রাজুর জন্য আমরা এখনও কাঁদি!

চিররঞ্জন সরকারচিররঞ্জন সরকার
Published : 13 March 2021, 09:10 AM
Updated : 13 March 2021, 09:10 AM

আমরা যারা নয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি করেছি, তাদের জন্য মার্চ মাসটা অত্যন্ত বেদনার। কেননা এই মাসেই আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় নেতা, বন্ধু, মিছিলের সাথী মঈন হোসেন রাজুকে। রাজুকে ছাত্রদলের বন্দুকধারী সন্ত্রাসীরা সামনে থেকে গুলি করে হত্যা করেছে। অকুতোভয় রাজু আমাদের সঙ্গে নিয়ে কেবল মুষ্টিবদ্ধ হাত আর প্রতিবাদী স্লোগানে ভরসা করে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু ওই বিবেকহীন নরপশুরা এই স্পর্ধা বরদাশত করেনি। হাকিম চত্বরের সামনে থেকে বেআইনি অস্ত্র দিয়ে প্রতিবাদী মিছিল থেকে উচ্চারিত স্লোগানকে স্তব্ধ করতে চেয়েছে। সরাসরি মিছিল লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। সম্মুখসারিতে থাকা রাজু নিজের কপাল দিয়ে গুলি ঠেকিয়ে দিয়েছে। কাপুরুষের মতো পালিয়ে যায়নি। গুলি রাজুর কপাল-মাথা ভেদ করে গেছে। মৃত্যুর আগেও রাজু সন্ত্রাসীদের চোখ চোখ রেখেই শাঁসিয়েছে। তাদের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। এখানেই রাজুর অনন্যতা। শ্রেষ্ঠত্ব। রাজুর আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসসির সড়কদ্বীপে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য স্থাপনের তাৎপর্য এখানেই।

রাজুর কথা এখনও মনে পড়ে। আমরা যারা রাজুর সঙ্গে সেদিনের মিছিলে সাথী ছিলাম, যারা একসঙ্গে আড্ডা দিতাম, মিছিল করতাম, ছাত্রদের নানা সমস্যা সমাধানের জন্য আন্দোলন করতাম, সমাজটাকে বদলে দেবার রাজনীতি করতাম, তারা রাজুকে ভুলব কীভাবে? সেই দুঃসহ স্মৃতি কী কখনও ভোলা যায়?

১৯৯২ সালের ১৩ মার্চ ঘাতকের বুলেটে রাজুর মৃত্যু ঘটে। এরপর ২৯টি বছর কেটে গেছে। অথচ মনে হয়, যেন সেদিনের ঘটনা! এখনও চোখের সামনে ভাসে সেদিনের স্মৃতি। সেদিন ছিল শুক্রবার। বিকেলে আমরা কয়েকজন সমবেত হয়েছিলাম ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যাগে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং নিয়ে চূড়ান্ত পরিকল্পনা করতে। তখন আমরা ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নিয়মনীতিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে 'প্রজ্ঞা কোচিং সেন্টার' নামে একটি একটি স্বল্পকালীন ভর্তি-কোচিং চালু করেছিলাম। এর পুরোভাগে ছিল রাজু। কোচিং সেন্টারটির নামও ছিল রাজুর দেওয়া।

এর উদ্দেশ্য, যেসব মেধাবী ছাত্রছাত্রী টাকার অভাবে কোচিংয়ের সুযোগ পায় না, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নিয়ম-নীতি, প্রশ্নপত্রের ধরন ইত্যাদি বিষয়েও কোনো স্পষ্ট ধারণা থাকে না, সেসব বিষয়ে তাদের ধারণা দেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ ও মেধাবী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দিয়ে আমরা বিষয়ভিত্তিক ক্লাসের আয়োজন করতাম।

যাহোক, সেদিন পড়ন্ত বিকেলে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের অস্ত্রধারীরা টিএসসিতে বন্দুকযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। আমরা শত শত সাধারণ ছাত্রছাত্রী অস্ত্রধারী গুণ্ডাদের সন্ত্রাসের কাছে টিএসসিতে জিম্মি হয়ে পড়ি। সে সময় ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাদের ভূমিকা ছিল স্রেফ দর্শকের!

পুলিশের এই ভূমিকার প্রতিবাদে প্রথম সোচ্চার হয় রাজু। সে পুলিশকে অস্ত্রবাজদের গ্রেফতার করার আহবান জানায়। আমরাও রাজুর সঙ্গে যোগ দিই। আমাদের ক্ষোভ ও প্রতিবাদের মুখে পুলিশ ভূমিকা পালন করে বটে, কিন্তু তা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের পক্ষে। তারা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ছাত্রদলের গুণ্ডাদের প্রটেকশন দিয়ে বিপরীত দিকে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। তা ক্রমেই বিস্তৃত হয় পুরো টিএসসি এলাকায়, যেখানে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী আটকা পড়ে।

এর প্রতিবাদে রাজুর নেতৃত্বে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে মিছিল বের করি। প্রথম দিকে সেই মিছিলে রাজু, আবদুল্লাহ মাহমুদ খান, কাজী এনামুল হক ইনু, আবদুর রহিম হারমাছি, কামাল পাশা, পলাশ রাউথ, গোপাল সাহা, ধনঞ্জয় মল্লিকসহ আমরা কয়েকজন মাত্র ছিলাম। এরপর মিছিলে শরিক হন সেলিম রেজা নিউটন, মোস্তাক আলম টুলু, খায়রুল ইসলাম চৌধুরী রূপমসহ 'গণতান্ত্রিক ছাত্রঐক্যভুক্ত' বাম ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। টিএসসির সড়কদ্বীপ প্রদক্ষিণ করার সময় ডাসের সামনে 'অস্ত্র শিক্ষা একসাথে চলবে না', 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ এক হও', 'সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই, নিরাপদে পড়তে চাই', 'হল থেকে দল থেকে সন্ত্রাসীদের বহিষ্কার কর' এ স্লোগান যখন উচ্চারণ করছিলাম, তখন হাকিম চত্বরের সামনে থেকে ছাত্রদলের চিহ্নিত গুণ্ডারা সরাসরি মিছিল লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এর একটি গুলি কপালে লাগে মিছিলের সামনে থাকা রাজুর।

স্লোগান মুখে নিয়েই সে লুটিয়ে পড়ে টিএসসির স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ভাস্কর্যের সামনে সড়ক দ্বীপের পাশের রাস্তায়। আমরা হতবিহ্বল হয়ে থমকে যাই। মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রাণভয়ে দ্বিগ্বিদিক ছুটতে থাকে। তখন সময় সন্ধ্যা সোয়া ছয়টা। আজান হচ্ছে। সারাদিন রোজা রেখে সবাই ইফতার খেতে শুরু করেছে। আর আমরা কয়েকজন রাজুর রক্তাপ্লুত দেহ নিয়ে ছুটে যাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা ইফতার বন্ধ করে রাজুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। ক্রমে সেখানে শিক্ষার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। সবার রূদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষা, চিকিৎসকেরা কখন সুসংবাদ দেবেন। কিন্তু না, কিছুক্ষণ পর চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, রাজু আর বেঁচে নেই। পুরো মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল জুড়ে কান্নার রোল পড়ে যায়। সহকর্মী, সহপাঠী, হলের ছাত্র, সাধারণ শিক্ষার্থী, আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুবান্ধবদের কান্নায় সেদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের পুরো পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছিল!

দুই.

রাজু আসলে আমাদের দেশের পচা-গলা-নষ্ট রাজনীতির শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। রাজুর মৃত্যুর সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন বেগম খালেদা জিয়ার সরকার। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের পর স্বাভাবিকভাবেই মানুষ প্রত্যাশা করেছিল, দেশে সুশাসন আসবে। শিক্ষাঙ্গন থেকে অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ হবে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ঘাতক-দালাল-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মোহভঙ্গ হতে বেশি সময় লাগেনি।

বিএনপি ক্ষমতায় গিয়েই চিহ্নিত রাজাকার আবদুল মতিন চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়। শিক্ষাঙ্গনগুলো অস্ত্র আর পেশিশক্তির জোরে ছাত্রদল দখল করে নেয়। রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল পর্যায়ে শুরু হয় দলীয়করণ, দখল ও লুটপাট। প্রতিবাদ-আন্দোলনকে পুলিশি ডান্ডা দিয়ে দমন করার সর্বাত্মক উদ্যোগ চালু হয়। খুব অল্প সময়েই একটি নির্বাচিত সরকারের হাত ধরে সামাজ জীবনের সবখানে পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটে স্বৈরতন্ত্রের ধারা।

ওদিকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়ার আমলে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে এসে অবৈধভাবে বসবাসকারী পাকিস্তানি নাগরিক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম ১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর জামায়াতের আমীর নির্বাচিত হলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এরই ধারবাহিকতায় ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয়। আন্দোলনকে বিস্তৃত করার স্বার্থে ১৯৯২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি' গঠিত হয়। এই কমিটিরও আহবায়ক নির্বাচিত হন জাহানারা ইমাম।

এই প্ল্যাটফরমের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, ২৬ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণআদালত গঠন করে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচার করা হবে। এই গণআদালত গঠনের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আবার রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ছাত্র ইউনিয়নসহ বাম ছাত্র সংগঠনগুলো গণআদালতকে সফল করতে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করে। বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর এই ভূমিকাকে ক্ষমতাসীনরা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। তারা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও ছাত্রদলকে দিয়ে এই ছাত্র সংগঠনগুলোকে ভয়-ভীতি দেখাতে শুরু করে। অ্যত্যাচার নির্যাতনও চালায়।

এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গোলাম আযমবিরোধী আন্দোলন ও গণআদালতকে বানচাল করার জন্য ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল পুরোপুরি ঠ্যাঙ্গারে বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। সে সময় ক্ষমতাসীনরা কোনো একটা অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয়কে বন্ধ করে দেওয়ার পাঁয়তারা চালায়। এমন এক প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীনদের ফাঁদে পা দেয় ছাত্রলীগ। ১৯৯২ সালের ১৩ মার্চ দুপুর থেকে দখলদারিত্বের লড়াইয়ে ছাত্রদলের সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় ছাত্রলীগ। আর সেই সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করতে গিয়েই 'লাশ' হতে হয় রাজুকে।

অনেকে বলে থাকেন, সে সময় যুদ্ধাপরাধী রাজাকার শিরোমণি গোলাম আযমের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলন দমনের জন্য ক্ষমতাসীনরা ক্যাম্পাসে একটি 'লাশ' চেয়েছিল। যাতে অস্থিতিশীলতার অজুহাত দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া যায়। গণআদালত গঠন ঠেকানো যায়। ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘাত ছিল তাদের সাজানো খেলা। আর রাজু ছিল সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দলের সেই কাঙ্ক্ষিত 'লাশ!'

যদিও ক্ষমতাসীনদের আন্দোলন দমনের সেই খায়েশ পূরণ হয়নি।

তিন.

রাজুকে হত্যা করার পর বুড়িগঙ্গায় অনেক জল গড়িয়েছে। যারা সেদিন রাজুকে হত্যা করেছিল, তারা ক্ষমতা থেকে অনেক দূরে ছিটকে গেছে। কিন্তু রাজুর খুনীরা আজও অধরাই থেকে গেছে। আওয়ামী লীগ কয়েক দফায় ক্ষমতায় থাকলেও রাজু হত্যার বিচার করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। রাজু হত্যার বিচার দাবি করে উচ্চারিত আমাদের দাবি যেন মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেছে!

চার.

আমাদের দুর্ভাগ্য, রাজু যে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন, সেই রাজনীতি আমাদের দেশে এখনও রয়ে গেছে। ক্ষমতার পালাবদল হলেও শাসকের চরিত্রে খুব একটা হের-ফের হয়নি। তাই তো শিক্ষাঙ্গনগুলো আজও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। সুস্থ ধারার রাজনীতি, সমাজ জীবনের সবখানে গণতন্ত্র চর্চার অভাব এখন যেন আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।

পাঁচ.

রাজুর মৃত্যুর পর তার সহযোদ্ধা ও সংগঠনের উত্তরসূরিরা অনেক লড়াই-সংগ্রাম ত্যাগের বিনিময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে নির্মাণ করেছে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্য। ওই ভাস্কর্যের দিকে তাকাতে পারি না। জীবনের রূপরসমধু আকণ্ঠ আস্বাদ করে আমরা রাজুর সেই মিছিলের সাথীরা এখনও বেশ টিকে আছি। রাজুরও তো আমাদের সঙ্গে থাকার কথা ছিল। কিন্তু রাজুকে কেন পাথরের মূর্তি হতে হলো? কেন রাজুকে এভাবে অসময়ে চলে যেতে হলো? কেন রাজুকে সেদিন জীবন দিতে হলো? এর জন্য কারা দায়ী? রাজুর খুনীদের কেন বিচার হলো না? রাজুর আত্মদানের পরও কেন নষ্ট রাজনীতির বৃত্ত থেকে আমরা বের হতে পারছি না?

এসব প্রশ্নের জবাব কে দেবে?

ছয়.

আমাদের মধ্যে রাজু ছিল একেবারে আলাদা রকম। শান্ত, ধীর-স্থির, কিছুটা লাজুক। কিন্তু অসম্ভব জেদি ও সাহসী। রাজুর চোখদুটি ছিল ভীষণ মায়াময়। ওই চোখে রাজ্যের স্বপ্ন নিয়ে ঘুরে বেড়াত। সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা-মৌলবাদমুক্ত প্রগতির সমাজ গড়ার স্বপ্ন। আরও অনেক অনেক স্বপ্ন। কিন্তু রাজুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেদিন ওর স্বপ্নগুলোকেও যেন হত্যা করা হয়েছে!

সাত.

রাজুর ব্যাগে থাকা একটি নোটবুকে অনেক কবিতা, স্লোগান লেখা ছিল। তার মধ্যে ছিল, জীবনানন্দের বিখ্যাত একটি কবিতার অংশ 'শুকতারা নিভে গেলে কাঁদে আকাশ?'

না রাজু, শুকতারা নিভে গেলে আকাশ হয়তো কাঁদে না! কিন্তু তোমার জন্য আমরা সেদিন অনেক কেঁদেছি, এখনও কাঁদি। যদিও আমরা তোমার স্বপ্নগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি। যদি পারো, আমাদের এই অক্ষমতাকে তুমি ক্ষমা করে দিও!