শুটিং বেলায় স্যানিটারি প্যাড বদলাতে হতো ঝোপঝাড়ে: জয়া বচ্চন

১৩ বছর বয়সে অভিনয় জগতে আসা জয়া বচ্চন নাতনির কাছে ওই সময় মাসিকে কতটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হতো তা খুলে বলেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2022, 12:00 PM
Updated : 18 Nov 2022, 12:00 PM

এখন শুটিংয়ের সময় শিল্পীদের আলাদা ভ্যানিটি ভ্যান দেওয়া হলেও আগে এমন সুবিধা ছিল না। সেসব দিনে অভিনয় জগতের নারী শিল্পীদের মাসিকে নিতে হতো একাধিক স্যানিটারি ন্যাপকিন। আর তা বদলাতে যেতে হতো ঝোপের আড়ালে। নাতনি নাভিয়ার কাছে পিরিয়ড নিয়ে আলাপে নানি ও এক সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা  জয়া বচ্চন এসব কথা বলেন রাখঢাক না রেখেই।     

অমিতাভ-জয়ার কন্যা শ্বেতা নন্দার সন্তান নাভিয়া নাভেলি নন্দা। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী হালে সামনে এসেছেন তার উপস্থাপনায় ’হোয়াট দ্য হেল নাভিয়া‘ শো নিয়ে। 

তিন প্রজন্মের তিন নারীর এক সঙ্গে বসে গল্প; তাতে জায়গা পেয়েছে নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, পেশা, ভালোবাসা, সন্তান লালন-পালন, বন্ধুত্ব, শরীর-মন, সমাজ নিয়ে মন খুলে আলাপ।

অনুষ্ঠানের চুম্বক আলাপ নিয়ে একাধিক পডকাস্ট ও ভিডিও এরই মধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে ইউটিউবে হোয়াট দ্য হেল নাভিয়া চ্যানেলে। গত ১২ নভেম্বর ইউটিউবে ছাড়া হয় এই অনুষ্ঠানের বায়োলজি: ব্লেসড বাট বায়াসড শিরোনামের পর্বটি ।

৩৪ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের এই পডকাস্টের নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে  নাভিয়ার সঙ্গে কথা বলেন জয়া বচ্চন এবং শ্বেতা নন্দা।

উপস্থাপনায় পিরিয়ড নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নাভিয়া বলেন, ”হ্যা, আমি ঠিক এই শব্দটাই বলেছি; পি-রি-য়-ড।

”...গত দুবছর ধরে আমার এসব নিয়ে কথা বলার প্রচণ্ড আগ্রহ কাজ করছিল। বলতে গেলে এই আয়োজন আমি এমন ভাবেই সাজিয়েছি যেন নারীর স্বাস্থ্য আর নারীর শরীরকে ঘিরে যত কুসংস্কার তা নিয়ে কথা বলতে পারি।”

প্রথম পিরিয়ডের অভিজ্ঞতা নিয়ে নানি জয়া বচ্চনের কাছে প্রশ্ন রাখেন নাভিয়া, ”তোমার কি মনে আছে...?”

“অবশ্যই মনে আছে”, বলেন ৭০ পেরোনো জয়া বচ্চন।

”আমার গ্র্যান্ড মাদার প্রথমে বুঝতে পারেন যে আমার মাসিক শুরু হয়েছে।তিনি আমার মাকে গিয়ে জানান।এরপর আমি বাবার সঙ্গেও কথা বলি।তিনি এ নিয়ে বিষদ কথা বলেন। ...তিনি আরও বলেছিলেন, এটি আসলে নারীর সঙ্গে অন্যায্যতা। তাদের এতো কিছুর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।“

নানির সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে নাভিয়া অনুষ্ঠানের এই পর্বের শিরোনামকে ব্যাখ্যা করে বলেন, “হ্যা, বায়োলজিকালি এসব একপেশে।

”নারীকে গর্ভধারণ, মাসিক, মেনোপজের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এগুলো শুধুই যে শারীরিক অভিজ্ঞতা তা নয়, এর সঙ্গে নারীর আবেগ ও মানসিক দিকও জড়িয়ে আছে।”

নারীর মধ্য বয়সের শারীরিক ও মানসিক বদল নিয়ে ৪৫ পেরোনো শ্বেতা নন্দা বলেন, “মধ্য বয়সে শুধু মেনোপজই নয়, অনেক কিছুই ঘটে। মধ্য বয়সে পৌঁছানো কারো জন্য এই সময়টা খুব ভয়ের।

”এই সময় চুল ঝরে যায়, ওজন বাড়তে থাকে, হঠাৎ মুড সুইং দেখা দেয়, শরীরের তাপমাত্রার ওঠানামা সমস্যা হয়। আর এসব নিয়ে বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। তেমন কোনো কাউন্সেলিং হয় না। এ সময় অনেক নারী আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। ফলে মানসিক স্বাস্থ্যে ঝুঁকি তৈরি হয়।”

মধ্য বয়সী নারীদের এই সময় নিয়ে কথা বলার মতো প্ল্যাটফর্মের অভাবও তুলে ধরেন তিনি।

কথার ফাঁকেই পিরিয়ডে কর্মক্ষেত্রে ছুটি নিয়ে নানি ও মায়ের মতামত জানতে চান নাভিয়া।

শ্বেতা নন্দা বলেন, তিনি পিরিয়ডে ছুটির পক্ষে।

নিজের পিরিয়তে শারীরিক সমস্যা তেমন না হলেও অনেক নারী এই দিনগুলোতে পেটে ব্যথায় ভোগেন বলে মন্তব্য করেন এই কলামনিস্ট।

”এ সময় মনে হয় বিছানায় শুয়ে থাকি। চকলেট খাই। কার্ব খাই। একটু একা থাকি। কর্ম ও পরিবার সামলানো আসলেও কষ্টকর হয়ে ওঠে।”

নানির কাছে তার কর্মব্যস্ত থাকার দিনগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চান নাভিয়া।

জয়া বচ্চন বলেন, “একদম মর্মান্তিক ছিল। খুবই খারাপ।”

”বাইরে শুটিং থাকলে সেসময় আলাদা ভ্যানিটি ভ্যান দেওয়া হতো না। কিছু বদল করতে হলে ঝোপের আড়ালে যেতে হতো।”

এই প্রজন্মের নাভিয়া অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন, ”স্যানিটারি প্যাড?”

