চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে না পারলে কী হবে, 'ভাবেননি’ সাকিব

আইসিসির নতুন নিয়মে অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকেট। যা প্রশ্নের সামনে ফেলে দিচ্ছে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের ক্যারিয়ারের ভবিষ্যতকেও।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2023, 03:05 PM
Updated : 30 Oct 2023, 03:05 PM

চলতি বিশ্বকাপের পর ছাড়বেন ওয়ানডে অধিনায়কত্ব, ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর বিদায় বলবেন ক্রিকেটকে; দেশ ছাড়ার আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন সাকিব আল হাসান। একই ভাবনা আগে জানিয়েছেন তামিম ইকবালও। কিন্তু এখন সুতোয় ঝুলছে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকেট। ফলে অনিশ্চয়তায় পড়ে যাচ্ছে সাকিব, তামিমদের ভবিষ্যৎ ভাবনাও।  

আগের কাঠামো বিলুপ্ত করে ৮ দলের ওয়ানডে টুর্নামেন্টে বাছাইয়ের জন্য নতুন মানদণ্ড ঠিক করেছে আইসিসি। আগের দুই আসরে নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যে র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা ৮ দল পেত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার সুযোগ। তবে ২০২৫ সালের টুর্নামেন্টের দল বাছাই হবে চলতি বিশ্বকাপ থেকেই। 

আইসিসি আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানালেও, ক্রিকেটের নিয়ন্তা সংস্থাটির সভায় বছর দুয়েক আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, স্বাগতিক পাকিস্তানের সঙ্গে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিলের ওপরের সাত দল পাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার সুযোগ। 

ওই আসর দিয়েই ক্যারিয়ারের ইতি টানার পরিকল্পনা করেছিলেন বাংলাদেশের দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সাকিব ও তামিম। প্রায় দেড় যুগের ক্যারিয়ারে এর আগে ২০০৬ ও ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলেছেন সাকিব। তামিমের রয়েছে শুধু ২০১৭ সালের খেলার অভিজ্ঞতা। 

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবে পথচলা শুরুর অবস্থায় ২০০৬ সালের আসরে খেলেন সাকিব। সেবার বাছাই পেরিয়ে মূল আসরে জায়গা পায়নি বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাকিব করেন ফিফটি। শেষটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০ ওভারে স্রেফ ১৮ রানে নেন ৩ উইকেট।

২০১৭ সালে র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে থেকে সরাসরিই খেলার সুযোগ করে নেয় বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ডকে পেছনে ফেলে সেমি-ফাইনালে পৌঁছে যায় মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বাধীন দল। কিউইদের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয়ে ১১৪ রানের ইনিংস খেলেন সাকিব। 

ওই আসরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ১২৮ রান করেন তামিম। পরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯৫ ও ভারতের বিপক্ষে সেমিতে ৭০ রানের সৌজন্যে আসরের তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৯৩ রান করেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। সাকিবের মতো তারও আশা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দিয়ে ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার।

সেই অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ এবারের বিশ্বকাপ। পারিপার্শ্বিক আরও কিছু কারণ উঠে এলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ফিটনেসের কারণে এই টুর্নামেন্টে নেই তামিম। ফলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকেট নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না বাঁহাতি ওপেনার। 

অধিনায়ক হিসেবে খেলতে গিয়ে সাকিব তেমন ছন্দে নেই। বোলিংয়ে ৬ ম্যাচে ৭ উইকেট পেলেও ব্যাট হাতে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার। ৬ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছে সাকুল্যে ৬১ রান। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ইনিংসেই করেছেন ৪০ রান। 

সাকিবের বিবর্ণ বিশ্বকাপে যেন বাকিরাও হারিয়ে ফেলেছেন ছন্দ। ফলে একের পর এক হারে তলানির আশপাশে ঘুরছে বাংলাদেশ দল। যা অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণ।

এমতাবস্থায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে সাকিব জানালেন, ভবিষ্যতের ব্যাপারে এখনও ভাবেননি তিনি। 

“বিশ্বকাপ শুরুর আগেই (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাছাইয়ের নতুন নিয়ম সম্পর্কে) জেনেছি। (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) না খেলতে পারলে (ক্যারিয়ারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত) কী হবে এখনও ভাবিনি।” 

এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচে যা অবস্থা তাতে অনেকটাই অনিশ্চিত আইসিসির নতুন মানদণ্ডে বাংলাদেশের উৎরে যাওয়া। আফগানিস্তানকে উড়িয়ে যাত্রা শুরুর পর টানা পাঁচ ম্যাচ হেরেছে সাকিবের দল। কোনো ম্যাচেই তেমন লড়াই জমাতে পারেনি তারা। স্রেফ ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের নয় নম্বরে তাদের অবস্থান। 

বাকি তিন ম্যাচেও জোর দিয়ে কিছু বলার সুযোগ নেই। কারণ প্রতিপক্ষ তিন সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া। তিনটি দলের সামনেই আছে সেমি-ফাইনাল খেলার সম্ভাবনা। তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ দিয়েই জয়ের চেষ্টা করবে তারা, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।