অর্থপাচারের উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক না: ডিসিসিআই সভাপতি

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, “মানি লন্ডারিং বা অন্য কোনো অনিয়মে যেসব ব্যবসায়ী জড়িত, দায় শুধু তারই। ব্যক্তিগত দায় সব ব্যবসায়ীর ওপর ঢালাওভাবে বর্তায় না।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2024, 12:07 PM
Updated : 13 Feb 2024, 12:07 PM

অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থপাচার হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ।

মঙ্গলবার পুঁজিবাজারভিত্তিক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ-টক’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীরা অর্থ বিনিয়োগ করার সময় রিটার্ন (বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফা প্রাপ্তি) খোঁজেন। বাংলাদেশে এই রিটার্ন কানাডাসহ বিদেশের যেকোনো দেশের চেয়ে অনেক বেশি। আসলে অর্থপাচার যারা করছেন, তাদের উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক না”

রাজধানীর পুরানা পল্টনের আল-রাজী কমপ্লেক্স সিএমজেএফের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংলাপটি পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু আলী ও সভাপতিত্ব করেন সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়া।

অর্থপাচার প্রসঙ্গ এলেই ব্যবসায়ীদের নাম ‍চলে আসে সবার শীর্ষে- বিষয়টিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, “অর্থ সেখানেই যাবে যেখানে বিনিয়োগের বিপরীতে রিটার্ন সবচেয়ে বেশি। অন্য কোথাও টাকা রাখার চেয়ে বাংলদেশে কিন্তু রিটার্নটা অনেক বেশি।

“মানি লন্ডারিংয়ের পেছনের কারণটা আসলে অর্থনৈতিক না। যেহেতু অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য না, ব্যবসায়ীদের এটা করার কোনো কারণ নেই। অন্য কারণও থাকতে পারে।”

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, “মানি লন্ডারিং বা অন্য কোনো অনিয়মে যেসব ব্যবসায়ী জড়িত, দায় শুধু তারই। ব্যক্তিগত দায় সব ব্যবসায়ীর ওপর ঢালাওভাবে বর্তায় না।”

২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হবে বাংলাদেশ। আর ২০৩০ সালে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার এক ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বর্তমানে যা প্রায় ৪৫৪ বিলিয়ন ডলার।

এমন লক্ষ্য অর্জনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি এখনই দশ শতাংশে উন্নীত করার প্রয়োজন উল্লেখ করে আশরাফ আহমেদ বলেন, “আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আড়াই গুণ বাড়াতে হবে। এখনই করতে হবে প্রতি বছর। ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হতে আমাদের সময় ছিল দশ বছর। কোভিড মহামারি ও যুদ্ধাবস্থাসহ আন্তর্জাতিক নানা কারণে ৪ বছর চলে গেছে।”

সেই কাজ করতে হবে ছয় বছরে জানিয়ে তিনি বলেন, “দেশে এখন ডলারের সংকট রয়েছে। ব্যাংকগুলোর কাছে যথেষ্ট পরিমাণ ডলার লিকুইডিটি নেই। এজন্য আমদানির সমস্যাটার সমাধান হচ্ছে না। আমদানি কমলে উৎপাদনের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আমাদের এখনই পরিকল্পনাগুলো সাজাতে হবে। নইলে ২০৪০-৪৫ সাল লেগে যাবে।”

এজন্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন মন্তব্য করে আশরাফ আহমেদ বলেন, “অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় চ্যালঞ্জগুলোর একটি হচ্ছে, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ কমে গেছে। তারল্য সংকটে ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে না। দশ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধি দিয়ে অর্থনীতির এতো বড় লক্ষ্য অর্জন সম্ভব না।”

আরেক চ্যালেঞ্জের বিষয়ে তিনি বলেন, “ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য কমে যাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের চাহিদা ৩০/৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক মাত্র ১০ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে। এ অবস্থায় চলতি মূলধনের চাহিদা পূরণ করাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থের সংস্থান না হলে উৎপাদন খরচ কমানোর পথে হাঁটবেন ব্যবসায়ীরা। উৎপাদন কমলে প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়বে। সংকুচিত হবে কর্মসংস্থান।”

পুঁজিবাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ করতে ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হচ্ছে না কেন- এমন এক প্রশ্নে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, “ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেয়া খুব ডিফিকাল্ট (কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাওয়া)। পুঁজিবাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ করাটা একটু সময়সাপেক্ষ। দীর্ঘমেয়াদে এটা নিয়ে কাজ করা যাবে।”

আইনি ও প্রক্রিয়াগত নীতিমালাগুলো সহজ ও খুব দ্রুত করা যায় কিনা, তা ভাবার জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।

রাজধানীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র পুরান ঢাকায় যানজটে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও অর্থনীতি।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, “পুরনো ঢাকার যানজট খুব ‘ক্রিটিকাল’ হয়ে গেছে। আমরা বিভিন্ন পলিসি ও আমাদের কাছে থাকা রিসোর্স নিয়ে সরকারের সাথে কাজ করতে পারি।”