ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে বেয়ারস্টোর দুর্দান্ত সেঞ্চুরি, অপেক্ষায় ওভারটন

হেডিংলি টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ব্যাটে-বলে লড়াইটা হলো দারুণ। নতুন বলে সুইং বোলিংয়ের অসাধারণ প্রদর্শনীতে ট্রেন্ট বোল্ট কাঁপিয়ে দিলেন ইংল্যান্ডের ব্যাটিং। দলের সামনে যখন অল্পতে গুটিয়ে যাওয়ার চোখ রাঙানি, ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে গেলেন জনি বেয়ারস্টো ও জেমি ওভারটন। একশর বেশি স্ট্রাইক রেটে বেয়ারস্টো করলেন টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। অভিষেকেই তিন অঙ্কের স্বাদ পাওয়ার দুয়ারে বোলিং অলরাউন্ডার ওভারটন।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2022, 05:47 PM
Updated : 24 June 2022, 07:03 PM

এই দুজনের রেকর্ড জুটিতে তৃতীয় টেস্টে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ইংল্যান্ড। শুক্রবার নিউ জিল্যান্ডকে ৩২৯ রানে থামিয়ে দেওয়ার পর এক পর্যায়ে ৫৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ভীষণ বিপদে পড়েছিল স্বাগতিকরা। সেখান থেকে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে তারা দিন শেষ করেছে ২৬৪ রানে। পিছিয়ে আর ৬৫ রানে।

আগের টেস্টে রান তাড়ায় অসাধারণ সেঞ্চুরিতে জয়ের নায়ক বেয়ারস্টো এবার খেলছেন ১২৬ বলে ২১ চারে ১৩০ রান নিয়ে। ২৭ রানে অবশ্য একবার জীবন পান তিনি। ১০৬ বলে ১২ চার ও ২ ছক্কায় ৮৯ রানে অপরাজিত ওভারটন। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ২২৩ বলে ২০৯।   

টেস্টে সপ্তম উইকেটে এই প্রথম দুইশ রানের জুটি পেল ইংল্যান্ড। ১৯৬০ সালে পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিমি পার্কস ও মাইক স্মিথের ১৯৭ রানের জুটি ছিল আগের রেকর্ড।

দিনের প্রথম ভাগে আলোচনায় ছিলেন আরও দুই জন। সিরিজে টানা তৃতীয় সেঞ্চুরি করেন নিউ জিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেল। দেশের মাটিতে প্রথমবার ৫ উইকেট নিয়ে সফরকারীদের সংগ্রহ বেশি বড় হতে দেননি জ্যাক লিচ।

উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো। তবে প্রথম স্পেলে বোল্ট উপহার দেন দুর্দান্ত বোলিং। বাঁহাতি পেসার দুই দিকে আদায় করে নেন মুভমেন্ট। সঙ্গে গতি তো ছিলই।

বোল্ট নিজের প্রথম চার ওভারে একে একে ফিরিয়ে দেন ইংল্যান্ডের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স লিস, জ্যাক ক্রলি ও অলিভার পোপকে। তিন জনেরই স্টাম্প এলোমেলো করে দেন তিনি।

জো রুটকে টিকতে দেননি টিম সাউদি। সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক ধরা পড়েন কিপারের গ্লাভসে। প্রথম চার ব্যাটসম্যানের কেউ যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। তখন ২১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল স্বাগতিকরা।

নেমেই আগ্রাসী শুরু করেন অধিনায়ক বেন স্টোকস। মুখোমুখি তৃতীয় বলে সাউদিকে ছক্কায় উড়িয়ে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ছক্কার সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি তার ইনিংস।

একই ওভারে জোড়া শিকার ধরেন দলে ফেরা নিল ওয়্যাগনার। স্টোকস (১৩ বলে ১৮) মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরার পর ইনসুইঙ্গারে এলবিডব্লিউ হন কিপার-ব্যাটসম্যান বেন ফোকস।

তখন ৫৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দিশাহীন ইংল্যান্ডের বিপদ আরও বাড়তে পারত, যদি ওয়্যাগনার নিজের বলে বেয়ারস্টোর ক্যাচ নিতে পারতেন।

