সরকারি অনুদান এক ধরনের ‘প্রেস্টিজ’: শমী কায়সার

২০১৮-১৯ অর্থবছরে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদান পেয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সার। অনুদান দেওয়ায় অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে জুরিবোর্ডের কয়েকজন সদস্যের পদত্যাগ ও ফের যোগদানের পর শেষ বৈঠকে শমীর এ অনুদানপ্রাপ্তি নিয়েও চলছে আলোচনা। ঝড় উসকে দিয়েছে গণমাধ্যমে দেওয়া এ অভিনেত্রীর এক মন্তব্যও। গ্লিটজের কাছে খোলামেলা আলোচনায় সবকিছুর জবাব দিলেন এ অভিনেত্রী।

রুদ্র হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2019, 10:34 AM
Updated : 21 May 2019, 10:56 AM

চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদান পেলেন। প্রতিক্রিয়া জানতে চাই..

চলচ্চিত্র তো আমাদের প্রাণের বিষয়। আমি যে গল্পগুলো নিয়ে গত কয়েকবছর কাজ করছি সবগুলোই মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত। এই গল্পটা আমার প্রাণের গল্প, কেননা এটা সরাসরি আমার বাবা-মা শহীদুল্লা কায়সার ও পান্না কায়সার, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ-বঙ্গবন্ধু সবকিছুই ধারণ করছে। এটা একটি শুদ্ধতম প্রেমের গল্প। এ কারণেই আমি অনেক বেশি এক্সাইটেড। এ ছবিটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশকে ডিফরেন্ট ইমেজ দেবে বহির্বিশ্বে।

আবেদন ছাড়াই চলচ্চিত্রটি অনুদান পেয়েছে, এমন বিতর্ক চলছে। অনুদান প্রাপ্তির পর গণমাধ্যমে বলেছিলেন যে, 'স্বপ্ন মৃত্যু ভালোবাসা' নামের কোন ছবিই অনুদানের জন্য জমা দেননি..

ছোট একটা কনফিউশন হয়েছে, কারণ আমি দু-তিনটা স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ করেছি। আপনি জানেন যে, দু-তিনটা স্ক্রিপ্টও দেওয়া যায়। ‘জীবন মৃত্যু ভালোবাসা’ (স্বপ্ন মৃত্যু ভালোবাসা) যে টাইটেলটা আসছে, সেটা আমার মায়ের লেখা বই- ‘মুক্তিযুদ্ধ: আগেও পরে’ অবলম্বনে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের নয় মাস আমার মা এবং বাবার কাহিনীর ওপর। যখন ডিরেক্টররা জমা দিয়েছে, তারা তখন ওয়ার্কিং স্পিডে একটা ওয়ার্কিং টাইটেল দিয়েছে। তখন যেহেতু জমা দিয়েছে, একবছর আগে..তাছাড়া আমি দুই তিনটা চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করেছি, জমাও দিয়েছি। সে কারণেই আমি নামটা নিয়ে একটু কনফিউশনে পড়ে গিয়েছিলাম। নামটা হয়ত আমরা এটা রাখবো না, ‘মুক্তিযুদ্ধ: আগে ও পরে’-এ নামটাই জুরি বোর্ড পছন্দ করেছে।

তাহলে সিনেমার নাম পরিবর্তন হচ্ছে..

হ্যাঁ, ‘জীবন মৃত্যু ভালোবাসা’ টাইটেলটা আমরা চেঞ্জ করব।

‘স্বপ্ন মৃত্যু ভালোবাসা’...

হ্যাঁ, আমি ভুলে গিয়েছিলাম। ওইটা তখন ওয়ার্কিং টাইটেল হিসেবে জমা দেওয়া হয়েছে। ওখানে বলা হয়েছিলো ‘মুক্তিযুদ্ধ: আগে ও পরে’ অবলম্বনে। সে কারণেই নামটা যখন বলা হল, তখন আমি চট করে ধরতে পারিনি। ওখানেই কনফিউশনটা হয়েছে।

যারা জমা দিয়েছিলেন, তারা কি আপনার অগোচরে জমা দিয়েছিলেন কি না?

