ব্যাটে-বলে দারুণ খেলে গায়ানার নায়ক সাকিব

আগের দুই ম্যাচে শূন্য রানের পর এবার ব্যাট হাতে দারুণ ক্যামিও ইনিংস খেললেন সাকিব, পরে বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে তিনিই ম্যান অব দা ম্যাচ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2022, 04:52 AM
Updated : 25 Sept 2022, 04:52 AM

প্রথম দুই ম্যাচের জড়তা কাটিয়ে অবশেষে আপন ছন্দে ফিরলেন সাকিব আল হাসান। হ্যাটট্রিক ‘গোল্ডেন ডাক’ শঙ্কা উড়িয়ে ব্যাট হাতে খেললেন তিনি কার্যকর এক ক্যামিও। বল হাতেও আবির্ভুত হলেন নিজের সেরা চেহারায়। বাংলাদেশের অলরাউন্ডারের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) দারুণ জয় পেল গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্স।

গায়ানায় সিপিএলের ম্যাচে চারে নেমে ২৫ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন সাকিব। বোলিংয়ে ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে তার শিকার ৩ উইকেট।

বাংলাদেশ সময় রোববার সকালে শেষ হওয়া ম্যাচে সাকিবদের গায়ানা ৩৭ রানে হারায় পোলার্ড-রাসেল-নারাইন-পুরানের ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সকে।

ব্যাটে-বলে সাফল্যের পাশাপাশি দারুণ এক সরাসরি থ্রোয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি রান আউটও করেন সাকিব। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যান অব দা ম্যাচ তিনিই।

সাকিব যোগ দেওয়ার আগে ৬ ম্যাচে স্রেফ ১টি জয় নিয়ে পয়েন্ট তালিকায় তলানি থেকে দুইয়ে ছিল গায়ানা। সেই দলই এখন টানা ৩ জয়ে উঠে গেছে শীর্ষ দুইয়ে।

বদলি হিসেবে গায়ানা দলে যোগ দেওয়ার পর এবার প্রথম দুই ম্যাচেই সাকিব আউট হন প্রথম বলে। ২ ম্যাচে ৩ উইকেট নিলেও খুব ধারাল ছিল না বোলিং। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে দুই সংস্করণে শীর্ষে থাকা অলরাউন্ডারের গর্বে আঘাত লাগার কথা যথেষ্টই। তিনি ঘুরে দাঁড়ালেন ম্যাচ জেতানো অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে।

নিজেদের মাঠে এ দিন গায়ানা ব্যাটিংয়ে নামে টস হেরে। ওপেনার চন্দ্রপল হেমরাজ বিদায় নেন দ্বিতীয় ওভারে। আরেক ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও তিনে নামা শেই হোপ শুরুতে সময় নেন কিছুটা। প্রথম ৫ ওভারে রান আসে ২৮। ষষ্ঠ ওভারে অভিজ্ঞ পেসার রবি রামপলকে তিনটি ছক্কায় ওড়ান গুরবাজ।

১৯ বলে ১৪ রান করে হোপ আউট হলে অষ্টম ওভারে উইকেটে যান সাকিব। গুরবাজ ততক্ষণে দারুণ খেলে এগিয়ে নিচ্ছেন দলকে। এই দুজনের জুটি জমে ওঠে।

টানা দুটি ‘গোল্ডেন ডাক’-এর পর সাকিব এবার রানের দেখা পান প্রথম বলেই। বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেনকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মিড উইকেটে খেলে রান নেন দুটি। এরপর কিছুটা সাবধানী ব্যাটিংয়ে একটু থিতু হন উইকেটে। ১২ বলে তার রান ছিল ১০।

পরের ১২ বলে সাকিব করেন ২৫ রান। ইংলিশ বাঁহাতি স্পিনার সামিত প্যাটেলের এক ওভারে চার মারেন তিনটি। সুনিল নারাইনের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে দারুণ টাইমিংয়ে ছক্কা মারেন ওয়াইড লং অন দিয়ে। আরেক পাশে গুরবাজের ব্যাটও ছিল উত্তাল।

৪২ বলে ৬০ রানের জুটি ভাঙে গুরবাজের বিদায়ে। তার নিজেরও রান তখন ৪২ বলে ৬০। ইনিংসে চার নেই একটি, ছক্কা ৬টি! আফগান ওপেনার আগের ম্যাচে করেছিলেন ২৬ বলে ৫২।

নারাইনের বলে স্টাম্পড হয়ে সাকিব ফেরেন পরের ওভারেই। সিপিএলে নারাইনের যা শততম উইকেট।

এরপর রানের গতি একটু কমে গেলেও শিমরন হেটমায়ার ও ওডিন স্মিথ শেষটা করেন দুর্দান্ত। হেটমায়ার করেন ১৪ বলে ২৩, স্মিথ করেন ৩ ছক্কায় ৭ বলে ২২।

শেষ ২ ওভারে রান আসে ৩৭। গায়ানা ২০ ওভারে তোলে ১৭৩ রান।

ব্যাটিংয়ে রানে ফিরে উজ্জীবিত সাকিব বোলিংয়েও প্রভাব রাখতে দেরি করেননি। প্রথম ৪ ওভারে কোনো না হারিয়ে ত্রিনবাগো তোলে ৩১ রান। পঞ্চম ওভারে সাকিব আক্রমণে এসে গায়ানাকে এনে দেন ব্রেক থ্রু। দারুণ এক আর্ম বলে তিনি ফিরিয়ে দেন নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটসম্যান টিম সাইফার্টকে।

ওই ওভারে স্রেফ ১ রানে ১ উইকেট নেন সাকিব। পরের ওভারে দেন ৭ রান।

এরপর তার বোলিংয়ে একটু বিরতি। তবে তাকে আড়ালে রাখা যায়নি। অবদান রাখেন দুর্দান্ত এক রান আউটে।

গুডাকেশ মোটির বল মিড উইকেটে আলতো করে ঠেলেই রান নিতে ছোটেন নিকোলাস পুরান। সাকিব দ্রুত দৌড়ে গিয়ে বল কুড়িয়ে চোখের পলকে থ্রো করেন নন-স্ট্রাইক প্রান্তে, বল সরাসরি লাগে স্টাম্পে।

এরপর শেষ দিকে আন্দ্রে রাসেল, সুনিল নারাইনের মতো বিপজ্জনক ব্যাটসম্যানদের জন্য আবার সাকিবের ওপর ভরসা রাখে গায়ানা। বাংলাদেশের অলরাউন্ডার আস্থার প্রতিদান দেন দারুণভাবে। ফিরিয়ে দেন তিনি এই দুজনকেই।

উড়িয়ে মারতে গিয়ে পুরোপুরি বিভ্রান্ত রাসেল আউট হন ৮ বলে ১২ রান করে। ১২ বলে ১৯ রান করা নারাইন বোল্ড হয়ে যান জোরের ওপর করা সোজা ডেলিভারিতে।

ত্রিনবাগো অলআউট হয় ১৩৬ রানে।

সাকিবের তিন উইকেটের পাশাপাশি গায়ানার অন্য দুই স্পিনার ইমরান তাহির ও জুনিয়র সিনক্লেয়ার উইকেট নেন দুটি করে।

এই জয়ে এক ম্যাচ বাকি রেখে প্লে অফে খেলাও নিশ্চিত করেছেন সাকিবরা। প্রাথমিক পর্বে তাদের শেষ ম্যাচ সোমবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টায়।