সৌম্যর ১৬৯ রানের পরও হতাশার হার

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলল নিউ জিল্যান্ড।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2023, 06:11 AM
Updated : 20 Dec 2023, 06:11 AM

অভিষিক্ত লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের অফ স্টাম্পের বল হাঁটু গেঁড়ে লং অনের ওপর দিয়ে সীমানার বাইরে আছড়ে ফেললেন টম ব্লান্ডেল। ম্যাচের প্রতীকী চিত্রও বলা যেতে পারে এটিকে। ওই শটে যেন উড়ে গেল বাংলাদেশ দলই। ব্যাটিং উইকেটে সৌম্য সরকার ছাড়া দলের আর কেউ লম্বা করতে পারলেন না ইনিংস। তিনশর কাছাকাছি লক্ষ্যকে নিউ জিল্যান্ড মামুলি বানিয়ে ফেলল উইল ইয়াংয়ের আশি ও হেনরি নিকোলসের নব্বই ছাড়ানো ইনিংসের সৌজন্যে। দেশটিতে বাংলাদেশের জয় অধরাই রয়ে গেল আরও একটি ম্যাচে।

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলল নিউ জিল্যান্ড।

নিউ জিল্যান্ডে স্বাগতিকদের বিপক্ষে এই নিয়ে ১৮ ওয়ানডে খেলে সবগুলোতেই হারের বিষাদ সঙ্গী করল বাংলাদেশ।

নেলসনের উইকেটে বুধবার বোলারদের জন্য ছিল না তেমন কিছুই। বাংলাদেশ তবু খেলতে পারেনি পুরো পঞ্চাশ ওভার। এক বল বাকি থাকতে অল আউট হয় তারা ২৯১ রানে।

পুরো ইনিংসটি বলা যায় সৌম্যময়। আগের ম্যাচে বিভীষিকাময় প্রত্যাবর্তনের পর বাঁহাতি ওপেনার এবার জ্বলে ওঠেন দারুণভাবে। ১৫১ বলে ২২ চার ও ২ ছক্কায় ১৬৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে তিনিই জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস এটি।

সৌম্যর এই ইনিংসে ভাগ্যের ছোঁয়াও অবশ্য ছিল। তিনবার তিনি বেঁচে যান ক‍্যাচ দিয়ে। একবার টিকে যান সফল রিভিউয়ে।

২০ পার করতে পারেন আর কেবল একজন। মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে আসে ৫৭ বলে ৪৫ রান।

এমন ব্যাটিং উইকেটে এই পুঁজি নিয়ে জিততে হলে বোলিংয়ে অসাধারণ কিছু করে দেখাতে হতো বাংলাদেশকে। সফরকারীরা পারেনি লড়াই জমাতেই। নিউ জিল্যান্ড লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে ২২ বল হাতে রেখে।

শতকের সম্ভাবনা জাগিয়ে অল্পের জন্য পারেননি নিকোলস ও ইয়াং। প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইয়াং এবার ৯৪ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় করেন ৮৯ রান।

ওই ম্যাচে শূন্য রানে ফেরা নিকোলসের ব্যাট থেকে আসে ৯৯ বলে ৯৫ রানের ইনিংস। এই দুজনের ১২৮ রানের জুটিই গড়ে দেয় ব্যবধান।

স‍্যাক্সটন ওভালে এ দিন টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল বিভীষিকাময়। পাওয়ার প্লের মধ্যেই বিদায় নেন এনামুল হক বিজয়, নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন কুমার দাস।

শরীর থেকে বাইরের বলে খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ দেন এনামুল। জ‍্যাকব ডাফির বল লেগ সাইডে খেলার চেষ্টায় কাভারে ধরা পড়েন অধিনায়ক শান্ত। কাভার-পয়েন্টে সহজ ক্যাচ তুলে দেন লিটন।

তখন ৪৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ। সৌম্য এক প্রান্তে রান তুলছিলেন অবশ্য দ্রুত। তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গে জমে ওঠে তার জুটি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে হৃদয় রান আউট হলে ভাঙে ৩৬ রানের জুটি। জশ ক্লার্কসনকে সৌম্যর স্ট্রেট ড্রাইভে বল বোলারের পা ছুঁয়ে লাগে স্টাম্পে, হৃদয় তখন দাগের বাইরে।

