কামিন্দু মেন্ডিসের ঝড় ছাপিয়ে আফগানিস্তানের রুদ্ধশ্বাস জয়

শেষ ওভারে আম্পায়ারদের একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2024, 05:29 PM
Updated : 21 Feb 2024, 05:29 PM

পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচের ভাগ্য গড়াল শেষ ওভারে। সেখানে রোমাঞ্চ, উত্তেজনা আর নাটকীয়তার কমতি হলো না। সিরিজে প্রথমবার সুযোগ পাওয়া কামিন্দু মেন্ডিস জাগালেন দারুণ এক জয়ের আশা। কিন্তু অল্পের জন্য পারলেন না তিনি। রুদ্ধশ্বাস জয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াল আফগানিস্তান।

ডাম্বুলা রানগিরি ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে বুধবার তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কাকে ৩ রানে হারিয়েছে আফগানরা। ২১০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় স্বাগতিকরা করতে পেরেছে ২০৬ রান।

শেষ ওভারে লঙ্কানদের দরকার ছিল ১৯ রান। পেসার ওয়াফাদার মোমান্দের প্রথম তিন বলের মধ্যে দুটি চার মারেন কামিন্দু মেন্ডিস। চতুর্থ বল ছিল ব্যাটসম্যানের কোমরের বেশ ওপরে, মেন্ডিস ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি, আম্পায়াররা ‘নো’ বলও ডাকেননি। খুব হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায় মেন্ডিসকে।

পরে রিপ্লেতে দেখা যায়, পরিষ্কার ‘নো’ বল ছিল।

এরপর ওয়াইড থেকে আসে একটি রান। ২ বলে চাই ১০। পঞ্চম বল ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে খেলে কোনো রান নেননি মেন্ডিস। শেষ বলে তার ছক্কা যথেষ্ট হয়নি।

বিফলে গেছে মেন্ডিসের ৩৯ বলে অপরাজিত ৬৫ রানের ইনিংস। তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি গড়া ৭ চার ও ২ ছক্কায়।

এই সংস্করণে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আট ম্যাচে আফগানিস্তানের তৃতীয় জয় এটি। তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা।

লঙ্কানদের বিপক্ষে দলকে প্রথম দুইশ রানের সংগ্রহ এনে দিতে ব্যাট হাতে বড় অবদান রাখেন রাহমানউল্লাহ গুরবাজ। ৪৩ বলে ৭ চার ও এক ছক্কায় ৭০ রানের ইনিংস খেলেন ম্যাচের সেরা তিনিই। ২২ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৪৫ রান করেন হাজরাতউল্লাহ জাজাই। দুজনের বিস্ফোরক উদ্বোধনী জুটিতে ৮৮ রান আসে ৪৪ বলে।

শ্রীলঙ্কাকে ভালো শুরু এনে দেন পাথুম নিসাঙ্কা। কিন্তু হ্যামস্ট্রিংয়ে টানা লাগায় ৩০ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৬০ রান করে মাঠ ছাড়েন তিনি। এরপর কামিন্দু মেন্ডিস চেষ্টা করলেও তা যথেষ্ট হলো না।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে গুরবাজ ও জাজাইয়ের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় আফগানিস্তান। চার ওভারেই স্পর্শ করে দলের পঞ্চাশ। পাওয়ার প্লেতে আসে ৭২ রান।

গুরবাজকে ২২ রানে ফেরানোর সুযোগ এসেছিল, ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন আকিলা দানাঞ্জয়া। তিনিই পরে শুরুর জুটি ভাঙেন জাজাইকে এলবিডব্লিউ করে। শ্রীলঙ্কা সাফল্য পায় রিভিউ নিয়ে।

২৮ বলে ফিফটি করে এগিয়ে যান গুরবাজ। পরে আরেকবার জীবন পান তিনি ৬০ রানে। এবার ক্যাচ নিতে পারেননি সাদিরা সামারাউইক্রামা।

বিপজ্জনক গুরবাজকে থামান ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। ইব্রাহিম জাদরান ভালো করতে পারেননি। চারে নেমে ২৩ বলে ৩ চারে ৩১ রান করেন আজমাতউল্লাহ ওমারজাই।

১৯তম ওভারে ওমারজাই ও কারিম জানাতকে পরপর দুই বলে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান মাথিশা পাথিরানা। সেই বল ঠেকান অভিষিক্ত মোহাম্মাদ ইসহাক। ইনিংসের শেষ দুই বলে তার ছক্কা ও চারে দুইশ ছাড়ায় আফগানিস্তানের সংগ্রহ।

ইসহাক ৮ বলে ১৬ ও মোহাম্মাদ নাবি ১৪ বলে করেন ১৬ রান।

লক্ষ্য তাড়ায় শ্রীলঙ্কার শুরুটাও হয় বেশ ভালো। প্রথম ৫ ওভারে আসে ৪৪ রান। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ফারিদ আহমেদের প্রথম তিন বলে দুটি চার ও একটি ছক্কা মারেন নিসাঙ্কা।

ওই ওভারেই কুসাল মেন্ডিসের (১৩ বলে ১৬) বিদায়ে ৩৬ বলে ৬৪ রানের শুরুর জুটি ভাঙে শ্রীলঙ্কার। মেন্ডিসের ক্যাচ নিতে গিয়ে মাথার পেছনে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন শারাফউদ্দিন আশরাফ। ‘কনকাশন সাব’ হিসেবে নামেন কাইস আহমাদ।

সিরিজে প্রথমবার খেলতে নেমে শূন্য রানে ফেরান কুসাল পেরেরা। এক প্রান্তে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে নিসাঙ্কা ফিফটি করেন ২৭ বলে। খানিক পর তিনি ‘রিয়ায়ার্ড হার্ট’ হয়ে মাঠ ছেড়ে যান ৬০ রানে।

চার নম্বরে নেমে ১১ বলে ১৩ রান করে ফেরেন হাসারাঙ্গা। রানের গতিতে দম দেন এরপর সামারাউইক্রামা ও কামিন্দু মেন্ডিস। সামারাউইক্রামাকে (১২ বলে ২৩) ফিরিয়ে ৩৩ বল ৫৩ রানের জুটি ভাঙেন কাইস।

শেষ পাঁচ ওভারে শ্রীলঙ্কার দরকার ছিল ৬৩ রান। আগের ম্যাচের নায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস এবার বিদায় নেন ৪ রান করেই।

সপ্তদশ ওভারে নুর আহমাদকে পরপর চার ও ছক্কা মেরে শেষ বলে ক্যাচ তুলে দেন মেন্ডিস। কিন্তু শর্ট ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ মুঠোয় জমাতে ব্যর্থ হন মোমান্দ।

শেষ তিন ওভারে ৪৬ রানের সমীকরণে অষ্টাদশ ওভারে কারিম জানাতের প্রথম ও শেষ বলে চার মেরে মেন্ডিস প্রথম ফিফটি পূর্ণ করেন ৩২ বলে।

শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ৩৬। ১৯তম ওভারে ওমারজাইকে ছক্কা ও চারের পর দ্বিতীয় রানের চেষ্টায় রান আউট হয়ে যান দাসুন শানাকা। ওভারের শেষ বলে আকিলা দানাঞ্জয়া চার মেরে কমান ব্যবধান। এরপর শেষ ওভারের নাটকীয়তা ও আফগানিস্তানের জয়ের হাসি।

এই সফরে একমাত্র টেস্টে হারের পর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হয় আফগানিস্তান। এরপর হারে প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে। শেষটা অবশ্য জয় দিয়ে করতে পারল তারা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ২০৯/৫ (জাজাই ৪৫, গুরবাজ ৭০, ইব্রাহিম ১০, ওমারজাই ৩১, নাবি ১৬*, জানাত ০, ইসহাক ১৬*; ম্যাথিউস ২-০-২১-০, থুসারা ৪-০-৪৮-০,পাথিরানা ৪-০-৪২-২, দানাঞ্জয়া ৪-০-৩৭-২, হারাসাঙ্গা ৪-০-৩৫-১, শানাকা ২-০-১৬-০)

শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ২০৬/৬ (নিসাঙ্কা ৬০ আহত অবসর, কুসাল মেন্ডিস ১৬, পেরেরা ০, হাসারাঙ্গা ১৩, সামারাউইক্রামা ২৩, কামিন্দু মেন্ডিস ৬৫*, ম্যাথিউস ৪, শানাকা ১৩, দানাঞ্জয়া ৪*; মোমান্দ ৩-০-৩৫-০, ওমারজাই ৪-০-৪২-০, ফারিদ ২-০-৩০-১, নুর ৪-০-৩৭-১, নাবি ৪-০-৩৫-২, কাইস ২-০-১৭-১, জানাত ১-০-৯-০)

ফল: আফগানিস্তান ৩ রানে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয়ী শ্রীলঙ্কা

ম্যান অব দা ম্যাচ: রাহমানউল্লাহ গুরবাজ

ম্যান অব দা সিরিজ: ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা