একনেকের প্রথম বৈঠকে ফ্রিল্যান্সার প্রশিক্ষণসহ ৯ প্রকল্প অনুমোদন

এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2024, 01:48 PM
Updated : 13 Feb 2024, 01:48 PM

ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে দেশের ৪৮ জেলার ২৮ হাজার ৮০০ যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বিপুল সংখ্যক ফ্রিল্যান্সার তৈরির জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে পরিকল্পনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সত্যজিত কর্মকার জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘দেশের ৪৮ জেলায় শিক্ষিত কর্মপ্রত্যাশী যুবকদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি’ শীর্ষক এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে নতুন সরকারের প্রথম একনেক সভা ছিল এটি।

এদিন ফ্রিল্যান্সার প্রশিক্ষণসহ মোট নয়টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয় একনেকে। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা।

এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ২৮৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা থেকে ২৫৪ কোটি টাকার যোগান দেওয়া হবে।

আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মহিউদ্দিন, পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, আর্থ সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আব্দুল বাকী এবং তথ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিসংখ্যান ‍বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম অসুস্থ থাকায় প্রথম একনেক বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে আসেন পরিকল্পনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব।

তিনি জানান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বৈঠকে তোলা ‘দেশের ৪৮ জেলায় শিক্ষিত কর্মপ্রত্যাশী যুবকদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি’ শীর্ষক প্রকল্পটি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ২০২৬ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে।

ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রকল্পটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আব্দুল বাকী বলেন, ২০২২ সাল থেকে একই রকম আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ১৬ জেলায় ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

“চলমান প্রকল্পটির একটি মধ্যবর্তী মূল্যায়ন করা হয়েছে। মূল্যায়নে প্রকল্পটির খুব কার্যকর বলে বিবেচিত হয়েছে। মূল্যায়নে বলা হয়েছে, প্রশিক্ষণ নেওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮১৩ জন বা ৬৪ শতাংশ ইতোমধ্যে উপার্জনের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। প্রশিক্ষণ শেষ করা ২১ শতাংশ বিভিন্ন চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।” 

ওই প্রকল্পের বিভিন্ন ডেটাবেইজ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবারা ৪ লাখ ৭ হাজার ডলার আয় করেছেন জানিয়ে আব্দুল বাকী বলেন, “আগের প্রকল্পটির এই সফলতার কারণে এবার দেশের বাকি ৪৮ জেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।”

এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনা সচিব বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় যারা প্রশিক্ষণ নেবে, তাদেরকে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) থেকে সনদ দেওয়া হবে।

এই প্রকল্পের আওতায় একযোগে ৪৮ জেলায় ৩ মাস মেয়াদি বা ৬০০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করা হবে। প্রত্যেক জেলায় প্রশিক্ষণ পাবে ৬০০ জন করে।

এক বছরে ৫০ জনের চারটি ব্যাচের মাধ্যমে ৩ বছর ধরে মোট ১২টি ব্যাচে এসব শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

এই প্রশিক্ষণের জন্য যারা নির্বাচিত হবেন, তারা প্রত্যেকে দৈনিক ২০০ টাকা নগদ ভাতা এবং ৩০০ টাকা হারে খাবার পাবেন।

বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হল-

  • ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর অধীনে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প। ব্যয় বাড়ছে ১৫১ কোটি টাকা।

  • ‘পিডিবিএফ- এর কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রকল্প- দ্বিতীয় পর্যায়’ প্রকল্প; ব্যয় ৫২৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

  • ‘ঢাকা জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প; ব্যয় ১ হাজার ১২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

  • ‘ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার মেইনস্ট্রিমিং’ (প্রথম সংশোধনী) প্রকল্প; ব্যয় বাড়ছে প্রায় ২৯১ কোটি টাকা।

  • ‘ইন্টিগ্রেটিং ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যাডপটেশন ইন্টু সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট পাথওয়েস অব বাংলাদেশ, প্রকল্প; ব্যয় প্রায় ৬১ কোটি টাকা।

  • ‘ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (ওজোপাডিকো) এলাকার জন্য স্মার্ট প্রি-মিটারিং (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প; ব্যয় ৭৬১ কোটি টাকা।

  • ‘দুদকের খুলনা, রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল, এবং সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ এবং ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, প্রকল্প; ব্যয় ১৩৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

  • ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট (ইউআরপি) প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেশন অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিট (পিসিএমইউ চতুর্থ সংশোধিত), ব্যয় বাড়ছে ৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা।