পঞ্চম দিন (সংক্ষিপ্ত স্কোর) দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস: ১২১ ওভারে ৩৬৭ বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১১৫.৫ ওভারে ২৯৮ দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংস: ৭৪ ওভারে ২০৪ বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৯ ওভারে ৫৩ (লক্ষ্য ২৭৪) |
দুই বোলারেই শেষ
কেশভ মহারাজ ও সাইমন হার্মার মিলেই শেষ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের ইনিংস। স্রেফ দুই বোলার মিলে পূর্ণাঙ্গ ইনিংস শেষ করে দেওয়ার কীর্তি টেস্ট ইতিহাসে এই নিয়ে হলো ২৮ বার। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগে ৫ বার এমন হলেও তারা নিজেরা করতে পারল প্রথমবার।
বাংলাদেশের ম্যাচেও এমন কিছু হলো প্রথমবার।
বিব্রতকর যত রেকর্ড
২০১৮ সালে অ্যান্টিগায় ৪৩ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। এবার সেটিকে ছাড়াতে পারলেও নিজেদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোরের রেকর্ড তাদের ঠিকই গড়া হয়ে গেল।
ওভারের হিসেবেও দ্বিতীয় ক্ষণস্থায়ী ইনিংস এটি। অ্যান্টিগায় দল অলআউট হয়েছিল ১৮.৪ ওভারে।
চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন রান এটিই। আগের সর্বনিম্ন ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই ২০১৮ সালে পচেফস্ট্রুমে ৯০।
অনেক ইতিহাসের স্বাক্ষী ডারবানে আগের সর্বনিম্ন দলীয় রান ছিল ১৯৯৬ সালে ভারতের ৬৬।
১৩ ওভার আর ৫৫ মিনিটেই শেষ
শেষ দিনে ২৬৩ রান তুলে জয়ের আশায় মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। সেই স্বপ্নের করুণ অপমৃত্যু। প্রথম ওভারে মুশফিকুর রহিমের আউট দিয়ে পতনের শুরু, এরপর একের পর এক উইকেটের পতনে বাংলাদেশ ১৯ ওভারে অলআউট স্রেফ ৫৩ রানে। দিনের খেলার সমাপ্তি ৫৫ মিনিটেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৩৬৭
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৯৮
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ৭৪ ওভারে ২০৪ (এরউইয়া ৮, এলগার ৬৭, পিটারসেন ৩৬, বাভুমা ৪, রিকেলটন ৩৯*, ভেরেইনা ৬, মুল্ডার ১১, মহারাজ ৫, হার্মার ১১, উইলিয়ামস ০, অলিভিয়ের ০; খালেদ ১৩-১-৩৩-০, মিরাজ ৩৫-৬-৮৫-৩, শান্ত ১-০-৩-০, ইবাদত ১৩-১-৪০-৩, মুমিনুল ১-১-০-০, তাসকিন ১১-১-২৪-২)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১৯ ওভারে ৫৩ (আগের দিন ১১/৩) (শান্ত ২৬, মুশফিক ০, লিটন ২, ইয়াসির ৫, মিরাজ ০, তাসকিন ১৪, খালেদ ০, ইবাদত ০*; মহারাজ ১০-০-৩২-৭, হার্মার ৯-৩-২১-৩)।
মহারাজের সাতে ম্যাচের সমাপ্তি
কেশভ মহারাজের হাত ধরেই ম্যাচের ইতি। ১৭ বলে ১৪ রান করে স্লিপে ধরা পড়লেন তাসকিন আহমেদ।
প্রথম ইনিংসে ৩৭ ওভার বল করে উইকেট শূন্য থাকা বাঁহাতি স্পিনার এবার ৩২ রানে নিলেন ৭ উইকেট।
বাংলাদেশ অলআউট ৫৩ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকায় জয় ২২০ রানে।
মহারাজের ষষ্ঠ
প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের বিদায়ের পর টেল এন্ডারের বিদায় সময়ের ব্যাপার মাত্র। সৈয়দ খালেদ আহমেদ আরও সহজ করে দিলেন কেশভ মহারাজের কাজ। স্লগ করতে গিয়ে টাইমিং করতে পারলেন না ঠিকঠাক। সহজ ক্যাচ নিলেন লিজাড উইলিয়ামস।
বাংলাদেশের রান ৯ উইকেটে ৫১।
উইকেটে তাসকিনের সঙ্গী শেষ ব্যাটসম্যান ইবাদত।
এবার বিদায় শান্তর
স্রোতের বিপরীতে একটু লড়াইয়ের চেষ্টা করছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দল পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর বিদায় নিলেন তিনি।
সাইমন হার্মারকে বিশাল এক ছক্কায় উড়িয়েছিলেন শান্ত। সেই হার্মারও শোধ তুললেন একটু।
