বিদেশিদের বঙ্গবন্ধু টানেল দেখালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ট্রেনে গেলেন কক্সবাজারে

“কূটনীতিকদের এই পরিদর্শনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির সামর্থ্য ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে, তাতে আমাদের দেশকে তারা ভালোভাবে জানতে পারছে,” বলেন মন্ত্রী

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2024, 10:42 AM
Updated : 27 Feb 2024, 10:42 AM

বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে ২৪টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মিশন প্রধানসহ ৩৪ জন কূটনীতিককে নিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল পরিদর্শন করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

মঙ্গলবার সকালে টানেল পরিদর্শনের পর বিদেশি অতিথিদের নিয়ে ট্রেনে করে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের পথে রওনা হন তিনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘অ্যাম্বাসেডর আউটরিচ প্রোগ্রামের’ আওতায় কূটনীতিকদের নিয়ে সকালে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন হাছান মাহমুদ। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিদেশি প্রতিনিধি দলের সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।

বিমান বন্দর থেকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল পরিদর্শন করেন তারা। দুপুরে ট্রেনে করে কক্সবাজার যাওয়ার মুহূর্তে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন হাছান মাহমুদ।

মন্ত্রী বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা যেন বাংলাদেশকে জানে, বাংলাদেশে যে বিরাট উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ হচ্ছে, সেগুলো যেন তারা স্বচক্ষে দেখে, সেজন্যই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘অ্যাম্বাসেডর আউটরিচ প্রোগ্রামের’ আয়োজন।

“কূটনীতিকদের এই পরিদর্শনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির সামর্থ্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে, তাতে আমাদের দেশকে তারা ভালোভাবে জানতে পারছে। বাংলাদেশকে জানার মাধ্যমে তারা তাদের দেশকে এই বার্তা পৌঁছে দেবে এবং বাংলাদেশের খবরগুলো তারা বিশ্বময় ছড়িয়ে দেবে।”

হাছান মাহমুদ বলেন, “আপনারা জানেন যে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ট্রেন লাইন হয়েছিল ১৯৩০ সালে। কিন্তু তার অনেক আগেই চট্টগ্রাম থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ট্রেন লাইনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। অর্থাৎ ১৯০০ সালের পরপরই সেটির পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

“কিন্তু দেশ ভাগ হল; দেশ ভাগ ও বাংলাদেশ হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু তিনিও বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। কারণ তাকে সাড়ে ৩ বছরের মাথায় হত্যা করা হয়েছিল। বিধ্বস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে পুনর্গঠন করার আগেই তাকে হত্যা করা হয়। এই জনপদের মানুষ যেই স্বপ্ন ১২৫ বছর আগে দেখেছিল, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃতে। এটি একটি অসাধারণ কাজ। তাই আজকে আমরা কূটনীতিকদেরকে চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে করে কক্সবাজার নিয়ে যাচ্ছি।”

নিজেও প্রথমবার চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে করে কক্সবাজারে যাচ্ছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তাদের আনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, তারা যেন বাংলাদেশকে জানে ও চেনে। আমাদের দেশে যে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, এই সমুদ্র সৈকতের খবরটা যেন তাদের মাধ্যমে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে এবং বাংলাদেশের সৌন্দর্য ও উন্নয়ন সম্পর্কে তারা যেন ভালো করে জানতে পারে, সেজন্যই তাদেরকে আমরা নিয়ে এসেছি।”

কক্সবাজারে পৌঁছে বিদেশি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে কোনো কথাবার্তা হবে কিনা, এমন প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের সঙ্গে তো কথাবার্তা আমাদের সবসময়ই হয়। তারা অনেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেছে। এখনো যদি তারা সুযোগ পায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাবে।”

বিদেশিদের এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “আজ চট্টগ্রামে কয়েক ঘণ্টা কাটাল, কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম রোড টানেল তারা দেখল। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকাসহ দক্ষিণ এশিয়ার কোথাও নদীর তলদেশ দিয়ে রোড টানেল নেই। সেটি তারা দেখল, এপার থেকে ওপারে গিয়ে আবার ফিরে এল।

“এই যে অসাধারণ উন্নয়ন, যেগুলো আজ থেকে ১৫/২০ বছর আগে মানুষ কল্পনাও করেনি, সেগুলো আজকে বাস্তব। সেই বাস্তবতা আজকে কূটনীতিকরা নিজের চোখে দেখেছে।”

হাছান মাহমুদের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন। সফরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, চীন, কোরিয়া, ইতালি, ডেনমার্ক, কসভো, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম, ভ্যাটিকান, ভুটান, স্পেন, আর্জেন্টিনা, লিবিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মিশর, ফ্রান্স এবং এফএও, আইইউটি, একেডিএন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ২৪ জন মিশন প্রধানসহ ৩৪ জন কূটনৈতিক সদস্য ছিলেন।