স্টোকসের কাছে এই টেস্ট জয় বিশ্বকাপের চেয়েও বড়

রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা আর রোমাঞ্চে হাবুডুবু খেয়ে ২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল জয়। অবিশ্বাস্য শেষ উইকেট জুটিতে অ্যাশেজের হেডিংলি টেস্ট জয়। ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসের স্মরণীয় দুটি জয়ের স্বাক্ষী বেন স্টোকস। কিন্তু আগের সেই সব জয় যেন ছাড়িয়ে গেছে এবারের রূপকথা। ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টের শেষ দিন শেষ সেশনে টি-টোয়েন্টির গতিতে রান তাড়ায় অবিশ্বাস্য জয়ের পর ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক বলছেন, অন্য সব জয়কে যোজন যোজন দূরত্বে পেছনে ফেলেছে এবারের জয়।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2022, 03:03 AM
Updated : 15 June 2022, 11:36 AM

শেষ দিন সকালে ১৫.৪ ওভার খেলে যখন অলআউট হলো নিউ জিল্যান্ড, চতুর্থ ইনিংসে ৭২ ওভারে ইংল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৯৯। শেষ দিনের প্রেক্ষাপট আর বাস্তবতা মিলিয়ে এই রান তাড়া নিয়ে ভাবারই কথা নয় বেশির ভাগ সময়। কিন্তু ব্রেন্ডন ম্যাককালামের কোচিং আর স্টোকসের অধিনায়কত্বে এই ইংল্যান্ড যেন গেয়ে উঠল নতুন দিনের জয়গান।

প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান অলিভার পোপ ও অসাধারণ ফর্মে থাকা জো রুটসহ ইংল্যান্ড ৪ উইকেট হারায় ৯৩ রানের মধ্যে। কিন্তু রানের গতি কমায়নি তারা।

তার পরও চা বিরতির সময় ইংলিশদের লক্ষ্য মনে হচ্ছিল নাগালের বাইরে। শেষ দিন শেষ সেশনে ৩৮ ওভারে ১৬০ রান তাড়া করে কবে জিতেছে কোন দল! কিন্তু জনি বেয়ারস্টোর আর স্টোকসের বিধ্বংসী জুটিতে রচনা হলো নতুন অধ্যায়ের।

ওই ১৬০ রান চলে এলো স্রেফ ১৬ ওভারেই! দুজন ১৭৯ রানের জুটি গড়লেন মাত্র ২০.১ ওভারে। ইংল্যান্ড জিতে গেল ২২ ওভার বাকি রেখেই!

২০১৯ বিশ্বকাপ জিতে ইংল্যান্ড তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের আজন্ম আক্ষেপ দূর করে। ফাইনালে ৮৪ রান করে স্টোকস ছিলেন ম্যান অব দা ম্যাচ। ওই বিশ্বকাপের পরপর অ্যাশেজের হেডিংলি টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়ায়ই জ্যাক লিচের সঙ্গে অকল্পনীয় এক শেষ জুটিতে স্টোকস ইংল্যান্ডকে এনে দেন অভাবনীয় জয়। সেবার ১৩৫ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে স্টোকসই ছিলেন ম্যাচ সেরা।

এবারও স্টোকসের ব্যাট থেকে আসে ১০ চার ও ৪ ছক্কায় ৭০ বলে অপরাজিত ৭৫ রান। তবে এই জয়ে তিনি পার্শ্বনায়ক। ৭৭ বলের সেঞ্চুরি আর ৭ ছক্কায় ৯২ বলে ১৩৬ রানের বিস্ফোরক ইনিংসে ম্যাচের সেরা বেয়ারস্টো।

ব্যাট হাতে অপ্রতিরোধ্য হলেও জয়ের পর স্টোকস হয়রান হচ্ছিলেন উপযুক্ত ভাষা খুঁজতে। 

“আজকে যেটির স্বাক্ষী হলাম আমরা, বর্ণনার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। এটা বিস্ময়কর। হেডিংলির জয়কে উড়িয়ে দিচ্ছে এটি, মাড়িয়ে যাচ্ছে লর্ডস ও বিশ্বকাপ ফাইনালের জয়কেও। আবেগময়তায় আর মাঠে প্রতিটি মূহূর্ত যেভাবে উপভোগ করেছি আমি, অবিশ্বাস্য তা।”

লর্ডসে সিরিজের প্রথম টেস্টেও চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়ায় দাপুটে জয়কে সঙ্গী করে এই টেস্ট খেলতে নামে ইংল্যান্ড। টেস্ট ক্রিকেটে তাদের গত কিছু দিনের ক্ষত তাতে উপশম হয় অনেকটা। তারপর এবারের এই জয়। রান তাড়ায় উইকেটে থেকে নেতৃত্ব দিলেও ম্যাচ শেষে যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না স্বয়ং স্টোকসেরই।

তবে ইংলিশ অধিনায়কের বিশ্বাস, এই রান তাড়ার পুনরাবৃত্তি কোনো দল করতে পারলে সেটি হবেন তারাই।

“অসাধারণ জয় এটি। গোটা সপ্তাহ ধরেই আবহ ছিল দুর্দান্ত। সেই ধারাবাহিকতায় এগিয়ে গিয়ে আজকে এই ধরনের পারফরম্যান্স…।”

“কোনোভাবেই এটা আমার মাথায় ঢুকছে না, কীভাবে আমরা ২৯৯ রান তাড়া করে ফেললাম ২০ ওভার (২২ ওভার) বাকি রেখে। সেটিও শেষ দিন সকালে ১৫ ওভার বোলিং করার পর। এটা আর কখনোই হবে না। তবে যদি হয়, সম্ভবত আমরাই আবার করব!”

এই সিরিজের আগে টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ড ধুঁকছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। গত অ্যাশেজে হারার পর কোচ ক্রিস সিলভারউডের বিদায়, ক্যারিয়ার সেরা ফর্মে থাকার পরও দলের ব্যর্থতায় অধিনায়ক জো রুটের পদত্যাগের পর ম্যাককালাম-স্টোকস জুটিতে নতুন দিনের আশায় ছিল ইংল্যান্ড। সেটির সূচনা হলো দারুণভাবে।

প্রথম টেস্টে লর্ডসে দারুণ জয়ের পর এই অভাবনীয় জয়ে টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ২-০তে এগিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলল ইংল্যান্ড। এরপর হোয়াইটওয়াশ মিশন শুরু আগামী ২৩ জুন থেকে হেডিংলিতে।