ঐক্যবদ্ধ হয়ে না দাঁড়ালে সামনে বিপর্যয়: রানা দাশগুপ্ত

মৌলবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে ব্যর্থ হলে ‘বিপর্যয় অনিবার্য’ বলে মন্তব্য করেছেন রানা দাশগুপ্ত।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2020, 03:15 PM
Updated : 7 Dec 2020, 05:25 PM

‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও শিল্পবিরোধী সাম্প্রদায়িকতা গোষ্ঠীর অপতৎপরতা রুখে দাঁড়ান’ স্লোগান নিয়ে সচেতন নাগরিক সমাজ ও সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মী, চট্টগ্রাম আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সোমবার বিকেলে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বলেন, “১৯৭১ সালে হানাদারের এদেশীয় দালালদের আনুষ্ঠানিক পরাজয় হয়েছে। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে এই পরাজিত শক্তির রাজনীতিকে নির্মূল করা হয়নি। দীর্ঘ ৫০ বছরে রাজনীতিতে অবস্থান নিয়ে নানা কূটচালে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে তারা তৎপর রয়েছে।

“স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর বছরে আজ সেই কাজটি করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। রাষ্ট্র ও রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত হয়ে, প্রশ্রয় পেয়ে সাম্প্রদায়িকতাকে-মৌলবাদীতাকে তৃণমূলে ছড়িয়ে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে হাত দেওয়ার যে স্পর্ধা দেখিয়েছে, তা কোনোভাবেই বাঙালি জাতি মেনে নিতে পারে না।”

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত ১৯৯১-৯২, ২০০১-০৬ সালে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের চিত্র তুলে ধরে রামু, কুমিল্লার মুরাদনগরের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের সাম্প্রতিক ঘটনার কথাও বলেন।

তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির অনৈক্য বিভাজন তাদের শক্তি যুগিয়েছে। আর পেছনে ফিরে থাকার সুযোগ নেই। চলুন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ৭১ এ যারা ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলাম সেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াই হবে। যদি দাঁড়াতে ব্যর্থ হই তাহলে বিপর্যয় অনিবার্য।”

সমাবেশে কবি-সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, “ভাষা আন্দোলনের সময় এরাই বলেছিল ভারতীয় চররা ঢুকে বাংলা ভাষার পক্ষে কথা বলছে উর্দুর বিপক্ষে। এরা শহীদ মিনার নির্মাণকে হিন্দুয়ানি আখ্যা দিয়েছিল। এরাই মুক্তিযুদ্ধের সময় দ্বিজাতিতত্ত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে ভারতের ষড়যন্ত্র বলেছিল। এরা বলেছিল ফটো তোলা হারাম। আজ তাদের ফটো তুলে হজে যেতে হয়।”

তিনি বলেন, “অনেক তো হলো। এসব অপকর্মের ৭০ বছর পেরিয়ে গেছে। ওয়াজ মাহফিলের নামে সংখ্যালঘুদের, নারীদের বিরুদ্ধে, বিভিন্ন ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে। এমনকি নারী শিক্ষার প্রতীক বেগম রোকেয়াকেও তারা নিন্দা করে। কিন্তু রাষ্ট্র এতদিন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আজকে আমরা তার খেসারত দিচ্ছি।

“এরা বর্তমান সরকারের কোনো কোনো মহলের কাছ থেকে প্রশ্রয় পেয়েছে। আমরা মনে করি, যথেষ্ট হয়েছে। এবারে চিহ্নিত ধর্মবিরোধী, ধর্ম ব্যবসায়ীদের অবিলম্বে রুখে দাঁড়াতে হবে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই বাংলাদেশে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।”  

মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার বলেন, “এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠিটিকে মদদ দেওয়া হয়েছে, তাই তারা আজ মাথাচাড়া দিয়েছে। আজ সামলাতে পারছে না। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। অবিলম্বে মুক্তিযুদ্ধের এই পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

আবৃতি শিল্পী রাশেদ হাসানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক হোসাইন কবির, উদীচী চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শীলা দাশগুপ্ত, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রোজী সেন, ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী, সঙ্গীত শিল্পী শ্রেয়সী রায় প্রমুখ।  

সমাবেশে সম্মিলিত আবৃত্তি পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সামাজিক সংগঠন ‘কন্ঠনিড়’সহ বিভিন্ন সংগঠন অংশ নেয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের উপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে মৌলবাদীদের প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা।

সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ড ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা আসে।

সমাবেশে মহানগর ইউনিটের কমান্ডার মোজাফফর আহমদ বলেন, “বিজয়ের মাসে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি, সাম্প্রদায়িক, উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। 

“এই অপশক্তিকে প্রতিহত করতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পরিবারের সদস্যদের রাজপথে থাকবে।”

বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাড়া, মহল্লা, মসজিদ, মাদ্রাসায় বসে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কোনো অপতৎপরতায় লিপ্ত হয় কি না, সে দিকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানানো হয়।

কৃষ্টিয়ার এ ঘটনায় দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান বক্তারা।

সমাবেশ শেষে প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে একটি মশাল মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি  জামালখান, চেরাগী পাহাড় ও মোমিন রোড হয়ে আন্দরকিল্লা গিয়ে শেষ হয়।   

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় সদস্য মো. সরওয়ার আলম চৌধুরী মনি ও জেলা কমিটির সদস্য সচিব কামরুল হুদা পাভেলের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ডেপুটি কমান্ডার শহিদুল হক চৌধুরী সৈয়দ, সহকারী কমান্ডার সাধন চন্দ্র বিশ্বাস, সহকারী কমান্ডার খোরশেদ আলম, সহকারী কমান্ডার আকবর খান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অন্যতম সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবছার, ফজল আহমদ, মো. আবছার উদ্দিন চৌধুরী, চবি শিক্ষক অধ্যাপক ড. শ্যামল রঞ্জন চক্রবর্তী, অধ্যাপক ড. রেজাউর রহমান, অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক রাসেল, অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মাসুদ, জহুর আহমদ চৌধুরী ফাউন্ডেশনের পরিচালক শরফুদ্দিন চৌধুরী রাজু প্রমুখ।