কথা বলুন শালীন ভাষায়: স্পিকার  

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2013, 06:45 AM
Updated : 9 June 2013, 07:38 AM

বিএনপির রেহানা আক্তার রানুর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সরকারি দলের সদস্যদের সমালোচনার পর সংসদ সদস্যদের সতর্ক করেছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

রোববার সংসদ অধিবেশনে রানুর আগে বিএনপির সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়ার বক্তব্য নিয়েও সংসদে উত্তাপ ছড়ায়।

বিরোধী দলের সংরক্ষিত মহিলা আসনের দুই সদস্যের বক্তব্য নিয়ে উত্তেজনার পর দেশের প্রথম নারী স্পিকার বলেন, “সংসদে কথা বলার সময় কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী কথা বলবেন। বিশেষ করে ২৭০ এর উপদফা ৬ বিধি মেনে চলবেন।”

কার্যপ্রণালী বিধির ২৭০ বিধিতে সংসদে বক্তৃতা দেয়ার সময় ‘পালনীয় বিধি’ সম্পর্কে বলা হয়েছে। ২৭০ এর উপদফা ৬ এ বলা হয়েছে- “কোনো আক্রমণাত্মক, কটূ বা অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করিবেন না।”

রেহানা আক্তারের বক্তব্য ‘অশোভন’ দাবি করে তা কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিতে আহ্বান জানান সরকারি দলের হুইপ আ স ম ফিরোজ।

স্পিকার বলেন, ওই বক্তব্য পরীক্ষা করে ৩০৭ বিধি অনুযায়ী কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেয়া হবে।

আশিফা আশরাফীর বক্তব্য নিয়েও হুইপের আহ্বানে একই আশ্বাস দেন শিরীন শারমিন।

৮৩ দিন পর বাজেট অধিবেশনে ফেরা বিএনপির সংসদ সদস্যরা এদিন এম কে আনোয়ারের নেতৃত্বে সংসদে যোগ দেন।

সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় রেহানা দাবি করেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘দুর্নীতিতে’ প্রধানমন্ত্রীর পরিবার জড়িত ছিলো।

“পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য টিফিনের টাকা নেয়া হলো, চাঁদাবাজি করা হলো। সেই চাঁদাবাজির টাকার ভাগ নিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ মারামারিতে রাজশাহীতে একজন খুন হলো।”

“পদ্মা সেতু তৈরির আগেই ১২ পারসেন্ট কমিশন দেয়ার কথা ফাঁস হওয়ার পর বিশ্ব ব্যাংক ঋণচুক্তি ঘ্যাচাং করেছে। ১০ পারসেন্টের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলো। তাদের নাম পত্রিকায় এসেছে। দুই পারসেন্টের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের নাম পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি।”

“সম্প্রতি কানাডিয়ান টেলিভেশনের প্রতিবেদনে ওই দুই পারসেন্ট কমিশনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা জড়িত বলে বলা হয়েছে।”

বক্তব্যের এই পর্যায়ে রেহানাকে সম্পূরক বাজেট নিয়ে বক্তব্য দেয়ার অনুরোধ জানান স্পিকার।

রেহানা বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, “চারিদিকে দমবন্ধ করা পরিবেশ, দমবন্ধ করা মানুষের আর্তনাদ।
যখন এই সরকারের পতন হবে তখন মানুষ স্বস্তির আকাশে মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।”

একদলীয় নির্বাচন যেন না হয়, সেজন্য স্পিকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বলেন, “কেউ বলছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন। আর, বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আপনি নাকি নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন।”

ফেনীর বাসিন্দা রেহানা আঞ্চলিক ভাষায় সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়া কোনো চুদুরবুদুর চইলত ন।”

তারেক রহমানকে নিয়ে সরকারি দলের নেতাদের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, “আমাদের নেতা(তারেক রহমান) যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলেছেন, তখন অনেক মন্ত্রীর পেট খারাপ হয়ে গেছে।”

