কোভিড: ফকির আলমগীরও চলে গেলেন

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা, গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2021, 05:32 PM
Updated : 18 Dec 2021, 09:23 PM

ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে গত চার দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন এই শিল্পী। শুক্রবার রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে তার মৃত্যু হয় বলে তার ছেলে মাশুক আলমগীর রাজিব জানান।

ফকির আলমগীরের বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তার ডান ফুসফুসের ক্রমশ উন্নতি হলেও বাঁ ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে শুক্রবার। পাশাপাশি রক্তে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় শঙ্কিত ছিলেন চিকিৎসকরা। তার মধ্যেই রাত সাড়ে ৯টার দিকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে সব আশা শেষ হয়ে যায়।

করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও গত ১৪ জুলাই এই সংগীত শিল্পীর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকলে পরদিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। সেখান থেকে তার আর বাসায় ফেরা হল না।

ইউনাইটেড হাসপাতালের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার সাজ্জাদুর রহমান শুভ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাস তো ছিলই। তার মধ্যে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে তার মৃত্যু হয়েছে।”

একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিল্পীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, “ফকির আলমগীরের মৃত্যুতে দেশের সঙ্গীত অঙ্গনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। তার গান তরুণ প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেমের নবজাগরণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।”

আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শোকবার্তায় বলেন, “এ দেশের সংগীতাঙ্গনে, বিশেষ করে গণসংগীতকে জনপ্রিয় করে তুলতে তার ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

রাজিব জানান, শনিবার বেলা ১১টায় খিলগাঁও পল্লীমা সংসদের মাঠে তার বাবার প্রথম জানাজা হবে। তার আগে দেওয়া হবে ‘গার্ড অব অনার’।

বেলা ১২ থেকে ১টা ফকির আলমগীরের মরদেহ সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। জোহরের পর খিলগাঁও মাটির মসজিদে আরেক দফা জানাজা শেষে তালতলা কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে তাকে সমাহিত করা হবে বলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জানান।  

ষাটের দশক থেকে গণসংগীতের সঙ্গে যুক্ত ফকির আলমগীর ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেব ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে শামিল হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে।

স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রাখেন ৭১ বছর বয়সী এ শিল্পী। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে ফকির আলমগীরকে একুশে পদক দেয়।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার কণ্ঠের বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

১৯৮২ সালের বিটিভির আনন্দমেলা অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলে। গানটি লিখেছেন আলতাফ আলী হাসু। কণ্ঠ দেয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর।

এছাড়া ‘মন তুই দেখলি না রে’, ‘ কালো কালো মানুষের দেশে’, মায়ের একধার দুধের দাম’, ’মন আমার দেহ ঘড়ি’, ‘আহারে কাল্লু মাতব্বর’, ‘ও জুলেখা’, ‘ঘর করলাম না রে আমি’, ‘সান্তাহার জংশনে দেখা’,  ‘বনমালী তুমি’সহ তার গাওয়া বহু গান আশি ও নব্বইয়ের দশকেও দারুণ জনপ্রিয় ছিল।

তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠাতা, গণসংগীত চর্চার আরেক সংগঠন গণসংগীত শিল্পী পরিষদের সাবেক সভাপতি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করা ফকির আলমগীর গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করেন।

‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যারা আছেন হৃদয় পটে’সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ হয়েছে তার।

গণসংগীতে অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে ফকির আলমগীরকে একুশে পদকে ভূষিত করে সরকার।