বেতন পেয়ে সড়ক ছাড়লেন ক্রোনী গ্রুপের শ্রমিকরা

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ক্রোনী গ্রুপের আরেকটি পোশাক কারখানা অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেডের শ্রমিকরাও বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বেতনের দাবিতে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কে অবরোধ করেন ক্রোনী অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিকরা।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় আড়াই ঘণ্টা বিক্ষোভ করে বেতন পাওয়ার পর ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়ক ছেড়েছেন ক্রোনী অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিকরা।

বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কর্মবিরতি দিয়ে কাশীপুর ইউনিয়নের হাটখোলায় কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করছিলেন কয়েকশ শ্রমিক৷ বিকাল সাড়ে ৩টায় তারা সড়ক অবরোধ করেন।

এ সময় সড়কটিতে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও পরিবহন চালকরা৷ অনেক যাত্রীকে এ সময় হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে৷

পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন পাওয়া শুরু করলে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে দেন বলে জানান ঘটনাস্থলে থাকা শিল্প পুলিশ-৪ এর জালকুড়ি পুলিশ লাইনসের পরিদর্শক নাজির আলম৷

শ্রমিকরা জানান, গত বছরের নভেম্বর থেকে কারখানার মালিক বেতন পরিশোধ নিয়ে গড়িমসি করছেন৷ শ্রমিক ও কর্মীদের দুই থেকে ছয় মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। ঈদুল আজহার বোনাসও পাননি তারা৷

কারখানার নিটিং বিভাগের শ্রমিক মাজহারুল ইসলাম বলেন, “নভেম্বর মাস থেকে প্রতি মাসেই বিক্ষোভ না করলে বেতন দিচ্ছে না মালিকপক্ষ৷ ঈদ সামনে, এখন বেতন না দিলে আমরা চলমু ক্যামনে? ৪ মে আমরা বেতনের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করি৷ ৬ তারিখ বেতন দেওয়ার কথা বললে আবারও কাজে যোগ দেই৷

“কিন্তু আজ পর্যন্ত বেতন-বোনাস কিচ্ছু পাই নাই৷ কেউ ছয় মাসের বেতন পায়, কেউ চার মাসের, আবার কেউ দুই মাসের৷ আমাদের বেতন পরিশোধ করে লাগলে কারখানা বন্ধ করে দিক৷ কিন্তু আমরা তো এমনে আর চলতে পারতেছি না৷”

পটুয়াখালী গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপনের পরিকল্পনা ছিল নারী শ্রমিক কুলসুমের৷ দুই মাসের বেতন বকেয়া। বেতন পা পাওয়ায় গ্রামে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারবেন কিনা সে শঙ্কা তৈরি হয়েছে৷

কুলসুম বলেন, “দুই মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে ঘর ভাড়া করে থাকি৷ মাসে ৬৫৫০ টাকা ভাড়া৷ ভাড়া দিতে পারতেছি না, বাড়িওয়ালা ঘরে তালা দেবে বলে বারবার বলতেছে৷ ছোট মেয়েটারে রোজার ঈদেও জামা কিইন্না দিতে পারি নাই৷ এবারও আবদার করছে৷ দিতে পারবো না৷”

এদিকে, ফতুল্লার বিসিক শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত ক্রোনী গ্রুপের আরেকটি পোশাক কারখানা অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেডের শ্রমিকরাও বকেয়া বেতনের দাবিতে কর্মবিরতি দিয়ে বিক্ষোভ করছেন বলে জানান শিল্প পুলিশ-৪ নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান৷

তিনি বলেন, দুটি কারখানায় অন্তত ১৩ হাজার শ্রমিক ও কর্মী রয়েছেন৷ তারা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন৷

বুধবার রাত থেকে কারখানা দুটির সামনে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন পরিশোধ না করায় ২৭ মে ক্রোনী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এইচ আসলাম সানির বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করে শ্রম মন্ত্রণালয়৷

শ্রমিকদের বিক্ষোভের ব্যাপারে জানতে চাইলে আসলাম সানি বলেন, “আমি নিজেও চাই ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে৷ অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বেতন দিতে কিছুটা দেরি হয়েছে৷ আমি নির্দেশনা দিয়েছি, আজকেই তাদের বেতন দেওয়া হবে৷ সবার বেতন মোবাইলে ঢুকে যাবে৷”

সন্ধ্যা ৬টার দিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন পাওয়া শুরু করেন শ্রমিকরা।

দুই মাসের বকেয়া বেতন মোবাইলের মাধ্যমে অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে জানিয়ে কারখানাটির সুইং সেকশনের আলাউদ্দিন বলেন, “বেতন পেয়েছি, তাতে খুশি। কিন্তু প্রতিমাসেই এভাবে আন্দোলন করে বেতন পেতে হয়৷ এমন না করে আমাদের ন্যায্য পাওনা সময়মতো দিলেই তো হয়৷”