমাদের আত্মীয় বাড়িতে যাচ্ছিলাম। পথে ছয়জন যুবক মাঠের মধ্যে পথ আটকে আমাদের জিজ্ঞেস করে, তোরা স্বামী-স্ত্রী কিনা। আমরা নিজেদের স্বামী-স্ত্রী দাবি করলেও তারা মানতে রাজি হয়নি। পরে মোবাইল ফোনে আমাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়া হলেও তাদের মনঃপুত হয়নি।

“এক পর্যায়ে আমার স্বামীকে ব্যাপক মারধর করে এবং তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আমাকে মাঠের মধ্যে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় আমার স্বামী ছুটে গিয়ে পাশের লোকজন ডেকে আনলে তারা একজনকে আটক করে এবং বাকিরা পালিয়ে যায়।”

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেন কাদেরী বলেন, “ওই নারীকে উদ্ধার করে আমার কাছে নিয়ে আসলে আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দেই। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা ক্রিটিক্যাল ছিল। তাই তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল বা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেই।”

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, “ওই নারী এখন ভালো আছেন। তিনি গর্ভবতী ছিলেন।“

ওই নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কি-না জানাতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, “এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারছি না। গাইনি বিভাগের চিকিৎসকরা দেখছেন, তারা ভালো বলতে পারবেন।“