সাকিব-মেহেদির ঝড়ো ফিফটি, তাহিরের ৫ উইকেট

রান পাহাড় গড়ে খুলনা টাইগার্সকে ৭৮ রানে হারাল রংপুর রাইডার্স।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2024, 04:16 PM
Updated : 13 Feb 2024, 04:16 PM

শুরুর ধাক্কা সামলে পাল্টা আক্রমণ করলেন সাকিব আল হাসান। দারুণ সঙ্গ দিলেন শেখ মেহেদি হাসান। দুজনই করলেন ঝড়ো ফিফটি। পরে খুলনা টাইগার্সের ইনিংস যেন একাই শেষ করে দিলেন ইমরান তাহির। এতে রংপুর রাইডার্স পেল বড় জয়।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রংপুরের জয় ৭৮ রানে। ২২০ রানের লক্ষ্যে ১০ বল বাকি থাকতেই ১৪১ রানে গুটিয়ে গেছে খুলনা।

রংপুরের টানা ষষ্ঠ জয় এটি। সব মিলিয়ে নয় ম্যাচে সপ্তম জয় পেল পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা দলটি। চার জয়ে আসর শুরু করা খুলনা হারল টানা চার ম্যাচ। টেবিলের পাঁচ নম্বরে তাদের অবস্থান।

বেশ কিছু দিন ধরে চোখের সমস্যায় ভোগা সাকিব এদিন খেলেন ৬৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। ৩১ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ৬টি করে চার-ছক্কায়। পরে বল হাতেও তিনি নেন ২ উইকেট। ব্যাটিং অর্ডারে পদোন্নতি পেয়ে চার নম্বরে নামা মেহেদির ব্যাট থেকে আসে ৬০ রান।

তবে ম্যাচের নায়ক তাহির। খুলনার ব্যাটিং অর্ডার গুঁড়িয়ে দিয়ে ২৬ রানে তিনি ৫ উইকেট। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে পাঁচশ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে পরে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জেতেন তিনি।

রান তাড়ায় খুলনাকে ম্যাচে রাখেন এবারের আসরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা অ্যালেক্স হেলস। অন্য প্রান্তে তেমন সহায়তা পাননি তিনি। তৃতীয় ওভারে সাকিবের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে ছক্কা মেরে পরের বলেই এলবিডব্লিউ হন এভিন লুইস।

পরের ওভারে হাসান মাহমুদের বলে তিনটি চার মারেন হেলস। সাকিবের বলেও মারেন আরেকটি বাউন্ডারি। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে তাহিরের ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারিতে মিড অফে ধরা পড়েন খুলনার অধিনায়ক এনামুল হক।

থামেননি হেলস। সপ্তম ওভারে সাকিবকে পরপর দুই বলে ছক্কায় ওড়ান ইংলিশ ওপেনার। পরের ওভারে তাহিরের শিকার আফিফ হোসেন। বড় শটের খোঁজে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

অন্যদের আসা-যাওয়ার মাঝেই নবম ওভারে হাসানকে ছক্কা মেরে স্রেফ ২৪ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করেন হেলস। এরপর অবশ্য বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি।

দ্বাদশ ওভারে হেলসকে ফিরিয়ে খুলনার জয়ের আশা প্রায় শেষ করে দেন তাহির। একইসঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে পূর্ণ করেন পাঁচশ উইকেট। এই মাইলফলক ছোঁয়া চতুর্থ বোলার তিনি। আগের তিন জন ডোয়াইন ব্রাভো, রাশিদ খান ও সুনিল নারাইন।

এরপর লুক উড, নাসুম আহমেদদের ক্যামিও ইনিংসে শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমে।

ম্যাচের প্রথমভাগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে হতাশ করেন রংপুরের দুই ওপেনার। ইংল্যান্ডের বাঁহাতি পেসার উডের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে বোল্ড হন রনি তালুকদার। পরের ওভারে একই ধরনের ডেলিভারিতে একই পরিণতি হয় রিজা হেন্ড্রিকসের।

তবে দলের ওপর চাপ আসতে দেননি তিন নম্বরে নামা সাকিব। তৃতীয় ওভারে নাহিদুল ইসলামের বলে পরপর দুই ছক্কা মারেন তিনি। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে তিনি ঝড় বইয়ে দেন নাসুমের ওপর। তিন ছক্কা ও দুই চারে ওই ওভার থেকে নেন ২৬ রান।

পরের ওভারে বাজতে পারত সাকিবের বিদায়ঘণ্টা। মুকিদুল ইসলামের বলে ডিপ ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ ছাড়েন নাহিদ রানা। পরের দুই বলে চার মেরে মুকিদুলের হতাশা আরও বাড়ান মেহেদি।

নাহিদের বলে চমৎকার স্ট্রেইট ড্রাইভে স্রেফ ২০ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন সাকিব। বিপিএলে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটি এটি। গত আসরে ১৯ বলে ফিফটি করেছিলেন রনি।

দশম ওভারে ফের আক্রমণে আসেন নাসুম। প্রথম বলে প্যাডেল সুইপ করে ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারি মারেন মেহেদি। পরে সাকিব মারেন জোড়া চার। শেষ বলে মেহেদি ছক্কা মারলে ওই ওভারেও ২৬ রান দেন নাসুম।

নাহিদুলের পরের ওভারে নিজের ষষ্ঠ ছক্কা মারেন সাকিব। মেহেদির ব্যাট থেকে আসে একটি করে চার ও ছক্কা। এগার ওভারে রংপুরের স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ১৩২ রান।

দ্বাদশ ওভারে সাকিবকে থামান উড। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে ফুল লেংথ ডেলিভারিতে কভারে ক্যাচ দেন রংপুরের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। তার বিদায়ে ভাঙে ৪৮ বলে ১০৯ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি।

রানের গতি কমতে দেননি মেহেদি। আফিফের ওভারে ১ চার ও ২ ছক্কায় নেন ১৮ রান। ২৮ বলে পূর্ণ করেন নিজের ফিফটি। তাকে ফেরান নাসুম। ছক্কার চেষ্টায় ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন মেহেদি। ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৩৬ বলে তিনি করেন ৬০ রান।

শেষ দিকে ক্যামিও ইনিংস খেলেন নুরুল হাসান সোহান। তার ৩ চার ও ২ ছক্কায় ১৩ বলে ৩২ রানের ইনিংসে দুইশ পেরোয় রংপুর।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ২১৯/৫ (রনি ৫, হেন্ডরিকস ৪, সাকিব ৬৯, মেহেদি ৬০, নিশাম ১৩, সোহান ৩২*, প্রিটোরিয়াস ১৭*; নাহিদুল ৪-০-৫০-০, উড ৪-০-১৯-৩, নাহিদ ৪-০-৩৩-১, নাসুম ৩-০-৫৫-১, মুকিদল ৪-০-৪১-০, আফিফ ১-০-১৮-০)

খুলনা টাইগার্স: ১৮.২ ওভারে ১৪১ (লুইস ১১, হেলস ৬০, এনামুল ৫, আফিফ ১১, হাবিবুর ১৩, আকবর ০, নাহিদুল ০, উড ২০, নাসুম ১৭, মুকিদুল ১*, নাহিদ ১; প্রিটোরিয়াস ২-০-১৯-০, মেহেদি ২-০-১৩-১, সাকিব ৩.২-০-৩০-২, হাসান ৩-০-২৯-১, তাহির ৪-০-২৬-৫, নিশাম ২-০-৫-১, রিপন ২-০-১৯-০)

ফল: রংপুর রাইডার্স ৭৮ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: ইমরান তাহির