টিকার জন্য ‘বিকল্প উৎস’ খোঁজার তাগিদ বিএনপির

সরকারের ‘অদূরদর্শিতায়’ করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে ‘অনিশ্চিয়তা’ সৃষ্টি হয়েছে অভিযোগ করে দ্রুত ‘বিকল্প উৎস’ খোঁজার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2021, 08:48 AM
Updated : 6 Jan 2021, 08:48 AM

বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারের উদ্দেশে এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “বিনা ভোটের সরকার ক্ষমতায় থাকায় জনগণের প্রতি তাদের ন্যূনতম দায়বদ্ধতা নেই। তাদের অদূরদর্শিদতা ও লুটপাট নীতির কারণেই ভ্যাকসিন নিয়ে আজ অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। যে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে অবিলম্বে ভ্যাকসিন সংগ্রহ, মূল্য, সংরক্ষণ এবং বিতরণ ব্যবস্থা সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য জনগণের সামনে উপস্থাপনের জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।

“সেই সাথে ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য অতি দ্রুত বিকল্প উৎস খুঁজে বের করার জন্যও আহ্বান জানাচ্ছি।”

ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে ইতোমধ্যে চুক্তি করেছে সরকার। বিকল্প উৎস বলতে বিএনপি কোন দেশ বোঝাতে চাইছে, সেই প্রশ্ন সাংবাদিকরা খন্দকার মোশাররফকে করেন।

উত্তরে সাবেক বিএনপি সরকারের এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাকসিন সম্পর্কে সবাই ওয়াকিবহাল যে, এটা সংরক্ষণ করতে একটা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আরেকটা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়। এসব আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য না এবং আমাদের দেশে এসব আনাও সম্ভব হবে না।

“এছাড়া অন্যান্য দেশ, যেমন রাশিয়ার স্পুৎনিক ভি, চীনের সিনো ফার্মার টিকা অনুমোদন পেয়েছে, দেওয়াও হচ্ছে। সুতরাং তিন বা চারটি টিকাই এভেইলেবল হবে- তা নয়। … বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে ৫০টি টিকার ব্যাপারে অ্যাপ্লাই করা আছে। তারা ওইসব বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা শেষ হলে অনুমোদন দিচ্ছে।

“তাই বিকল্প বলতে আমরা যেসব টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত, আমাদের দেশের তাপমাত্রায় সংরক্ষণযোগ্য, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে যা দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর সাথে নেগোসিয়েশন করা হলে আরো কম দামে আমাদের দেশ টিকা পেতে পারত। এখনো সুযোগ আছে বলে আমরা সরকারকে বিকল্প উৎস খোঁজার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।”

ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সংগ্রহ নিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহীর ‘বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যে জনমনে বিভ্রান্তি’ সৃষ্টি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের সাথে জি টু জি চুক্তি হয়েছে বলে সরকারের লোকজন জানিয়েছে। আবার বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সরকারের সঙ্গে নয়, চুক্তি হয়েছে বেক্সিমকোর সাথে, যা বাণিজ্যিক চুক্তি। গতকাল তড়িঘড়ি করে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেখানেও রাখা হয়েছে বিশাল দুর্নীতির খাত।”

যদি কয়েক কোটি ভ্যাকসিন আমদানিও হয়, তা সাধারণ মানুষ ‘যথাসময়ে পাবে কিনা’ তা নিয়ে ‘যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যের।

তিনি বলেন, “ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পাওয়া জনগণের অধিকার। এই অধিকার থেকে জনগণ যেন বঞ্চিত না হয়, সেজন্য বিএনপি প্রথম থেকেই দাবি জানিয়ে আসছে। জনগণ যাতে এই ভ্যাকসিন সঠিকভাবে পায়, সেটা অবশ্যই সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।”

ভ্যাকসিন বিতরণের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইনের প্রসঙ্গ টেনে মোশাররফ বলেন, “ওই গাইড লাইন অনুযায়ী যাদের ভ্যাকসিন পাওয়ার অগ্রাধিকার রয়েছে, তাদেরকে বঞ্চিত করা যাবে না। শুধুমাত্র রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার মাধ্যমে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পরিবর্তে অন্যদের এই ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে সরকারের প্রণীত নীতিমালায়। দেশের ৬০ বছরের অধিক বয়সী জনগোষ্ঠী, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, প্রাধিকার প্রাপ্ত জনগোষ্ঠী, সম্মুখ সারির করোনা যোদ্ধারা বঞ্চিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।”

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ড্যাব সভাপতি হারুন-উর রশীদ, মহাসচিব আব্দুস সালাম উপস্থিত ছিলেন।