প্রথম পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন ফরচুন বরিশাল।
Published : 23 Feb 2024, 04:45 PM
জিতলেই প্লে-অফ নিশ্চিত, হারলেও অবশ্য সুযোগ থাকত; তবে হয়ে যেত জটিল। এমন সমীকরণে খেলতে নেমে ভাগ্য নিজেদের হাতেই রাখল ফরচুন বরিশাল। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে সেরা চারের টিকেট কাটল তামিম ইকবারের দল।
দলের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তামিম। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৪৮ বলে ৬৬ রান করেছেন অভিজ্ঞ ওপেনার। চলতি আসরে তার দ্বিতীয় পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে বরিশাল জিতেছে ৬ উইকেটে।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার ১৪১ রানের লক্ষ্য ২ বল বাকি থাকতে ছুঁয়েছে তামিমের দল।
এই জয়ে চতুর্থ দল হিসেবে প্লে-অফের টিকেট নিশ্চিত হয়েছে বরিশালের। তবে ১২ ম্যাচ শেষে ৭ জয়ে পয়েন্ট টেবিলে তাদের অবস্থান তৃতীয়। সমান জয়ে নেট রান রেটে পিছিয়ে থাকায় চট্টগ্রাম আছে চার নম্বরে।
আগামী সোমবার এলিমিনেটর ম্যাচে মুখোমুখি হবে বরিশাল ও চট্টগ্রাম। প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচ হারলেও সেরা দুইয়ে থাকা আগেই নিশ্চিত করেছিল কুমিল্লা। প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ টেবিলের শীর্ষে থাকা রংপুর রাইডার্স।
বরিশালের এই জয়ে পুরোপুরি নিয়মরক্ষায় পরিণত হয়েছে খুলনা টাইগার্স ও সিলেট স্ট্রাইকার্সের মধ্যকার প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচটি। বরিশাল বড় ব্যবধানে হারলে গাণিতিক সমীকরণে কিছুটা হলেও বেঁচে থাকত খুলনার প্লে-অফের সম্ভাবনা।
দৃশ্যমান সবুজ ঘাস থাকলেও আগের রাতের বৃষ্টি ও সকাল থেকে তেমন রোদের দেখা না মেলায় শুক্রবারের উইকেট ছিল কিছুটা স্যাঁতস্যাঁতে। তা বুঝতে পেরে টস জিতে কুমিল্লাকে ব্যাটিংয়ে পাঠান তামিম। বোলাররাও দারুণভাবে কাজে লাগান উইকেটের সাহায্য।
কুমিল্লার ওপরের সারির ব্যাটসম্যানরা কেউই পারেননি তেমন কিছু করতে। শেষ দিকে জাকের আলির ১৬ বলে ৩৮ রানের টর্নেডো ইনিংসে লড়াই করার পুঁজি পায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
উইকেটের আচরণ মাথায় রেখে এটিকে যথেষ্ট মনে করছিল কুমিল্লা। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক লিটন কুমার দাস তো বলেই দিলেন, ‘১৪০ রান করার পর ভাবিনি যে, হেরে যাব।’
অধিনায়কের ইনিংসে ভর করে সেটাই করে দেখিয়েছে বরিশাল। এই সংস্করণে ৪৮তম ফিফটিতে এবারের বিপিএলে রানের তালিকায় এক নম্বরে উঠে গেছেন তামিম। দলের প্লে-অফ নিশ্চিত করার ম্যাচে সেরার স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি।
রান তাড়ায় বরিশালের শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না। দ্বিতীয় ওভারে তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পড হন আহমেদ শেহজাদ। ছন্দ পেতে কিছুটা সময় লেগে যায় তিন নম্বরে নামা কাইল মেয়ার্সের। ৫ ওভারে বরিশাল করতে পারে স্রেফ ২১ রান।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মইন আলির বলে বাউন্ডারি মারেন মেয়ার্স। এক বল পর ইনিংসের প্রথম ছক্কা ওড়ান তামিম। পরের দুই ওভারে সুনিল নারাইন ও আন্দ্রে রাসেলকে চার মারেন তিনি।
পরে অফ স্পিনার এনামুল হকের শর্ট বলে পুল করে ছক্কা মারেন ক্যারিবিয়ান তারকা। রাসেলের বলে পান সৌভাগ্যজনক ছক্কা; ডিপ মিড উইকেট সীমানায় বল হাতে জমিয়েছিলেন মইন, তবে আগেই কুশনে পা দিয়ে ফেলায় ছয় রান যোগ হয় বরিশালের ইনিংসে।
দ্বাদশ ওভারে আক্রমণে এসে ৬৪ রানের জুটি ভাঙেন মুশফিক হাসান। বাউন্সারে পুল করার চেষ্টায় টাইমিংয়ে গড়বড় হয়ে যায় মেয়ার্সের। অনেকটা পথ দৌড়ে তরুণ পেসার নিজেই নেন ক্যাচ। ২৫ বলে ২৫ রান করেন মেয়ার্স।