এরপরই বাংলাদেশ ইনিংস সেরা ৯১ রানের জুটি পায় সৌম্য ও মুশফিকের ব্যাটে। মুশফিকের সামনে বড় সুযোগ ছিল ইনিংস টেনে নেওয়ার। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। অফ স্টাম্পের বাইরের বল কিপারের পাশ দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠানোর চেষ্টায় কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন তিনি ফিফটি থেকে ৫ রান দূরে থাকতে।

বাকি সময়ে দলকে প্রায় একাই টানেন সৌম্য। ৯৯ থেকে আদি অশোকের বলে সিঙ্গেল নিয়ে তৃতীয় ওয়ানডে শতকে পা রাখেন তিনি ১১৬ বলে। এই সংস্করণে ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর এই প্রথম তিন অঙ্কের স্বাদ পেলেন তিনি।

মাঝে মেহেদী হাসান মিরাজ আউট হয়ে যান ২৬ বলে ১৯ রান করে। শতকের পর দারুণ সব শটে এগিয়ে যান সৌম্য। নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহর ১২৮ ছাড়িয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংসের পর তিনি গড়েন আরেকটি রেকর্ড- সাচিন টেন্ডুলকারের ১৬৩ ছাড়িয়ে নিউ জিল্যান্ডে উপমহাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ইনিংস।

হাতছানি ছিল আরেকটি অর্জনের, বাংলাদেশের হয়ে লিটনের সর্বোচ্চ ১৭৬ রানের ইনিংসকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। কিন্তু তার আগেই শেষ ওভারে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ইনিংসের। শেষ ওভারে ৫ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যোগ করতে পারে স্রেফ ১ রান।

রান তাড়ায় কখনোই মনে হয়নি এই ম্যাচ হারতে পারে নিউ জিল্যান্ড। ইয়াং শুরুতে একটু সাবধানী খেললেও রাচিন রবীন্দ্রর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে রান আসে দ্রুত। নবম ওভারে স্বাগতিকরা ছুঁয়ে ফেলে পঞ্চাশ। ৬৬ বলে ৭৬ রানের জুটি ভাঙে রবীন্দ্রর বিদায়ে (৩৩ বলে ৪৫)। তাকে ফিরিয়ে প্রথম উইকেটের স্বাদ পান অভিষিক্ত রিশাদ।

দ্বিতীয় উইকেটে ইয়াং ও নিকোলসের শতরান ছাড়ানো জুটিতে ম্যাচ চলে যায় বাংলাদেশের নাগালের বাইরে। ইয়াং ফিফটি করেন ৫১ বলে। নিকোলসের পঞ্চাশ ছুঁতে লাগে ৬৪ বল। ৭৭ রানে ইয়াং একবার জীবন পান হৃদয় ক্যাচ নিতে না পারায়। পরে তাকে ফিরিয়েই বড় জুটি ভাঙেন হাসান মাহমুদ।

শতক থেকে ৫ রান দূরে থাকতে শরিফুল ইসলামের শর্ট বল পুল করে ক্যাচ দিয়ে থামেন নিকোলস। বাকিটা সারেন দুই টম- ল্যাথাম (৩২ বলে ৩৪*) ও ব্লান্ডেল (২০ বলে ২৪)।

আগামী শনিবার নেপিয়ারে হবে শেষ ম্যাচ, বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৪৯.৫ ওভারে ২৯১ (সৌম‍্য ১৬৯, এনামুল ২, শান্ত ৬, লিটন ৬, হৃদয় ১২, মুশফিক ৪৫, মিরাজ ১৯, তানজিম ১৩, রিশাদ ৬, শরিফুল ১*, হাসান ০; মিল্ন ১০-০-৭৪-১, ডাফি ১০-০-৫১-৩, ও’রোক ৯.৫-০-৪৭-৩, ক্লার্কসন ৬-০-৩০-১, অশোক ১০-১-৬৩-১, রাচিন ৪-০-১৯-০)

নিউ জিল‍্যান্ড: ৪৬.২ ওভারে ২৯৬/৩ (ইয়াং ৮৯, রাচিন ৪৫, নিকোলস ৯৫, ল‍্যাথাম ৩৪*, ব্লান্ডেল ২৪*; শরিফুল ৯-১-৪৯-১, হাসান ৭-০-৫৭-২, তানজিম ৬-০-৫১-০, মিরাজ ১০-১-৪৫-০, রিশাদ ৯.২-০-৬২-০, শান্ত ৫-০-৩০-০)

ফল: নিউ জিল্যান্ড ৭ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে নিউ জিল্যান্ড

ম্যান অব দা ম্যাচ: সৌম্য সরকার