জাবি ক্যাম্পাসে উত্ত্যক্তের অভিযোগে বহিরাগতকে ‘মারধর’, পরে পুলিশে হস্তান্তর

ক্যাফেটেরিয়ার সামনে ওই নারী তার বন্ধু এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় প্রবাসী ওই ব্যক্তিকে দেখিয়ে মেয়েটি হাসতে থাকেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2023, 06:37 AM
Updated : 13 Jan 2023, 06:37 AM

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নারীকে উত্ত্যক্তের অভিযোগ তুলে প্রবাসী এক ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় মারধরের এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী সিঙ্গাপুর প্রবাসী বখতিয়ার আশরাফুল ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকার আশরাফুল রহিমের ছেলে। তাকে আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আশরাফুল রহিম বলেন, “শুনেছি আমার ছেলেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মারধর করা হয়েছে। তবে কি কারণে এমনটা ঘটেছে, জানি না। আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।”

এ ঘটনায় অভিযোগের মুখে রয়েছেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ৪৯ তম ব্যাচের সৈয়দ আফ্রিদি ও রাহাত আলম রিজভী, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের আরিফ আহমেদ, আইন ও বিচার বিভাগের ৪৯ তম ব্যাচের রাকিব উল ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৯ তম ব্যাচের আজিম সাকিব, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের নাহিদ তমাল রোমান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের সৌমিক সরকার ও ইতিহাস বিভাগের ৪৭ তম ব্যাচের মো. আদনান।

তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত বলে শিক্ষার্থীরা জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে বহিরাগত একজন নারী সৈয়দ আফ্রিদির সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় বখতিয়ারকে দেখিয়ে ওই মেয়ে হাসতে থাকেন। এক পর্যায়ে আফ্রিদি উত্তেজিত হয়ে মোবাইল ফোনে কয়েকজন ‘ছাত্রলীগের কর্মীকে’ ডাকেন। পরে ছাত্রলীগের কর্মীরা একজোট হয়ে বখতিয়ারকে বেধড়ক কিলঘুষি দিতে থাকেন।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের উপ-পরিচালক সারোয়ার হোসেন বখতিয়ারকে তার নিজের কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানও যান। এ সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা জোর করে সেই কক্ষে ঢুকে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক সেখানে গেলে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের পেটানোর হুমকি দেন।

এ বিষয়ে জানতে হাবিবুর রহমান লিটনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগোযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

বখতিয়ার আশরাফুল সাংবাদিকদের বলেন, “প্রথমবারের মতো জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসেছি। এখানে আসার পথে সাভারের সিএন্ডবি এলাকায় বাস থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করি। এ সময় এক মেয়ে আমার পাশাপাশি হাঁটছিলেন। এক পর্যায়ে ওই মেয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়। পরে তার ফোন নম্বর চাই আমি।

“ওই মেয়ের বয়ফ্রেন্ড আছে এবং তিনি আমাকে ফোন নম্বর দিতে পারবেন না বলে জানান। পরে তার কাছ থেকে হাসিমুখে বিদায় নিয়ে আমি ক্যাম্পাসে ঘুরতে থাকি। হঠাৎ করে কয়েকজন ছেলে এসে আমাকে মারধর করে।”

মারধরের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ আফ্রিদি বলেন, “আমার এক বান্ধবী সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল ফটকে নেমে হেঁটে ক্যাম্পাসের দিকে আসছিলেন। ওই সময় থেকেই বহিরাগত আশরাফুল বখতিয়ার তাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। বিষয়টি আমার বান্ধবী আমাকে জানালে আমরা ওই ছেলেকে উত্ত্যক্ত করার কারণ জিজ্ঞেস করি। এক পর্যায়ে উপস্থিত সবাই তাকে মারধর করে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, “উত্যক্তের শিকার হওয়া মেয়েটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয় এবং মারধরের শিকার হওয়া ছেলেটিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়।

“যেহেতু আমাদের ক্যাম্পাসে ঘটনাটি ঘটেছে তাই আমরা ওই ছেলেকে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে তুলে দিয়েছি।”

আশুলিয়া থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশের হাতে একজনকে তুলে দিয়েছে। আমরা ওই ব্যক্তির অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।”