ইতিহাস গড়ার মঞ্চে ফিরে আপ্লুত কাইল মেয়ার্স

তিন বছর আগে চট্টগ্রামে অভিষেকে টেস্টে রেকর্ড গড়া ডাবল সেঞ্চুরি করা ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার এবার বিপিএল অভিষেকেও ম্যান অব দা ম্যাচ হলেন সেই চট্টগ্রামেই।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2024, 03:03 PM
Updated : 17 Feb 2024, 03:03 PM

‘না…আমি বলিনি। শার্ট দেখে খেয়াল করলাম এখানে ২১০… দেখে মনে হলো, দারুণ তো! তবে আমি করতে বলিনি’- সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে ছোট্ট হাসিতে বললেন কাইল মেয়ার্স। এমনিতে ৭১ নম্বর জার্সি পরে খেলেন তিনি। কিন্তু বিপিএল অভিষেকে তাকে দেখা গেল ২১০ নম্বর জার্সি পরে খেলতে।

তার ক্যারিয়ার অনুসরণ করে থাকলে জার্সির এই নম্বরের পেছনের গল্পটা চট করেই সবার বুঝে যাওয়ার কথা। তার জীবনে সবচেয়ে স্পেশাল সংখ্যা হয়তো এটিই। জার্সি নম্বরের প্রসঙ্গেই যেমন বললেন, “হয়তো আমি নিজেই এটি (২১০ নম্বর জার্সি) করতাম।”

সেই বিশেষ সংখ্যার জার্সি গায়ে তার বিচরণের শুরুটা হলো সবচেয়ে উপযুক্ত ময়দানেই। সংখ্যাটির জন্ম তো এখানেই!

চট্টগ্রামের এই জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে টেস্ট অভিষেক তার। সেই ম্যাচেরই চতুর্থ ইনিংসে ২১০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে স্মরণীয় এক জয় এনে দিয়েছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। অভিষেকে চতুর্থ ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি টেস্ট ইতিহাসে নেই আর কারও। ক্রিকেটবিশ্ব তার নামটিও জেনেছিল ওই ইনিংস থেকেই। এই সংখ্যাই এখনও পর্যন্ত তার সবচেয়ে বড় পরিচয়।

ফরচুন বরিশাল কেন তাকে ‘২১০’ নম্বর জার্সি দিয়েছে, সেটা নিশ্চয়ই আর ব্যাখ্যা করতে হবে না!

সেই ম্যাচের তিন বছর পরের ফেব্রুয়ারিতে তার বিপিএল অভিষেক হলো চট্টগ্রামেই। ২১০ নম্বর জার্সি গায়ে তিনি ফিরিয়ে আনলেন যেন সেই ম্যাচকেই। নাহ, সেঞ্চুরি ডাবল-সেঞ্চুরি করে ফেলেননি, তবে অভিষেকেই নায়ক হয়েছেন আবার।   

সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে শনিবার প্রথমে ব্যাট হাতে তিনি খেলেছেন ৩১ বলে ৪৮ রানের ইনিংস। পরে সুইং বোলিংয়ে প্রদর্শনী মেলে ধরে ৩ উইকেট নিয়ে পেয়েছেন ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি। 

ম্যাচ শেষে পুরস্কার গ্রহণের সময় তিন বছর আগের ওই ম্যাচের কথা নিজেই মনে করিয়ে দেন মেয়ার্স।

“এটি দারুণ মাঠ, স্মৃতিময় মাঠ। সবশেষ যখন এখানে খেলেছি, তখনও অর্থ (ম্যাচ সেরার অর্থ পুরস্কার) গ্রহণ করেছি, ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিয়েছি। এখানে ফিরে ও পারফর্ম করে আমি খুব খুশি।”

পরে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই এলো মেয়ার্সের অভিষেক টেস্টের প্রসঙ্গ। আরও একবার সুখস্মৃতিতে ডুব দিলেন ৩১ বছর বয়সী অলরাউন্ডার।

“অবশ্যই… এখানে খেলার দারুণ স্মৃতি আমার। সবশেষ যখন খেলেছি, আমার প্রথম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছি। এখানে ফেরার অনুভূতি দারুণ। শুধু ফেরাই নয়, ফেরার ম্যাচে পারফর্মও করা... খুব ভালো লাগছে এখানে ফিরতে পেরে।”

টুর্নামেন্টের শুরুর দিকেই মেয়ার্সের সঙ্গে কথাবার্তা চূড়ান্ত করে ফেলেছিল বরিশাল। জাতীয় দলের সঙ্গে থাকায় এত দিন বিপিএলে আসতে পারেননি ক্যারিবিয়ান তারকা। তবে ওই অস্ট্রেলিয়ার সফরেও খেলার খুব একটা সুযোগ পাননি তিনি। 

টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ বেঞ্চে বসে কাটানোর পর শেষটিতে নামানো হয় মেয়ার্সকে। ১১ রান করে আউট হন তিনি। এর আগে পুরো জানুয়ারি মাসেও স্রেফ এক ম্যাচ খেলেন মেয়ার্স। এসএ টি-টোয়েন্টির ওই ম্যাচেও ১১ রানে থামেন তিনি। 

ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ও জাতীয় দলের হয়ে দুই মাসে স্রেফ দুটি ম্যাচ খেলায় মাঠে নামার জন্য উদগ্রীব ছিলেন মেয়ার্স। দুই দিন আগে বাংলাদেশে এসে দ্রুতই ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে তার আনন্দ যেন আর ধরে না।  


“প্রথম যখন শুনলাম যে বিপিএল খেলব, খুবই উচ্ছ্বসিত ছিলাম। কয়েকটি কারণ আছে, এর মধ্যে একটি হলো খেলতে পারা। কয়েক সপ্তাহ ধরে সফরের ওপরই আছি, কিন্তু খেলতে পারছি না। গত ছয় সপ্তাহে আমি স্রেফ দুটি ম্যাচ খেলেছি। তাই এখানে নিজের সামর্থ্য মেলে ধরতে পেরে খুবই খুশি।”

তিনটি করে চার-ছক্কায় মেয়ার্সের ৪৮ রানের সঙ্গে মুশফিকুর রহিম ৩২ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেললে ১৮৩ রানে পৌঁছায় বরিশালের স্কোর। পরে সিলেট স্রেফ ৪০ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ঝড়ো ফিফটি করেন আরিফুল হক ও বেনি হাওয়েল। 

চট্টগ্রামে আগের ম্যাচগুলোতেও মিলেছে বড় রানের দেখা। একটি বাদে সবগুলো ম্যাচেই ১৬০ ছাড়িয়েছে দলীয় স্কোর। তিনি যদিও এবারের বিপিএলে প্রথম ম্যাচ খেললেন কেবল, তবে চট্টগ্রামের উইকেট কতটা ব্যাটিং সহায়ক, সেটা তো তিনি জানেনই। চতুর্থ ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করে ম্যাচ তো আর এমনি জেতাতে পারেননি!

তার কথাতেও ফুটে উঠল, এই ২২ গজ ব্যাটসম্যানদের কতটা কাছের বন্ধু।


“আমার মতে, এটি ভালো ব্যাটিং উইকেট। কিছুটা মন্থর তবে আউটফিল্ড খুব গতিময়। কিছুটা সময় নিয়ে এখানে টাইমিং করে মারতে হবে। শটের যথাযথ মূল্য পাওয়া যায় এখানে। অন্যান্য মাঠে হয়তো তুলনামূলক বেশি শক্তি ব্যবহার করতে হবে। এখানে ব্যাটিং খুব উপভোগ করি আমি।”