আগে উন্নয়ন পরে সুশাসন: পরিকল্পনামন্ত্রী

উন্নয়নের সঙ্গে সুশাসনের কোনও সংঘর্ষ নেই, মন্তব্যও করেন তিনি।

দেশে এখন উন্নয়ন এক নম্বর এবং সুশাসন দুই নম্বর অগ্রাধিকার বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

রোববার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে দেশে দক্ষতা বিষয়ক শ্রমবাজার সমীক্ষার তথ্য প্রকাশ ও কর্মশালায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা (বিআইডিএস) এ সমীক্ষা পরিচালনা করে। এদিন ‘দ্যা রিচার্স ফাইন্ডিংস অব দ্যা লেবার মার্কেট স্ট্যাডিজ ফর স্কিল অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’ কর্মশালারও আয়োজন করে রাষ্ট্রায়ত্ত গবেষণা সংস্থাটি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এর ব্যাখ্যাও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “আমি মনে করি ডেভেলপমেন্ট ইজ মোর এসেনশিয়াল দ্যান আদার থিংস অ্যাট দিস মোমেন্টস।

“আমার দৃষ্টিতে এখন উন্নয়ন এক নম্বর আর সুশাসন দুই নম্বর অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।”

উন্নয়নের সঙ্গে সুশাসনের কোনও সংঘর্ষ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমি তাই মনে করি। তবে একটাকে সরিয়ে আরেকটা হয় না।”

উন্নয়নকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমার যারা ভোটার যেখানে (নির্বাচনে) পাস করেছি হাওর এলাকায়, তাদের ওখানে আমি যাই...আমি তাদের সাথে যখন কথা বলি জীবন নিয়ে, তখন তারা সব সময়ই পরিষ্কার পানি চায়, বিদ্যুৎ চায়, কাজ চায়, সার চায়।“

একই সঙ্গে তারা নিরাপত্তা চায় বলেও যোগ করেন তিনি।

সুশাসন সম্পর্কে অনেকের ধারণা পরিষ্কার নয় বলেও তিনি মনে করেন।

“সুশাসন বলতে তারা নিরাপত্তা চায়; কোন নিরাপত্তা? সামাজিক নিরাপত্তা, বিচারটা যেন সঠিকভাবে পায়। এটা তাদের আকুতি।

“আমি মনে করি, সুশাসন মানে সুবিচার,” যোগ করেন মন্ত্রী।

দেশের সুশাসনের বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে চলমান আলোচনাকে অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে এ মুহূর্তে আমাদের দরকার পেটে ভাত, এক গ্লাস পানি। তারপরে যদি পাওয়া যায় চা এক কাপ খাব।

কর্মশালায় ‘দক্ষতা উন্নয়ন বিনিয়োগ কর্মসূচী (এসইআইপি) নামের একটি কর্মসূচির ওপর শ্রমবাজার নিয়ে পরিচালিত সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরে হয়।

বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষক কাজী ইকবাল সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরে জানান, পোশাক শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি, নির্মাণ খাত, হালকা প্রকৌশল, জাহাজ নির্মাণ, চামড়া ও পাদুকা, কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পর্যটন ও চিকিৎসা সেবাসহ ১০ খাতের কর্মীদের নিয়ে এ গবেষণা করা হয়।

এসব খাতের সাত হাজারের বেশি কর্মী এবং এক হাজার ১৩৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিচালিত জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, গড়ে ৭০ শতাংশ কর্মী দক্ষ এবং ৩০ শতাংশ অদক্ষ কর্মী হিসেবে কাজ করছেন।

এরমধ্যে মাত্র ৩ দশমিক ৬ শতাংশ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা নিয়ে দক্ষতা অর্জন করেছেন। বাকিরা উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করেছেন বলে ওই গবেষক জানান।

পোশাক খাতসহ যেসব প্রতিষ্ঠানে নারী পুরুষ এক সঙ্গে কাজ করেন সেখানে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি দক্ষ বলে জরিপে উঠে এসেছে।

আর বিদেশগামী শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় ৪৭ শতাংশ একেবারেই অদক্ষ বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে।

মূলত তথ্যপ্রযুক্তিসহ উচ্চ প্রযুক্তি খাতে দক্ষ কর্মী খুবই কম। এজন্য এ খাতে দক্ষ কর্মী গড়ে তোলার জন্য সরকারকে আরও উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ রাখেন গবেষক ইকবাল।

অনুষ্ঠানে বিআইডিএস মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, বাংলাদেশ এখন অদক্ষ কর্মীর দেশ নয়। শিল্পের ৭০ শতাংশ কর্মী দক্ষ। তার মানে আমরা দক্ষতারও একটা পর্যায়ে এসেছি।

“অর্থাৎ দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন আর লো স্কেলে নেই।“

এমন পর্যায়ে অদক্ষ বাকি কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ বলে অভিহিত করেন তিনি। একই সঙ্গে উচ্চ প্রযুক্তি খাতে দক্ষ কর্মী বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরিন আফরোজ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ ইমদাদ উল্লাহ মিয়াসহ আরও অনেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।