জীবন পেয়ে বেয়ারস্টো ফিফটি পূর্ণ করেন ৫১ বলে। তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে যাওয়া ওভারটন ৬৮ বলে পঞ্চাশে পা রাখেন ওয়্যাগনারকে চার মেরে।

বোলিংয়ে ফেরা বোল্টকে বাউন্ডারিতে বেয়ারস্টো সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৯৫ বলে। আগের ইনিংসে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছিলেন তিনি স্রেফ ৭৭ বলে, ইংল্যান্ডের হয়ে যা দ্বিতীয় দ্রুততম।

এই বছরে ৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি এটি, আর ক্যারিয়ারের দশম।

সেঞ্চুরির পথে বেয়ারস্টো পূর্ণ করেন পাঁচ হাজার রানও। তৃতীয় দিন ইনিংসটি তিনি কতদূর টেনে পারেন, ওভারটন প্রথম সেঞ্চুরি পান কি-না; এসবই দেখার।   

নিউ জিল্যান্ড এর আগে দ্বিতীয় দিন শুরু করেছিল ৫ উইকেটে ২২৫ রান নিয়ে। এ দিন তারা যোগ করে আরও ১০৪ রান।

আগের দিন ৭৮ রানে অপরাজিত মিচেল আর ২ রান যোগ করতেই আউট হতে পারতেন। ডাইভ দিয়ে ক্যাচ নিতে পারেননি কিপার ফোকস।

আরেক অপরাজিত ব্যাটসম্যান টম ব্লান্ডেল ৪৫ রান নিয়ে দিন শুরু করে যোগ করতে পারেন ১০ রান। এই কিপার-ব্যাটসম্যানকে (১২২ বলে ৫৫) এলবিডব্লিউ করে ১২০ রানের জুটি ভাঙেন ম্যাথু পটস। মাইকেল ব্রেসওয়েল ফেরেন ১৩ রান করে।

এরপর অষ্টম উইকেটে সাউদির সঙ্গে ৬০ রানের জুটির পথে সেঞ্চুরি তুলে নেন মিচেল। লিচকে ছক্কায় উড়িয়ে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন তিনি ২১৩ বলে। গড়েন টেস্ট ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দেশের বাইরে তিন ম্যাচের সিরিজে প্রতিটি টেস্টে সেঞ্চুরির কীর্তি।

লাঞ্চের আগে-পরে নিজের পরপর দুই ওভারে পাঁচ বলের মধ্যে নিউ জিল্যান্ডের শেষ ৩ উইকেট তুলে নেন লিচ। বাঁহাতি এই স্পিনার টেস্টে তৃতীয়বারের মতো নেন ৫ উইকেট, ১০০ রান দিয়ে।

সাউদি ২৯ বলে করেন ৩৩ রান। ২২৮ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ১০৯ রান করেন মিচেল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে নিউ জিল্যান্ডের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও গড়েন তিনি ৪৮২ রান করে।

দিন শেষে সব আলো যদিও কেড়ে নিলেন বেয়ারস্টো ও ওভারটন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১১৭.৩ ওভারে ৩২৯ (আগের দিন ২২৫/৫) (মিচেল ১০৯, ব্লান্ডেল ৫৫, ব্রেসওয়েল ১৩, সাউদি ৩৩, ওয়্যাগনার ৪, বোল্ট ০*; ব্রড ২৩-৮-৬২-৩, পটস ২৬-১১-৩৪-১, ওভারটন ২৩-২-৮৫-১, লিচ ৩৮.৩-৮-১০০-৫, রুট ৭-০-৩০-০)

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৪৯ ওভারে ২৬৪/৬ (লিস ৪, ক্রলি ৬, পোপ ৫, রুট ৫, বেয়ারস্টো ১৩০*, স্টোকস ১৮, ফোকস ০, ওভারটন ৮৯*; বোল্ট ১৬-৩-৭৩-৩, সাউদি ১৭-২-৭৮-১, ওয়্যাগনার ৯-১-৫৩-২, ব্রেসওয়েল ৪-০-৩৭-০, মিচেল ৩-০-১৬-০)