ম্যাসেঞ্জারে সতীর্থকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন এই স্পিনার, নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার রায়ের বিবরণীতে পুরো ঘটনা প্রকাশ করেছে আইসিসি।
Published : 11 Feb 2025, 09:22 PM
ফিক্সিং করতে সতীর্থকে প্রস্তাব দেওয়া, ধরা পড়ে সেটিকে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া, আত্মপক্ষ সমর্থনে ভুয়া প্রমাণ তৈরি করা- এত কিছু করেও কোনো লাভ হয়নি সোহেলি আক্তারের। বরং নিজের বিপদই আরও বাড়িয়েছেন তিনি। দুর্নীতিতে জড়িত থাকার দায়ে শেষ পর্যন্ত বড় শাস্তিই পেয়েছেন বাংলাদেশের অফ স্পিনার।
দুর্নীতিবিরোধী বিধির পাঁচটি ধারা ভঙ্গের দায়ে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন সোহেলি। শাস্তির ঘোষণার পাশাপাশি সবসময়ের মতো রায়ের পূর্ণাঙ্গ বিবরণীও প্রকাশ করেছে তারা।
মূল ঘটনা ২০২৩ সালের আইসিসি উইমেন'স টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগের। সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুক মেসেঞ্জারে সতীর্থ এক বন্ধু ক্রিকেটারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সোহেলি।
সেই ক্রিকেটারটি লতা মন্ডল বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল আগে।
ওই ক্রিকেটারকে ভয়েস নোট দিয়ে সোহেলি বলেন, 'কাজিনের' কথায় যোগাযোগ করছেন তিনি। ওই কাজিন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বেটিং করে থাকে। কাজিন সোহেলিকে বলেন, তিনি যেন ওই ক্রিকেটারকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পেস বোলিংয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে হিট আউট হয়ে যেতে বলেন।
এটি সফলভাবে করতে পারলে ওই কাজিনের আয় করা অর্থ থেকে ২০ লাখ টাকা পাবেন ওই ক্রিকেটার। এমনকি ২০ লাখ যদি যথেষ্ট না হয়, তাহলে আরও কাজিন আরও বেশি টাকা দিতেও রাজি বলেন সোহেলি।
ফিক্সিংয়ের এই প্রস্তাব দিয়ে সোহেলি ওই ক্রিকেটারকে বলেন, রাজি হোক বা না হোক পুরোটা তাদের মধ্যে গোপন থাকবে। ভয়েস নোটে তিনি আরও বলেন, মেসেজগুলো তিনি মুছে ফেলবেন, যেন মনে হয় যে, এমন কোনো আলোচনা হয়নি। পরে সত্যিই সেগুলো মুছে দেন তিনি।
তাৎক্ষণিকভাবে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেন ওই ক্রিকেটার। আইসিসির নীতিমালা মেনে তিনি সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়ে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী বিভাগকে (আকসু) জানান। সোহেলি নিজের মেসেজগুলো মুছে দেওয়ার আগেই সেগুলো ফরোয়ার্ড করে রাখেন ওই ক্রিকেটার। পরে আকসুকে সেগুলো দেন তিনি।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে আকসুতে তলব করা হলে সোহেলি স্বীকার করে নেন যে, ওই ক্রিকেটারকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। তবে এসময় আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি বলেন যে, এক বন্ধুর সঙ্গে 'চ্যালেঞ্জ' হিসেবে এই কাজ করেছেন। যেখানে তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেলেও তাতে সাড়া দেবেন না।
আত্মপক্ষ সমর্থনে বন্ধুর সঙ্গে কথোপকথনের স্ক্রিনশট আকসুতে জমা দেন সোহেলি। তিনি দাবি করেন, এই কথোপকথন ম্যাচের আগে (১৪ ফেব্রুয়ারির আগে) করা। তবে মেটাডাটা পরীক্ষা করে আকসু নিশ্চিত হয়, স্ক্রিনশটের কথোপকথন ১৪ ফেব্রুয়ারির পরে তৈরি করা।
পরে সোহেলি স্বীকার করেন, ভিন্ন দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তিনিই এই ভুয়া কথোপকথন তৈরি করেছেন। তবে তখনও দাবি করেন, বন্ধুর সঙ্গে এমন কথা হয়েছিল তার। কিন্তু ওই ক্রিকেটার ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব প্রকাশ করে দেওয়ায় বন্ধুর কথামতো তিনি ওই মেসেজগুলো আগেই মুছে ফেলেছেন।
ওই সময় তিনি জানান, এক বছরের বেশি সময় ধরে ওই বন্ধুর সঙ্গে তার কথাবার্তা হচ্ছে এবং ২০২২ সালে তার সন্দেহ হয়, ওই বন্ধু হয়তো ক্রিকেটে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
সবকিছু বিচার-বিবেচনা করে দীর্ঘ তদন্ত প্রক্রিয়া শেষে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী নীতিমালার পাঁচটি ধারা ভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হয় সোহেলির বিরুদ্ধে।
প্রথম ধারাটি ভঙ্গ করলে অন্তত পাঁচ বছর ও সর্বোচ্চ আজীবন নিষেধাজ্ঞার শাস্তির কথা বলা আছে আইসিসির আইনে। এছাড়া আরও ধারা লঙ্ঘনের ক্ষেত্রেও পাঁচ বছরের শাস্তির উল্লেখ আছে।
শাস্তি ঘোষণার ক্ষেত্রে সোহেলির অতীতের ভালো ডিসিপ্লিনারি রেকর্ডের বিষয়টিও বিবেচনায় রেখেছে আইসিসি। পরে ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে (সোমবার) সব অভিযোগ স্বীকার করে শাস্তি মেনে নেন সোহেলি। তাই এই বিষয়ে আর পূর্ণাঙ্গ শুনানির প্রয়োজন নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে আইসিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
২০১৩ সালে বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় সোহেলির। ২টি ওয়ানডে ও ৫টি টি-টোয়েন্টি খেলে দল থেকে বাদ পড়ে যান তিনি। ২০২২ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব দিয়ে প্রায় সাড়ে ৮ বছর পর দলে ফেরেন তিনি।
ফেরার পর দ্বিতীয় ম্যাচেই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ-সেরা নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ঘরের মাঠে এশিয়া কাপেও খেলেন তিনটি ম্যাচ। ওই টুর্নামেন্টের পর আর জাতীয় দলে দেখা যায়নি অফ স্পিনারকে।
বয়স ৩৬ ছাড়িয়েছে সোহেলির। পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা পাওয়ায় তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ বলে দেওয়াই যায়।