সাভারে স্বামী-স্ত্রী-ছেলে খুন: অতিথি হয়ে এসেছিল হত্যাকারীরা?

পুলিশের ধারণা, তাদের চেতনানাশক কোনো কিছু খাওয়ানো হয়েছিল। অচেতন করার পর তাদের হত্যা করা হয়।

সাভার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2024, 04:26 AM
Updated : 22 Feb 2024, 04:26 AM

ঢাকার অদূরে সাভারের গার্মেন্ট শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় বহুতল ভবনের একটি ফ্ল্যাটে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের ১২ বছরের সন্তানকে গলাকেটে হত্যার কারণ সম্পর্কে এখনও পুলিশ স্পষ্ট করে কিছু বলছে না।

তবে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাদের খুন করা হয়ে থাকতে পারে। ঘর থেকে কোনোকিছু খোয়া যায়নি।

ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালন করা আশুলিয়া থানার এসআই জোহাব আলী সাংবাদিকদের বলেন, “ঘরে রান্না করা কিছু খিচুড়ি পাওয়া গেছে। যেটা তিনজন মানুষের চেয়ে বেশি মনে হয়েছে। এ ছাড়া টেবিলে চা পান করা হয়েছে এমন পাঁচ-ছয়টি কাপ পাওয়া গেছে। ফলে ধারণা করা যায়, খুনিরা হয়ত পরিচিত; অতিথি হয়ে এসেছিলেন।”

শনিবার রাতে আশুলিয়ার জামগড়া ফকির বাড়ির মোড় এলাকার মেহেদী হাসানের ছয়তলা ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে একই পরিবারের তিনজনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহতরা হচ্ছেন- ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ থানার লোহাগড়া গ্রামের মৃত জহির উদ্দিনের ছেলে মুক্তারুল হোসেন বাবুল (৫০), তার স্ত্রী শাহিদা বেগম (৪০) ও তাদের ছেলে মেহেদী হাসান জয় (১২)।

শাহিদার গ্রামের বাড়ি রাজশাহী জেলায়। স্বামী-স্ত্রী দুজনই তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক। তাদের সন্তান জয় স্থানীয় একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

এ ঘটনায় রোববার দুপুরে বাবুলের বড় ভাই আয়নাল হক বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিবেশন করেছেন। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, ডিবি ও পিবিআই কাজ করছে। 

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের চেতনানাশক কোনো কিছু খাওয়ানো হয়েছিল। অচেতন করার পর তাদের হত্যা করা হয়। মরদেহ দেখে মনে হচ্ছে, আগের দিন শুক্রবার কোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

“তাদের কোনো কিছু খোয়া যায়নি। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তবে এখনই সুনির্দিষ্ট কারণ বলা যাচ্ছে না। সবগুলো বিষয় মাথায় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে”, বলেন পুলিশ সুপার।

সোমবার ঘটনাস্থলের আশপাশের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় চতুর্থ তলার ওই ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ আসায় তাদের সন্দেহ হয়। তখন তারা সেখানে গিয়ে দরজা খোলা দেখতে পান।

পরে কক্ষের ভেতর ঢুকে বিছানার ওপর মা ও ছেলের রক্তমাখা মরদেহ দেখতে পান। তখন পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ ফ্ল্যাটের আরেকটি কক্ষ থেকে বাবুলের মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহত বাবুলের বড় বোন মনোয়ারা বেগম বলেন, সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিন নম্বর ছিলেন বাবুল। দরিদ্র পরিবারের ছেলে হওয়ায় আগে গ্রামে কৃষিকাজ করতেন। প্রায় এক যুগ আগে আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। তার স্ত্রীও পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। সেই সুবাদে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এখানেই বসবাস করতেন।

তিনি বলেন, “আমার ভাইটা জীবনে অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে। দুর্বল থেকে সবল হল। তার পরই তাদের এভাবে মেরে ফেলল। আমার ভাইয়ের কোনো শত্রু ছিল না। থাকলে তো কখনও আমাদের একটু হলেও বলত। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।”

বাবুলের পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশী তাহমিনা বেগম বলেন, “আমরা এখানে প্রায় এক বছর ধরে বসবাস করছি; তবে কখনোই তাদের সঙ্গে কথা হয়নি। উনারা একটু একা থাকতেই পছন্দ করতেন। সবসময়ই দরজা বন্ধ থাকত। সেজন্যই আমরা কোনোকিছু টের পাইনি।”

ভবন মালিক মেহেদী হাসান বলেন, ওই দম্পতি সন্তানসহ প্রায় ৮-৯ বছর ধরে তার বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। তারা মানুষ হিসেবে নম্র এবং ভদ্র ছিলেন। তবে তারা সবসময় একাই চলাফেরা করতেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোমেনুল ইসলাম বলেন, “হত্যার মোটিফ সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা সব বিষয় সামনে নিয়েই তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। শিগগির হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।”

[প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ০২ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক]