তামিমের মতে, ‘হৃদয়ের ইমপ্যাক্ট ছিল বিশাল ও অবিশ্বাস্য’

রানের তালিকায় তামিম সবার ওপরে থাকলেও তিনি নিজে বললেন হৃদয়ের প্রভাববিস্তারি পারফরম্যান্সের কথা, বরিশাল অধিনায়ক আলাদা করে তুলে ধরলেন শরিফুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসানের দারুণ পারফরম্যান্সও।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2024, 03:18 AM
Updated : 2 March 2024, 03:18 AM

নতুন ঠিকানায় পাড়ি জমালেও বিপিএলে তাওহিদ হৃদয়ের গত আসরের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং এবার আরও বেশি কার্যকর তিনি। ফাইনালে তেমন কিছু করতে না পারলেও আগের ম্যাচগুলোতে চেনা রূপে বড় অবদান রাখেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের তরুণ ব্যাটসম্যান। রানের তালিকায় এগিয়ে থাকা তামিম ইকবালের মতে, কুমিল্লার হয়ে হৃদয়ের প্রভাব ছিল অনেক বেশি। 

গত বিপিএল দিয়ে হৃদয়ের ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায়ের শুরু। সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে ওই আসরে ১৪০.৪১ স্ট্রাইক রেটে ৪০৩ রান করেন ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। একই ধারায় ব্যাট করে এবার নিজেকে আরও ছাড়িয়ে যান হৃদয়। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিসহ ১৪ ইনিংসে ১৪৯.৫১ স্ট্রাইক রেটে তিনি করেন ৪৬২ রান।

গতবারের পারফরম্যান্সের পর এবার কোটি টাকা ছাড়ানো পারিশ্রমিকে তাকে দলে টানে কুমিল্লায়। দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে ৪১ বলে ৪৭ রানের ইনিংসে শুরু করেন এবারের যাত্রা। পরের পাঁচ ম্যাচে ৩০ পেরিয়ে যান আরও দুইবার। কিন্তু পঞ্চাশের দেখা পাচ্ছিলেন না।

অবশেষে দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে ৫৭ বলে ১০৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে শুরু করেন তিনি। দলকে প্রায় একা হাতে জেতানো ব্যাটিংয়ে ৮ চারের সঙ্গে সেদিন ৭টি ছক্কা মারেন হৃদয়। 

এক ম্যাচ পর খুলনা টাইগার্সের ১৬৪ রানের জবাবে আবারও ঝড় তোলেন তরুণ ব্যাটসম্যান। ৭টি করে চার-ছক্কায় তিনি খেলেন ৪৭ বলে ৯১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। দুই ম্যাচেই বলতে গেলে একাই তাড়া নিয়ন্ত্রণ করেন হৃদয়। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

পরে কুমিল্লাকে ফাইনালে তোলার ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ১৮৬ রান তাড়ায় লিটন কুমার দাসের সঙ্গে চমৎকার এক জুটি গড়েন হৃদয়। তিন নম্বরে নেমে ৪৩ বলে ৬৪ রানের ইনিংসে চোখধাঁধানো কিছু শট খেলেন তরুণ ব্যাটসম্যান।

শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে বরিশালের বিপক্ষে তেমন কিছু করতে পারেননি তিনি। তবে সব মিলিয়ে এবারের আসরে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৪টি ছক্কা। বিপিএলের এক আসরে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।

ফাইনালে ৩৯ রানের ইনিংস খেলে হৃদয়কে ছাড়িয়ে আসরের সর্বোচ্চ রান স্কোরার হয় যান তামিম। তবে বরিশাল অধিানায়ক নিজেই বললেন, কুমিল্লার তরুণ ব্যাটসম্যানের পারফরম্যান্স কতটা প্রভাববিস্তারি ছিল।

“তাওহিদ হৃদয় মনে হয়, টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তবে তার ইম্প্যাক্ট ছিল বিশাল। ও যেদিন রান করেছে, কুমিল্লার হয়ে ইম্প্যাক্ট অবিশ্বাস্য ছিল।”

হৃদয় ছাড়াও এবার ব্যাটে-বলে তামিমের নজর কেড়েছেন শরিফুল ইসলাম। সাকিব আল হাসান যথারীতি অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ছিলেন উজ্জ্বল।

দুর্দান্ত ঢাকার ভরাডুবির আসরে শরিফুল ছিলেন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। কুমিল্লার বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচে ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক করেন তরুণ বাঁহাতি পেসার। টুর্নামেন্টের বাকি অংশে এই বাঁহাতি পেসার পারদর্শিতা দেখান নতুন বলে। অসাধারণ সুইং বোলিংয়ের প্রদর্শনী মেলে ধরে প্রায় প্রতি ম্যাচে ইনিংসের শুরুতে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরেন তিনি। সব মিলিয়ে তার শিকার ১২ ম্যাচে ২২ উইকেট। এর মধ্যে ১৩টিই পাওয়ার প্লেতে।

তামিমের চোখে টুর্নামেন্টে উল্লেখযোগ্য পারফর্মারদের ওপরের দিকেই থাকবেন শরিফুল।  

“পারফরম্যান্সের কথা বললে কয়েকটি নাম আসবে। যদি শরিফুলের কথা চিন্তা করেন, পুরো টুর্নামেন্টে সে সত্যিই দুর্দান্ত বোলিং করেছে। দূর্ভাগ্যবশত তার দল হয়তো ভালো করেনি, কিন্তু সে খুব ভালো বোলিং করেছে।”

চোখের সমস্যার কারণে শুরুর দিকে ব্যাটিংয়ে ভুগতে থাকা সাকিব পরে মানিয়ে নেন দারুণ দক্ষতায়। স্রেফ ২০ বলে এবারের আসরের দ্রুততম ফিফটিসহ ১৫৮.৩৮ স্ট্রাইক রেটে ২৫৫ রান করেন রংপুর রাইডার্সের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। বল হাতেও তিনি নেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট। 

তামিম তুলে ধরলেন তাদের সবার কথাই।

“সাকিব ব্যাটে-বলে ভালো করেছে। শুরুটা হয়তো ভালো ছিল না। কিন্তু মাঝের দিকে ও শেষে সে খুব ভালো করেছে। এরকম অনেকেই আছে যারা ভালো করেছে। তবে হৃদয় ও শরিফুলের কথা আমার বলতেই হবে। হৃদয়ের কিছু ইনিংস অবিশ্বাস্য ছিল।”