নটিংহ্যামের ট্রেন্ট ব্রিজে মঙ্গলবার দ্বিতীয় টেস্টে ৫ উইকেটে জিতেছে স্টোকসের দল। ৩ ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে ২-০ ব্যবধানে। পঞ্চম ও শেষ দিনে ২৯৯ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলেছে ৫০ ওভারে।
এই মাঠে এটাই সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। আগের রেকর্ডও ছিল নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। ২০০৪ সালে ২৮৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৪ উইকেটে জিতেছিল ইংল্যান্ড।
চা-বিরতির পর বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ১৬ ওভারে ১৬০ রান তোলে স্বাগতিকরা। এতে সবচেয়ে বড় অবদান বেয়ারস্টোর। প্রথম ৪৯ বলে ৪৩ রান করা এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান কেবল ৭৭ বলে করেন সেঞ্চুরি।
একটুর জন্য টেস্টের ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে দ্রুততম ও ইংল্যান্ডের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়তে পারেননি। ৭৬ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে দুটি রেকর্ডই গিলবার্ট জেসপের। ১৯০২ সালে ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই রেকর্ড গড়েন তিনি।
সুযোগ অবশ্য এসেছিল বেয়ারস্টোর সামনে। এক পর্যায়ে তার রান ছিল ৭৪ বলে ৯৯। কিন্তু পরে দুটি ডট খেলে ১২০ বছর পুরনো রেকর্ড ভাঙার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন তিনি।
তবে তার বিধ্বংসী এই সেঞ্চুরিই পার্থক্য গড়ে দেয় ম্যাচে। তিনি যখন ক্রিজে আসেন তখন ৫৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে ইংল্যান্ড।
রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন জ্যাক ক্রলি। দ্রুত ফেরেন অলি পোপ ও দারুণ ছন্দে থাকা জো রুট। হেনরির বলে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন পোপ। প্রথম ইনিংসের আরেক সেঞ্চুরিয়ান রুট বিদায় নেন বোল্টকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে।
এক প্রান্ত আগলে রাখা অ্যালেক্স লিসের প্রতিরোধ ভাঙেন টিম সাউদি। দ্রুত চার উইকেট হারালেও নিজেদের গুটিয়ে নেননি বেয়ারস্টো ও স্টোকস। ইতিবাচক থেকেই এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে।
৫৪ বলে আসে তাদের জুটির পঞ্চাশ। তিন অঙ্ক স্পর্শ করে কেবল ৭৩ বলে। সে সময় বল ফেলার জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন না সফরকারী বোলাররা। কাজে লাগছিল না তাদের শর্ট বলের পরিকল্পনা। চমৎকার সব হুক ও পুলে বাউন্ডারি মারছিলেন বেয়ারস্টো। স্টোকসও এগিয়ে যাচ্ছিলেন সাবলীলভাবে।
হেনরিকে দুই ছক্কার পর বোল্টকে দুই ছক্কার সঙ্গে বেয়ারস্টো মারেন একটি চার। সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর মাইকেল ব্রেসওয়েলকে জোড়া ছক্কায় ওড়ানোর পর মারেন চার। বোল্টকে দুই চার মারার পর শরীরের খুব কাছের বল কাট করার চেষ্টায় কট বিহাইন্ড হয়ে যান বেয়ারস্টো। ভাঙে ১২১ বল স্থায়ী ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া ১৭৯ রানের জুটি।
বেয়ারস্টো ৯২ বলে ১৪ চার ও সাত ছক্কায় করেন ১৩৬ রান। এই ইনিংসে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
বেন ফোকসকে নিয়ে বাকিটা অনায়াসেই সারেন স্টোকস। ৭০ বলে চার ছক্কা ও ১০ চারে ৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন ইংলিশ অধিনায়ক। এই ম্যাচে ৬ ছক্কায় ক্রিস গেইলকে (৯৮) পেরিয়ে টেস্টের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ছক্কার তালিকায় উঠে গেলেন তিনে। স্টোকসের ৯৯ ছক্কার বেশি আছে কেবল অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (১০০) ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের (১০৭)।
এর আগে ৭ উইকেটে ২২৪ রান নিয়ে দিন শুরু করা নিউ জিল্যান্ড এ দিন যোগ করে ৬০ রান। এক ছক্কা ও চারটি চারে ড্যারিল মিচেল অপরাজিত থাকেন ৬২ রানে। লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে তিনি দলের পুঁজি নিয়ে যান তিনশ রানের কাছে।
ম্যাট হেনরিকে কট বিহাইন্ড করে দিনের প্রথম উইকেট এনে দেন স্টুয়ার্ট ব্রড। পরের ওভারে তিনিই বিদায় করেন চোট নিয়েও ব্যাটিংয়ে নামা কাইল জেমিসনকে।
মুত্তিয়া মুরালিধরনকে ছাড়িয়ে টেস্টে ১১ নম্বরে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়া বোল্টকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান মিচেল। তিন চারে ১৭ রান করা বোল্টকে বিদায় করে নিউ জিল্যান্ডকে ২৮৪ রানে থামিয়ে দেন জেমস অ্যান্ডারসন।
২৯৮ রানে পুঁজি নিয়ে নিউ জিল্যান্ডের শুরুটা ছিল দারুণ। কিন্তু বেয়ারস্টোর মাস্টারক্লাস ইনিংসে শেষ পর্যন্ত হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।
আগামী ২৩ জুন লিডসে শুরু হবে তৃতীয় ও শেষ টেস্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৫৫৩
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৫৩৯
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: (আগের দিন ২২৪/৭) ৮৪.৪ ওভারে ২৮৪ (মিচেল ৬২*, হেনরি ১৮, জেমিসন ১, বোল্ট ১৭; অ্যান্ডারসন ৮.৪-১-২০-২, ব্রড ২০-৪-৭০-৩, পটস ১৫-৬-৩২-২, লিচ ২৪-৫-৮৬-১, স্টোকস ১৭-৩-৬২-০)
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৯৯) ৫০ ওভারে ২৯৯/৫ (লিস ৪৪, ক্রলি ০, পোপ ১৮, রুট ৩, বেয়ারস্টো ১৩৬, স্টোকস ৭৫*, ফোকস ১২*; সাউদি ১১-০-৬৭-১, বোল্ট ১৬-১-৯৪-৩, হেনরি ১৫-৩-৬৭-১, ব্রেসওয়েল ৮-০-৬০-০)
ফল: ইংল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে ইংল্যান্ড
ম্যান অব দা ম্যাচ: জনি বেয়ারস্টো