না না, আমিই জমা দিয়েছিলাম। চিত্রনাট্য ধানসিঁড়ি’র প্যাডেই গেছে। আমিই সাইন করেছিলাম। কনফিউশনটা তৈরি হয়েছে কেননা আমি দু’তিনটা চিত্রনাট্য জমা দিয়েছিলাম।

অনেকেই অভিযোগ করে আসছেন, রাজতৈনিক প্রভাব বিবেচনায় অনুদান দেওয়া হচ্ছে..

আমি ২০১৬তেও চিত্রনাট্য জমা দিয়েছিলাম। আমি তো পাইনি। তখন কেন কথা উঠল না? আমার মনে হয় এগুলো না বোঝা থেকে প্রশ্নগুলো আসে। কেউই বলতে পারবে না এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব আছে। আমি কিন্তু জুরি বোর্ডের কাউকে ফোনও করিনি, পারস্যুও করিনি, এটা আমার নেচারের মধ্যে না। এবার আমি দু-তিনটা জমা দিয়েছি, যেটা হয় সেটাই হবে।

জুরি বোর্ডে কে ছিলো না ছিলো আমি কিচ্ছু জানি না। পরে আমি শুনেছি, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ছিলেন, মোরশেদুল ইসলাম ছিলেন, মামুনুর রশীদ ছিলেন। উনারা ডিসিশন নিয়ে..পাওয়ার পরে আমিই বাচ্চু আংকেলকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম এটা কি ‘স্বপ্ন মৃত্যু ভালোবাসা’? কোন গল্পটা ওনারা আমাকে বলে দেন। তখন উনারা আমাকে ক্লিয়ার করলেন, এটা আমার মায়ের গল্পটা।

জুরি বোর্ডের কারও সাথে আমার জীবনে কথাও হয়নাই, আমি জানতামও না সেখানে কারা ছিলো। নিরবে নিভৃতে আমি স্ক্রিপ্ট জমা দিয়েছি।

কিন্তু প্রথম তালিকায় ছিল না চলচ্চিত্রটির নাম। শেষ বৈঠকে ডিসিশানটা এল..

এটা প্রথম থেকেই ডিসিশান ছিল। এটা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুকে জিজ্ঞেস করলেই পাবেন। উনি আমাকে যেটা বললেন, উনারা প্রথম থেকেই আমার এ গল্পটা পছন্দ করেছেন জুরি বোর্ডে। এটা প্রথম থেকেই পছন্দ করা ছিল। এটা পরে আমি বাচ্চু আংকেলের কাছ থেকে শুনেছি।

এটা নিয়েই কি জুরি বোর্ডের সাথে মন্ত্রণালয়ের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিটা তৈরি হয়?

সেটা আমি বলতে পারব না। বাচ্চু আংকেল, মামুনুর রশীদ এবং মোরশেদুল ইসলাম প্রথম থেকেই এ গল্পটা পছন্দ করেছেন। এ বইটা ওনারা সম্ভবত ১৫বছর আগে পড়েছেন। সম্ভবত সে কারণেই হতে পারে। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, প্রথম থেকেই জুরি বোর্ড চেয়েছেন, এ গল্পটাকে অনুদান দেওয়া হোক।

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সদস্য হয়েও সরকারি অনুদান নিয়ে আপনার চলচ্চিত্র নির্মাণকে সহজভাবে দেখছেন না অস্বচ্ছল ও সংকটে থাকা নির্মাতারা..

অনুদানের ছবির সাথে তো অর্থনৈতিক সচ্ছলতা-অসচ্ছলতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। আমি বিষয়টাকে এভাবে দেখি না। এটা একটা প্রেস্টিজ এবং একটা রিঅ্যাওয়ার্ডের বিষয়। আমার অর্থনৈতিক সচ্ছলতা থাকলেও ছবি বানাতে দেড় কোটি দুই কোটি টাকা লাগে। আমি এখনও অত সচ্ছল নই যে টান দিয়ে দেড় কোটি, দুই কোটি টাকা ব্যবস্থা করে ফেলব।

