গাড়ির ধাক্কায় ভ্যানচালকের মৃত্যুর পর ‘টাকায় সমঝোতা’ জাপা নেতার

চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টির এক নেতার ছেলেকে বহনকারী গাড়ির ধাক্কায় এক ভ্যানচালকের মৃত্যুর পর টাকা দিয়ে ‘সমঝোতা’ করা হয়েছে, লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে মামলা বা ময়নাতদন্ত ছাড়াই।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2018, 04:41 PM
Updated : 2 March 2018, 04:58 PM

স্থানীয়দের ভাষ্য, চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠের পরিবারের মালিকানাধীন ওই গাড়ি চালাচ্ছিলেন তার ছেলে উমায়ের আলম শেঠ নিজেই, সঙ্গে ছিলেন তার তিন বন্ধু।

তবে সোলায়মান শেঠের দাবি, ঘটনার সময় তার ছেলে গাড়িতে থাকলেও চালাচ্ছিলেন মফিজ নামের এক ড্রাইভার; ঘটনার পর থেকেই সে পলাতক।

রফা করতে নয়, মানবিক বিবেচনা থেকেই ওই ভ্যান চালকের পরিবারকে টাকা দিয়েছেন বলে দাবি জাতীয় পার্টির এই নেতার।

নিহত মোহাম্মদ মানিকের (২৫) বাড়ি বরগুনা জেলার সোনাতলা থানায়। স্ত্রীকে নিয়ে তিনি থাকতেন চট্টগ্রামের হালিশহর চৌধুরীপাড়ার সেকান্দারের কলোনিতে।

বৃহস্পতিবার রাতে হালিশহর টোল রোডে ওই দুর্ঘটনার পর কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি বলে জানিয়েছেন হালিশহর থানার এসআই মাহবুব মোর্শেদ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, টোল রোডের সাবুর গ্যারেজের সামনে দ্রুতগতিতে আসা প্রাইভেটকারটি টমেটো বহনকারী মানিকের ভ্যানকে ধাক্কা দেয়। এরপর ভ্যান ও গাড়ি দুটোই পাশের খাদে পড়ে যায়।

এতে ঘটনাস্থলেই মানিকের মৃত্যু হয়। স্থানীয় লোকজন প্রাইভেটকারের চার আরোহীকে উদ্ধার করে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যায়।

হালিশহর থানার ওসি মাহফুজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উমায়েরের বাবা সোলায়মান আলম শেঠ মানবিক দিক বিবেচনা করে নিহতের পরিবারকে অর্থ সাহায্য দিয়েছেন। এই ঘটনায় নিহতের স্বজনদের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হচ্ছে না।”

‘পরিবারের আবেদনে’ ময়নাতদন্ত ছাড়াই মানিকের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে এবং দাফনের জন্য শুক্রবার তার বাড়িতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান ওসি।

সমুদ্র সৈকত ঘেঁষে যাওয়া টোল রোডে গণপরিবহন চলে না। বন্দর থেকে মালবাহী লরি এই সড়ক দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওঠে। ধনী পরিবারের উঠতি বয়সী ছেলেরা প্রায়ই ওই সড়কে যায় গাড়ি হাঁকাতে।

গত বছর জুনে এই সড়ক দিয়ে বেপরোয়া গতিতে যাওয়ার সময় প্রাইভেটকার উল্টে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী দুই ভাইসহ তিন তরুণের মৃত্যু হয়।

পারিবারিকভাবে ধনী সোলায়মান আলম শেঠদের আবাসনসহ কয়েকটি খাতে ব্যবসা রয়েছে। তার ছেলে উমায়ের নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।   

স্থানীয় এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, দুর্ঘটনার সময় উমায়ের ওই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। সে কারণেই হয়ত সোলায়মান শেঠ সমঝোতার পথে গেছেন।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন, “ওই গাড়িতে চারজন তরুণ ছিলেন। কে গাড়ি চালিয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।”

আর সোলায়মান আলম শেঠ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গাড়িতে আমার ছেলেসহ চারজন ছিল। গাড়িটি আমাদের পারিবারিক। মফিজ নামে এক চালক গাড়ি চালাচ্ছিল। তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল কয়েকদিন আগে। গাড়িটা টেস্ট করার জন্য টোল রোডে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।”

অর্থ দিয়ে সমঝোতার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দুর্ঘটনার সময় আমার ছেলে গাড়ি চালায়নি। ড্রাইভার সেটি চালাচ্ছিল। ঘটনার পর থেকেই সে পলাতক। একজন নিম্ন আয়ের লোক মারা গেছে, মানবিক বিবচনায় তাদের দাফন ও অন্যান্য কাজের জন্য অর্থ সহায়তা দিয়েছি। ভবিষ্যতে আরও কোনো সহায়তার দরকার হলে তখনও দেব।”