জয়া বচ্চন বলেন, ”সবকিছুই...।”

নাভিয়া বলেন, ”এসব ক্রেজি শোনাচ্ছে।”

জয়া বচ্চন, “হ্যা, এসব ক্রেজিই ছিল। তখন পর্যাপ্ত টয়লেটও ছিল না। তাহলে খোলা জায়গায়, পাহাড়ের চূড়ায় শুটিং চলাকালে কী করবে? সেসব খুবই বিব্রতকর ছিল। অস্বস্তিকর ছিল।

”এসব খোলামেলা ভাবে বলতে হচ্ছে বলে দুঃখিত, কিন্তু তিন-চারটা প্যাড ব্যবহার করতে হতো। প্লাস্টিক ব্যাগ সঙ্গে নিতে হতো যেন একটা বদলে ব্যাগে ভরে কোনো ঝুড়িতে রাখা যায়। পরে বাড়ি গেলে এর থেকে মুক্তি মিলত।” 

জয়া বচ্চন সিনেমায় কাজ শুরু করেন ১৩ বছর বয়সে। অমিতাভকে বিয়ে করার আগে ’গুড্ডি’ ও ’মিলি’ সিনেমার  এই নায়িকা জয়া ভাদুরি নামেই জনপ্রিয় হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ”আমি মনে করতে পারি, যখন অনেক ছোট ছিলাম। সৌভাগ্যবশত আমরা স্যানিটারি টাওয়েল ব্যবহার করেছি। কাপড় ব্যবহার করতে হয়নি।

”বাড়ির পেছনে মা একটি ড্রাম রাখত, তাতে আমরা (প্যাড) জমা করতাম। মা এসব পুড়িয়ে ফেলতে বলতেন।”

আজকের ও আগের দিনের স্যানিটারি ন্যাপকিনের ধরনের পার্থক্যও নাতনির কাছে বর্ণনা করেন নানি জয়া বচ্চন।

”চারটা-পাঁচটা স্যারিটারি টাওয়েল পরে বসে থাকার কথা একবার কল্পনা করতে পারো? এটা ভীষণ অস্বস্তিকর। উপরন্তু আজকের দিনে যেমন স্যানিটারি টাওয়েল পাওয়া যাচ্ছে তখন এমন ছিল না।”

”তখন দুই প্রান্ত থাকা বেল্ট ছিল, টাওয়েলে লুপ থাকত, ওরমধ্যে দিয়ে টেপ আটকাতে হতো। খুবই খারাপ ছিল ওসব।”

নারীর পিরিয়ডে ছুটি দেওয়া নিয়ে কর্মক্ষেত্রে পুরুষ সহকর্মীদের বিতর্ক রয়েছে বলে নাভিয়ার কথার প্রেক্ষিতে জয়া বচ্চন বলেন, ”এক-দু দিনের ছুটি দেওয়া যায়। যখন তারা স্বাভাবিক হবে তখন কাজটা পুষিয়ে দিতে বলা যেতে পারে, বা বাড়তি সময় কাজ করতে বলা যেতে পারে।

” ...এসব আসলে মন-মানসিকতার বিষয়, এসব আচরণগত বিষয়। পুরুষের এসব বুঝতেই হবে। অবশ্য অনেক নারীও নারীর প্রতি সহানুভূতিশীল নয়। তারাও এসব নিয়ে ভাবেন না।”

নাতনি নাভিয়ার এই যুগে জয়া বচ্চন মনে করেন, “এখন এসব নিয়ে খবরের হেডলাইন হওয়া দরকার।”

তখন নিজের কাজের সূত্রে একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তরুণ নাভিয়া।

স্কুলের মেয়েদের নিয়ে যৌনশিক্ষা বিষয়ে এক কর্মশালায় ছিলেন তিনি। সেখানে ১১ কি ১২ বছরের এক মেয়ে তাদের জানায়, নিজের পিরিয়ড শুরুর পর প্রথম সে বুঝতে পারে তার এই রক্তের রঙ লাল।

টিভিতে প্রচারিত বিজ্ঞাপনে দীর্ঘদিন ধরেই নীল রঙ ঢেলে  স্যানিটারি ন্যাপকিনের শোষণ ক্ষমতা দেখানো হয়ে আসছে। আর তা দেখেই ওই মেয়ের ধারণা হয় তার পিরিয়ডের রক্তের রঙ নীল –ই হবে।

মাসিক হচ্ছে এমন সবার জন্য ব্যথামুক্ত মাসিকের শুভেচ্ছা জানিয়ে এই পর্বের অনুষ্ঠান শেষ করেন নাভিয়া নাভেলি নন্দা। 

অ্যাপল, স্পটিফাই, অ্যামাজন মিউজিক, আইভিএম পডকাস্টস সহ সব স্ট্রিমিং প্লাটফর্মগুলোতে প্রতি শনিবার আসছে মাম্বল পৃষ্ঠপোষকতায় নাভিয়ার শো হোয়াট দ্য হেল নাভিয়া।