বিষয়টা আসলে তা না, বিষয়টা হলো, এটা এক ধরনের প্রেস্টিজ। রাষ্ট্র আপনাকে এক ধরনের রিকগনাইজ করছে। এটার সাথে স্বচ্ছলতা-অস্বচ্ছলতা ওইভাবে আমি দেখি না। রাষ্ট্রের কাছে একটা অর্থনৈতিক সহযোগিতা আমি চেয়েছি। সেটা চাইতেই পারি আমি। আমি যদি আজকে অনুদান নাও পেতাম তাহলে একজন প্রযোজক খুঁজতে হত বা সহযোগিতা লাগত।

চলচ্চিত্রটি আপনিই নির্মাণ করছেন কি?

আমি নির্মাণ করছি না। সবাই যদি ডিরেকশন দিতে যায়, তাহলে তো সমস্যা। বাংলাদেশে তো এখন এটাই সমস্যা। আমরা বাংলাদেশে কথা বলেছি, ভারতে কথা বলেছি-কিন্তু আমাদের যে টিমটা-আমরা ভেবে দেখেছি মুক্তিযুদ্ধের গল্প, শহীদুল্লা কায়সার-পান্না কায়সারের গল্প, এটা বাংলাদেশের ট্যালেন্টেড ফিল্ম মেকাররাই বানাক। এটা নিয়ে আমার সাথে ওয়াহিদ তারেক- আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ ওদের সাথে অনেকদিন ধরেই কথা চলছিল।

মেইনলি ওয়াহিদ তারেকের সাথে কথা বলেছি। কেননা তার সাথে আমি আগে প্রচুর কাজ করেছি। আদনান হাবিব গবেষণার কাজটা করেছে। একটা ক্রিয়েটিভ টিম কাজ করছে চলচ্চিত্রটি নির্মাণের পেছনে।

নির্মাতা হিসেবে তাহলে কাকে পাচ্ছি?

ওয়াহিদ তারেকই চলচ্চিটি নির্মাণ করবেন।

চলচ্চিত্রের গল্পটা কেমন?

গল্পটা শুরু হয়েছে '৬৯ এর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে যে মাসে আমার মা-বাবা’র বিয়ে হয়। অর্থাৎ '৬৯ এর ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে '৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে এসে গল্পটা শেষ হয়।

আসন্ন ঈদে দর্শক কি পাবে অভিনেত্রী শমী কায়সারকে?

না, এবার তেমন কিছু করছি না।

একটু অন্যপ্রসঙ্গে জানতে চাই, সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে আপনার মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের সঙ্গে একটা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সে অবস্থা কি কেটেছে?

কোন ক্ল্যাশ না, কিছু না, আমি নিজেই সাংবাদিক পরিবারের সদস্য। আমার সাথে কারোরই কিছু হয়নি। বিষয়টি হচ্ছে সম্পূর্ণই ভুল বোঝাবুঝি। আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, ওটা ছিল ভুল বোঝাবুঝি। আমি নিজেও মর্মাহত হয়েছি। আমি বরং দুঃখিত, কেউ যদি আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকেন। আর আমি এমন কিছু বলিওনি। আমি নিজেও সাংবাদিক পরিবারের মেয়ে। এ ছবিটা যখন রিলিজ পাবে, তখন দেখবে এটা সংবাদ জগত নিয়েই, শহীদুল্লা কায়সার কেন সাংবাদিকতায় গেলেন, বিষয়টা তো সেটাই।

সংসদ সদস্য হওয়ার লড়াইয়ে রাজনীতিতে সরব ছিলেন, এখন লক্ষ্য কী?

এমপি হলে আমি রাজনীতি করলাম, না হলে আমি রাজনীতি করলাম না, এ বিষয়টাই আমার মাথায় নাই। আমি বঙ্গবন্ধু বুঝি, মুক্তিযুদ্ধ বুঝি, বাংলাদেশ বুঝি। আমি রাজনীতি করি বা সরাসরি না করি আমি রাজনীতির ভেতরেরই একজন মানুষ। আমাদের জীবনাচরণও রাজনীতির বাইরের কিছু না।