এই অফ স্পিনারের দারুণ টার্ন ও ফ্লাইটে পরাস্ত হন শান্ত। লম্বা প বাড়িয়ে ড্রাইভ করার চেষ্টা করলেও ব্যাটে-বলে হয়নি। বল অনেকটা টার্ন ও বাউন্স করে যায় কিপার কাইল ভেরেইনার গ্লাভসে।
ড্রাইভের ফলো থ্রুতে শান্তর পেছনের পা বেরিয়ে যায় ক্রিজ থেকে। পরে পা পেছনে নিলেও নিরাপদ জায়গায় ফিরতে পারেননি। ভেরেইনা যখন বেলস উড়িয়ে দিলেন, শান্তর পা তখনও দাগের ওপর।
৫২ বলে ২৬ রানে আউট শান্ত। বাংলাদেশের রান ৮ উইকেটে ৫০।
নিজেদের সর্বনিম্ন ৪৩ রান পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ৬২ রান এখনও একটু দূরে।
উইকেটে তাসকিন আহমেদের সঙ্গী খালেদ আহমেদ।
শূন্যতে শেষ মিরাজ
উইকেট উৎসবে সামিল হলেন এবার সাইমন হার্মারও। এই অফ স্পিনার শূন্য রানে ফেরালেন মেহেদী হাসান মিরাজকে।
অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে টার্ন করা বলে ডিফেন্স করেন মিরাজ। কিন্তু লাইন কাভার করতে পারেননি। বল একটু থমকে ব্যাটের কানা ছুঁয়ে আশ্রয় নেয় স্লি ফিল্ডারের হাতে।
শূন্য রানে আউট মিরাজ। বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ৩৩।
মহারাজের ৫
ইয়াসিরের উইকেট নিয়ে ৫ উইকেট পূর্ণ হলো কেশভ মহারাজের। ৪১ টেস্টে ৫ উইকেটের স্বাদ পেলেন তিনি অষ্টমবার। দেশের মাঠে ও বাইরে সমান চারবার করে।
এবার গেলেন ইয়াসির
কেশভ মহারাজ উইকেট নিচ্ছেন যেন ওভারপ্রতি। দিনের তিন ওভারে উইকেট নিয়ে ফেললেন তিনটি। এবার তার শিকার ইয়াসির আলি চৌধুরি। ৬ উইকেট হারিয়ে মহাবিপদে বাংলাদেশ।
মহারাজের ফ্লাইটেড ডেলিভারি সামনে টেনে আনে ইয়াসিরকে। পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করেন ব্যাটসম্যান। কিন্তু তার ব্যাট নেমে আসে ভুল অ্যাঙ্গেলে। বল পিচ করে হালকা টার্ন করে ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে ছোবল দেয় স্টাম্পে।
৫ রানে আউট ইয়াসির। বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ২৬।
নতুন ব্যাটসম্যান মেহেদী হাসান মিরাজ।
শুরুতে শেষ লিটনও
মুশফিককে হারানোর রেশ না কাটার আগেই আরেকটি বড় ধাক্কা বাংলাদেশের জন্য। এবার গেলেন ফর্মে থাকা লিটন দাস। বোলার আবারও কেশভ মহারাজ।
দিনের প্রথম দুই ওভারেই দুটি শিকার ধরে ফেললেন মহারাজ। অফ স্টাস্পে ঝুলিয়ে দেওয়া বলে লিটন ফ্লিক করেন। কিন্তু বল রাখতে পারেননি নিচে। সহজ ক্যাচ যায় মিড উইকেটে সাইমন হার্মারের কাছে।
সত্যিকারের সফট ডিসমিসাল। অনেকটা যেন ওয়ানডে শট। চতুর্থ উইকেট শিকার করে মহারাজের বাঁধনহারা উল্লাস।
লিটন আউট ৬ বলে ২ রানে। ১৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কাঁপছে বাংলাদেশ।
নতুন ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলি চৌধুরি।
শুরুতেই বড় ধাক্কা বাংলাদেশের
শেষ দিনের লড়াইয়ে যার ওপর ছিল সবচেয়ে বড় ভরসা, সেই মুশফিকুর রহিমকে শুরুতেই হারাল বাংলাদেশ। দিনের পঞ্চম বলেই তাকে ফেরালেন কেশভ মহারাজ।
রাউন্ড দা উইকেটে করা বলটি একটু ড্রিফটের সঙ্গে পিচ করে টার্ন না করে সোজা হয়ে ঢোকে ভেতরে। মুশফিক লাইনও বুঝতে পারেননি, ব্যাট পেতে দেন ভুল লাইনে। বল লাগে প্যাডে। আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন দ্রুতই।
মুশফিক রিভিউ নেন। কিন্তু বাঁচতে পারেননি, বরং হারাতে হয় রিভিউ।
শূন্য রানে ফিরলেন অভিজ্ঞ মুশফিক। বাংলাদেশ ৪ উইকেটে ১২।
নতুন ব্যাটসম্যান লিটন দাস।
তবু জয়ে চোখ বাংলাদেশের
২৭৪ রান তাড়ায় বাংলাদেশ চতুর্থ দিন শেষ করেছে ৩ উইকেটে ১১ রান নিয়ে। দুনিয়ার যে কোনো কন্ডিশনে, যে কোনো প্রতিপক্ষের সঙ্গে শেষ দিনে ২৬৩ রান করা কঠিন সব উইকেট নিয়েও। বাংলাদেশের সেখানে উইকেট আছে ৭টি। কঠিন ও প্রতিপক্ষ কঠিন। তার পরও জয়ের আশা ছাড়ছে না দল!
