এতে প্রায় ১.৩ মিলিয়ন শব্দ এবং আনুমানিক ৯৬ লাখ ৯ হাজার অক্ষর রয়েছে। প্রতিটি অক্ষর, এমনকি স্পেসও এক অক্ষর হিসেবে ধরা হয়।
Published : 20 Jan 2025, 05:33 PM
ফরাসি ঔপন্যাসিক মার্সেল প্রুস্তের উপন্যাস ‘আ লা রিশের্শ দু তপ পেরদু’ (ফরাসি থেকে ইংরেজিতে অনূদিত ‘ইন সার্চ অফ লস্ট টাইম’)। পৃথিবীর দীর্ঘতম উপন্যাস হিসেবে এ বইটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে আছে।
বইটি বহু খণ্ডে বিভক্ত হলেও একক উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত। এতে প্রায় ১.৩ মিলিয়ন শব্দ এবং আনুমানিক ৯৬ লাখ ৯ হাজার অক্ষর রয়েছে। প্রতিটি অক্ষর, এমনকি স্পেসও এক অক্ষর হিসেবে ধরা হয়। বইটিতে অনেক দীর্ঘ বাক্য রয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ বাক্যটি ৯৫৮ শব্দের। এই অনন্য বাক্যগঠন প্রুস্তের চিন্তাপ্রক্রিয়ার গভীরতার পরিচয় বহন করে।
এত দীর্ঘ উপন্যাসকে সংক্ষেপে বর্ণনা করা কঠিন, তবে সারসংক্ষেপে বলা যায়- ‘আ লা রিশের্শ দু তপ পেরদু’ মূলত প্রুস্তের জীবনের স্মৃতি ও আত্ম-আবিষ্কারের কাহিনি। উপন্যাসটি বর্ণনাকারীর শৈশব স্মৃতি এবং ১৯ শতকের শেষাংশ ও ২০ শতকের প্রথমাংশে ফ্রান্সের উচ্চ সমাজে বেড়ে ওঠা এবং প্রেমে পড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা।
এটি সময়ের ক্ষত, সত্যের অনুসন্ধান এবং জীবনের অর্থ সম্পর্কে দার্শনিক চিন্তাভাবনা তুলে ধরে। শিল্প, স্মৃতি, আত্ম-অবলোকন এবং জীবনের ক্ষতির মতো বিষয় নিয়ে এর গভীর পর্যালোচনা এটিকে ২০ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্মে পরিণত করেছে।
উপন্যাসটির একটি বিখ্যাত অংশ হল ‘ম্যাডেলিন ইনসিডেন্ট’, যেখানে একটি ছোট কেক চুনীফুল চায়ের মধ্যে ডুবিয়ে খাওয়ার সময় প্রধান চরিত্রের শৈশবের স্মৃতি জেগে ওঠে। এটি ইন্দ্রিয়ানুভূতি ও স্মৃতির এক অনন্য উদাহরণ।
১৯০৯ সালে, ৩৮ বছর বয়সে, মার্সেল প্রুস্ত তার এই উপন্যাস লেখা শুরু করেন। প্রথম খণ্ডটি ১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয়, প্রুস্তের নিজের অর্থায়নে। প্রথমে তিনি মাত্র দুটি খণ্ডের পরিকল্পনা করেছিলেন।
শুরুতে, সমালোচকদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়ার জন্য প্রুস্ত নিজে উদ্যোগ নেন।
কিন্তু যখন দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়, এটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেতে শুরু করে। পরবর্তীতে প্রুস্ত তার উপন্যাসটি সম্পূর্ণ নতুন স্তরে উন্নত করেন। যুদ্ধকালীন তিনি অবশিষ্ট খণ্ডগুলো সংশোধন করেন এবং আরও গভীর ভাবার্থ যোগ করেন। এতে উপন্যাসের আকার তিনগুণ বেড়ে যায়।
১৯১৩ থেকে ১৯২৭ সালের মধ্যে উপন্যাসটি ৭ খণ্ডে প্রকাশিত হয়। প্রুস্তের মৃত্যুর পরে তার ভাই রবার্ট অসমাপ্ত অংশগুলো সম্পাদনা করেন এবং শেষ তিনটি খণ্ড প্রকাশ করেন।
বিপুল এ উপন্যাসটি প্রথম ইংরেজিতে অনুবাদ করেন সি. কে. স্কট মনক্রিফ। তার অনুবাদ ‘রিমেমব্রান্স অফ থিংকস পাস্ট’ শিরোনামে ১৯২২ থেকে ১৯৩১ সালের মধ্যে প্রকাশিত হয়। মনক্রিফ জীবিত অবস্থায় শেষ খণ্ডটি অনুবাদ করতে পারেননি। এটি পরে অন্য অনুবাদকরা সম্পন্ন করেন।
১৯৯৫ সালে পেঙ্গুইন বুকস বইটির নতুন অনুবাদ প্রকল্প শুরু করে। ২০০২ সালে এটি আধুনিক ফরাসি টেক্সটের ওপর ভিত্তি করে ছয় খণ্ডে প্রকাশিত হয়।
এটি শুধু ২০ শতকের সাহিত্যের অন্যতম গভীর কীর্তি হিসেবেই নয়, ফ্রান্সের সমাজজীবনের এক কমিক চিত্রায়ণ হিসেবেও স্বীকৃত। চার্লস সোয়ান, ওডেট দ্য ক্রেসি, ব্যারন দ্য শার্লুস এবং ডাচেস দ্য গারমন্তের মতো চরিত্রগুলো বিশ্ব সাহিত্যের স্মরণীয় অংশ হয়ে উঠেছে।
‘আ লা রিশের্শ দু তপ পেরদু’ আজও সমালোচকদের মতে আধুনিক উপন্যাসের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে এবং ভার্জিনিয়া উলফ ও স্যামুয়েল বেকেটসহ বহু লেখকের ওপর প্রভাব ফেলেছে। এটি ২০ শতকের সাহিত্যে এক অনন্য মাইলফলক।
মার্সেল প্রুস্তের জন্ম ১৮৭১ সালে প্যারিসের কাছে। ধনী পরিবারে জন্ম নেওয়া প্রুস্ত আইন ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন। তার সামাজিক সম্পর্ক তাকে সম্ভ্রান্ত বংশীয় অভিজাতদের সেরা ড্রয়িং রুমগুলোর একজন মনোযোগী পর্যবেক্ষক হতে সহায়তা করে, তিনি প্যারিসের বিভিন্ন পত্রিকার জন্য সামাজিক বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেন। তিনি প্রবন্ধ ও গল্প প্রকাশ করেন, যার মধ্যে ‘প্লেজারস অ্যান্ড ডেইজ’ (১৮৯৬) গল্পসংকলনটি উল্লেখযোগ্য। ১৯২২ সালে প্যারিসে মারা যান এ ঔপন্যাসিক।