ইনিংসের প্রথম বলেই সুযোগ দিলেন হ্যারি টেক্টর। কিন্তু স্লিপে হাতে জমাতে পারলে না মাহমদুল হাসান জয়। পরের ওভারে লং লেগে সহজ ক্যাচ হাতে রাখতে পারলেন না রুবেল হোসেন। দুই দফায় বেঁচে যাওয়ার মাঝের ছয় বলে তিনি একবার এলবিডব্লিউর আবেদন থেকে বাঁচলেন রিভিউ নিয়ে। তখনও রানের খাতাই খোলা হয়নি সিলেট স্ট্রাইকার্সের ওপেনারের।
ঘটনাবহুল এই ৮ বলকে ম্যাচ শেষে টেক্টর বলে দিয়েছেন জীবনের সবচেয়ে বাজে ৮ বল। তবে তার ইনিংসটি শেষ পর্যন্ত বাজে কিছু হয়ে থাকেনি। বরং শুরুর অস্বস্তিকর সময়টুকু কাটিয়ে তিনি এগিয়েছেন দায়িত্ব নিয়ে। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে শুক্রবার ৫২ বলে ৬১ রানের ইনিংসে দলকে নিয়ে গেছেন জয়ের কাছে।
এবারের আসরে টেক্টরের প্রথম ফিফটি এটি। ম্যাচ সেরার স্বীকৃতিও প্রথমবার পেলেন এই ইনিংসে। ইনিংস সূচনা করতে নেমে তিনি খেলেন অষ্টাদশ ওভার পর্যন্ত। ৮ বলে রানের খাতা খুলতে ব্যর্থ হওয়ার পর নবম বলে তিনি মারেন ছক্কা। পরে তার ব্যাট থেকে আরও ২ ছক্কার সঙ্গে আসে ৬টি চার।
অথচ এই বিপিএলের আগে স্বীকৃত ক্রিকেটে কখনও ওপেনিংয়ে নামেননি বলেই দাবি টেক্টরের। সিলেট পর্বের শেষ ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে প্রথমবার এই দায়িত্ব পান তিনি। পরে ঢাকায় ফিরে দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষেও ইনিংস সূচনা করেন আইরিশ ব্যাটসম্যান।
পরে ম্যাচ সেরার পুরস্কার নেওয়ার সময় টেক্টরের কাছে প্রথমেই জানতে চাওয়া হলো ইনিংসের শুরুর জড়তা নিয়ে। বিস্তৃত হাসিতে সরল স্বীকারোক্তি ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের।
“সম্ভবত আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে ৮ বল ছিল… ওই প্রথম ৮ বল (হাসি)…। এরপর কিছুটা সহজ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত জিততে পেরে ভালো লাগছে।”
নতুন দায়িত্বে প্রথম দুই ম্যাচে দুই অঙ্ক ছুঁতে ব্যর্থ হন টেক্টর। তৃতীয়টিতেও তার শুরুটা ছিল নড়বড়ে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনিই সিলেটের জয়ের নায়ক।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে টেক্টরের কণ্ঠে মিশে থাকল অসন্তোষ আর তৃপ্তির মিশ্র অনুভূতির দোলা।
“সত্যি বলতে, এভাবে খেলতে ভালো লাগে না। এই ধরনের ইনিংস পছন্দ করি না। এখানে ব্যাটিং করা খুব কঠিন মনে হয়েছে। সার্বিকভাবে এই টুর্নামেন্টে উইকেট খুব কঠিন লেগেছে আমার কাছে। তবে হ্যাঁ, উইকেটে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে, মাঝ ব্যাটে খেলতে পেরে ভালো লেগেছে।”
“সবশেষ তিন ম্যাচে আমি ইনিংস সূচনা করেছি, যেটা আমি জীবনে কখনও করিনি। দশ বছর বয়সের পর অন্তত আর করিনি। এটা চ্যালেঞ্জিং ছিল, একই সঙ্গে রোমাঞ্চকরও। আজকে মনে হয় পুরস্কারটা পেলাম, দলকে ম্যাচ জেতাতে সাহায্য করে।”
টুর্নামেন্টের শুরুতে টানা পাঁচ ম্যাচ হারা সিলেটের ব্যাটিংয়ে বড় ঘাটতির জায়গা ছিল পাওয়ার প্লে। নিয়মিতই দ্রুত উইকেট হারিয়ে শুরুতেই পিছিয়ে পড়ছিল তারা। সবশেষ দুই ম্যাচে টেক্টরের সঙ্গে সামিত প্যাটেলকে নামানো হয়েছে ওপেনিংয়ে। টেক্টরের ব্যাটে দল চেয়েছে নির্ভরতা, সামিতের ব্যাটে দ্রুত রান।
ঢাকার বিপক্ষে ম্যাচ জিতে অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন বলেছিলেন, কোনো কিছুতেই কাজ না হওয়ায় টেক্টর-সামিত জুটিতে একরকম বাজিই ধরেছেন তারা। উদ্বোধনী জুটির বাজি সেভাবে কাজে না লাগলেও এক পাশ ধরে রেখে টেক্টর খেলেছেন দায়িত্বশীল ইনিংস।
পরে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে টেক্টর জানালেন, দল তার কাছে এমন কিছুই চায়।
“আমরা শুধু পাওয়ার প্লের নিশ্চয়তা খুঁজছিলাম। জানি না, এই কাজের জন্য আমি উপযুক্ত ব্যক্তি কিনা। আমার কাছে খুব কঠিন ঠেকছে। যেটা বললাম, আমরা চেষ্টা করছি, পাওয়ার প্লেতে যেন ৩-৪ উইকেট না হারাই।”
“আমার মতে, বিশেষ করে রাতে যখন বল সুইং করে, তখন ব্যাটিং করা সবচেয়ে কঠিন। দলের পক্ষ থেকে আমাকে এটাই বলা হয়েছে, সময় নিয়ে ব্যাটিং করতে, যেন ভালো একটা শুরু পাওয়া যায়। যেমনটা আজকে করেছি।”