তারেককে ইন্টারপোলের মাধ্যমে আনার উদ্যোগকে ‘সরকারের রাজনৈতিক শয়তানি এবং ডিজিটাল পাগলামী’ বলে আখ্যায়িত করেন রেহানা।

“তারেক রহমানের পেছনে সময় ব্যয় না করে নিজেদের চামড়া বাঁচানোর কাজে ব্যয় করুন। আমাদের কথা বাদ দিলাম, জামায়াত আর হেফাজতের সঙ্গে যা করেছেন, আপনাদের খবর আছে। পিঠের চামড়া থাকবে না, বলে দিলাম।”

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে প্রচার মাধ্যমের ‘সবচেয়ে বড় শত্রু’ উল্লেখ করে তিনি বলেন,  “আজ বন্দুকের নল আর পুলিশের লাঠি দিয়ে মিডিয়ার লোকদের নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।”

গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী আহমদ রাজীব হায়দারের বাড়িতে প্রধানমন্ত্রীর যাওয়ার প্রসঙ্গ ধরে বিরোধী সংসদ সদস্য বলেন, ‘নৌকা মার্কার ভোটার বিশ্বজিতের বাড়িতে না গেলেও রাজীবের বাড়িতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নাস্তিকদের উস্কানিদাতা।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তার শরীরে গরম ডিম ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। তাদের বিচার না করে আপনি কেন বিএনপি নেতাদের ডাণ্ডাবেড়ি পড়াচ্ছেন।”

রোববার অধিবেশনে এর আগে পাপিয়া পয়েন্ট অফ অর্ডারে দাঁড়িয়ে গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে তারেক রহমান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে ‘ধিক্কার’ জানান।

তিনি বলেন, “বিএনপি কারো কাছে মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি করে না। সকলে জানে কারা মুচলেকা দিয়ে ‘৮৬ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। তারেক রহমান চিকিৎসার জন্যে বিদেশে রয়েছেন। তিনি কারো কাছে মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি করেন না।”

বিরোধী দল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা ‘বিভ্রান্তিমূলক’ বক্তব্য দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন পাপিয়া।

তিনি বলেন, “তারেক রহমানকে গ্রেপ্তারের কথা বলে নির্দলীয় সরকারের আলোচনার জন্যে বিরোধী দলীয় নেতার সন্তানকে এজেন্ডা হিসেবে দাঁড় করাতে চান প্রধানমন্ত্রী।”

বক্তব্যে এক পর্যায়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনিকেও আক্রমণ করেন বিরোধী সদস্য পাপিয়া। তাকে ‘হাইব্রিড’ নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।

দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যানের প্রশংসা করে পাপিয়া বলেন, “তারেক রহমান পথে ঘাটে বৃষ্টিতে ভিজে রাজনীতি করেছেন।”

পাপিয়া বক্তব্যের সময়ই সরকারদলীয় হুইপ আ স ম ফিরোজ, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানক, ফজলে রাব্বি মিয়া কথা বলতে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এক পর্যায়ে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীও স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। তবে স্পিকার শিরীন শারমিনকে এক্ষেত্রে মাইক বন্ধ না করে বিরোধী দলের প্রতি নমনীয় থাকতেই দেখা যায়।

পাপিয়ার বক্তব্যের পরে ফজলে রাব্বী মিয়া বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। তিনি বিরোধী দলের সংসদ সদস্যের বক্তব্য এক্সপাঞ্জের দাবি জানিয়ে বলেন, এই বক্তব্য কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী হয়নি।

এরপর আব্দুল মান্নান বলেন, পয়েন্ট অব অর্ডারের নামে সংসদ নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে ‘অশালীন’ বক্তব্য রেখেছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্য।

“আমি তার সমস্ত বক্তব্যের ধিক্কার জানাই,” পাপিয়াকে পাল্টা উত্তর দেন সরকারদলীয় এই সংসদ সদস্য।