চতুর্থ দিন শেষে টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ বলেন, শেষ দিনের উইকেটে স্রেফ ড্রয়ের জন্য খেলা কঠিন। তারা জয়ের চেষ্টাই করবেন। সাবেক এই অধিনায়কের বিশ্বাস, ৩ উইকেট পড়ে গেলেও দলের বাকি ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্য আছে দল জেতানোর।
শেষের লড়াই
চার দিনে উত্তেজনার নানা মোড় পেরিয়ে ম্যাচ এখন শেষ দিনের রোমাঞ্চে। চারটি ফলাফলের যে কোনোটি এখনও সম্ভব-দক্ষিণ আফ্রিকার জয়, বাংলাদেশের জয়, টাই ও ড্র।
বাস্তব সম্ভাবনায় সবচেয়ে সম্ভাব্য ফল, দক্ষিণ আফ্রিকার জয়। চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলে বাংলাদেশের তিন উইকেট আদায় করে নিয়েছে তারা স্রেফ ছয় ওভারেই। উইকেটে স্পিন ধরছে দারুণভাবে। বাউন্স একচু অসমান। দুই স্পিনার সাইমন হার্মার ও কেশভ মহারাজ আছেন ছন্দে। উইকেটে পেসারদের সহায়তাও আছে কিছুটা। জয়ের আশা তাই করতেই পারে ডিন এলগারের দল।
তাদের সেই আশায় খানিকটা শঙ্কার ছোঁয়া থাকতে পারে আবহাওয়া নিয়ে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, শেষ দিনে বৃষ্টির শঙ্কা আছে কিছুটা। দিনের শুরুতে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতও হতে পারে। বৃষ্টি না হলেও শেষ বিকেলে ঝুপ করে আঁধার নামে ডারবানে। প্রথম চারদিনের একদিনও পুরো ৯০ ওভার খেলা হয়নি আলোর স্বল্পতায়। শেষ দিনেও হবে না, একরকম নিশ্চিতই। আবহাওয়া বাগড়া দিলে তাই ম্যাচ ড্রয়ের দিকেও গড়াতে পারে।
তবে ড্র করতে হলেও একটা বড় সময় ব্যাটিং দৃঢ়তা দেখাতে হবে বাংলাদেশকে। প্রথম ইনিংসে ৭ ঘণ্টা ২২ মিনিট ব্যাট করা ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় আউট হয়ে গেলেন এবার। দলের বাকি ব্যাটসম্যানদের অপেক্ষায় তাই কঠিন চ্যালেঞ্জ।
চতুর্থ দিন শেষে সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৩৬৭
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৯৮
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ৭৪ ওভারে ২০৪ (এরউইয়া ৮, এলগার ৬৭, পিটারসেন ৩৬, বাভুমা ৪, রিকেলটন ৩৯*, ভেরেইনা ৬, মুল্ডার ১১, মহারাজ ৫, হার্মার ১১, উইলিয়ামস ০, অলিভিয়ের ০; খালেদ ১৩-১-৩৩-০, মিরাজ ৩৫-৬-৮৫-৩, শান্ত ১-০-৩-০, ইবাদত ১৩-১-৪০-৩, মুমিনুল ১-১-০-০, তাসকিন ১১-১-২৪-২)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৬ ওভারে ১১/৩ (জয় ৪, সাদমান ০, শান্ত ৫*, মুমিনুল ২, মুশফিক ০*; মহারাজ ৩-০-৭-২, হার্মার ৩-১-৪-১)।