চার নম্বরে নেমে মুশফিকুর রহিম অকেক্ষণ ক্রিজে থেকেও ছন্দ পাননি। ফলে কিছুটা চাপে পড়ে বরিশাল। অন্য প্রান্তে রানের চাহিদা মিটিয়ে খেলার চেষ্টা করেন তামিম। ম্যাথু ফোর্ডের বলে দারুণ কাট শটে ছক্কা মেরে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন তিনি। ওই ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারিতে রানের চাপ কমান বরিশাল অধিনায়ক।
পরের দুই ওভারে লাগাম টেনে ধরে কুমিল্লা। স্রেফ ৪ রান দেন নারাইন। এরপর মুশফিকুর রহিমকে ফেরান মুশফিক হাসান; ব্যাক অব লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড হন ২৪ বলে স্রেফ ১৭ রান করা মুশফিকুর রহিম।
রাসেলের করা অষ্টাদশ ওভারে ইয়র্কার ধরনের ডেলিভারিতে ছক্কা হাঁকান তামিম। পরের বলেও ছক্কার খোঁজে ওয়াইড লং অনে ক্যাচ দেন তিনি। শেষ হয় তার ৬ চার ও ৩ ছক্কার ইনিংসের। ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলেই ছক্কা মারেন সৌম্য সরকার।
শেষ ওভারে ৮ রানের সমীকরণে মুশফিক হাসানের প্রথম বলে ছক্কা মারেন মাহমুদউল্লাহ। পরের দুই বল হয় ডট। চতুর্থ বলে বাউন্সার ডেলিভারি ব্যাটে লাগাতে পারেননি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। হেলমেটে লেগে পয়েন্টের দিকে যেতেই দৌড়ে ১ রান নেন তারা। পরে ওভার থ্রো থেকে আরও এক রানে নিশ্চিত হয় বরিশালের জয়।
ম্যাচের প্রথমভাগে সহজে রান তুলতে পারেনি কুমিল্লা। মন্থর শুরুর পর চতুর্থ ওভারে ওবেদ ম্যাককয়ের বলে চার-ছক্কা মারেন নারাইন। তবে ওই ওভারের শেষ বলে ফিরে যান বাঁহাতি ওপেনার, ১৬ রান করতে খেলেন ১৮ বল।
পাওয়ার প্লে শেষে আক্রমণে আসেন তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় বলেই ফিরিয়ে দেন লিটনকে; পিচ করে সোজা যাওয়া ডেলিভারি ভুল লাইনে খেলে বোল্ড হন কুমিল্লা অধিনায়ক।
চার নম্বরে নামা মাহিদুল ইসলামকেও ফেরান তাইজুল। ছক্কা মারতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দেন কিপার-ব্যাটসম্যান।
পঞ্চাশের আগে ৩ উইকেট হারানো দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন হৃদয় ও মইন আলি। কিন্তু রানের গতি বাড়াতে পারেননি তারা। ২৬ বলে ২৫ রান করা হৃদয়কে ফিরিয়ে ৩৬ জুটি ভাঙেন ম্যাককয়। পরে আকিফ জাভেদের বলে ক্যাচ দেন মইন।
ষোড়শ ওভারে আক্রমণে ফেরা তাইজুলের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মারেন রাসেল। এক বল পর মারেন বাউন্ডারি। তবে তিনিও বেশি দূর যেতে পারেননি। ওভারের শেষ বলে আরেকটি বড় শটের খোঁজে বল স্টাম্পে টেনে আনেন তিনি।
একশর আগে ৭ উইকেট হারানোর পর বাকিটা পথ কুমিল্লাকে টানেন জাকের আলি। আকিফের হাফ ভলি লং অন দিয়ে ছক্কার পর ফুল লেংথ ডেলিভারি লং অফ দিয়ে মারেন বাউন্ডারি।
সাইফ উদ্দিনের পরের ওভারে প্রথম বলেই ছক্কা মারেন জাকের। পরে শেষ ওভারে ম্যাককয়ের বলে আরও দুটি ছক্কার সঙ্গে মারেন একটি বাউন্ডারি। জাকেরের ২ চার ও ৪ ছক্কার ক্যামিও ইনিংসেই আশা জাগে কুমিল্লার, শেষ পর্যন্ত যদিও তা যথেষ্ট হয়নি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৪০/৮ (নারাইন ১৬, লিটন ১২, হৃদয় ২৫, মাহিদুল ১, মইন ২৩, রাসেল ১৪, জাকের ৩৮*, ফোর্ড ০, এনামুল ৩, তানভির ০*; মেয়ার্স ৩-০-১৭-০, সাইফ উদ্দিন ৪-০-১৬-২, আকিফ ৪-০-৩২-১, ম্যাককয় ৪-০-৪০-২, তাইজুল ৩-০-২০-৩, মিরাজ ২-০-১৩-০)
ফরচুন বরিশাল: ১৯.৪ ওভারে ১৪১/৪ (তামিম ৬৬, শেহজাদ ১, মেয়ার্স ২৫, মুশফিক ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১২, সৌম্য ৬*; ফোর্ড ৩-০-২৭-০, এনামুল ৪-০-২২-১, নারাইন ৪-০-১৮-০, মইন ১-০-১৩-০, রাসেল ৪-০-৩৯-১, মুশফিক ৩.৪-০-১৯-২)
ফল: ফরচুন বরিশাল ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তামিম ইকবাল