চতুর্থ দিন (সংক্ষিপ্ত স্কোর) দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস: ১২১ ওভারে ৩৬৭ বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১১৫.৫ ওভারে ২৯৮ দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংস: ৭৪ ওভারে ২০৪ বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৬ ওভারে ১১/৩ (লক্ষ্য ২৭৪) |
কঠিন পরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ
বোলারদের দারুণ লড়াইয়ের পরও লক্ষ্য আড়াইশ রানের নিচে রাখা যায়নি। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ২০৪ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ইনিংসে ৬৯ রানের লিডের সুবাদে তারা দেয় ২৭৪ রানের লক্ষ্য।
রান তাড়ায় চতুর্থ দিন স্রেফ ৬ ওভারেই ৩ উইকেট হারিয়ে কাঁপছে বাংলাদেশ। দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে ফিরে গেছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক।
উইকেটে স্পিনারদের জন্য দারুণ সহায়তা রয়েছে। পঞ্চম দিনে সেটা আরও বাড়াই স্বাভাবিক। সাইমন হার্মার দিনের দ্বিতীয় ওভারেই পেয়েছেন উইকেট। কেশভ মহারাজ এক ওভারেই নিয়েছেন দুটি। শেষ দিনে এই দুই স্পিনারকে সামলানো হবে বাংলাদেশের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৩৬৭
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৯৮/৪) ১১৫.৫ ওভারে ২৯৮ (জয় ১৩৭, তাসকিন ১, লিটন ৪১, ইয়াসির ২২, মিরাজ ২৯, খালেদ ০, ইবাদত ০*; অলিভিয়ের ১৫-৫-৩৬-১, উইলিয়ামস ১৮.৫-৩-৫৪-৩, হার্মার ৪০-১২-১০৩-৪, মহারাজ ৩৭-১৫-৬৫-০, এলগার ১-০-৮-০, মুল্ডার ৪-১-২৩-১)
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: (আগের দিন ৬/০) ৭৪ ওভারে ২০৪ (এরউই ৮, এলগার ৬৪, পিটারসেন ৩৬, বাভুমা ৪, রিকেলটন ৩৯*, ভেরেইনা ৬, মুল্ডার ১১, মহারাজ ৫, হার্মার ১১, উইলিয়ামস ০, অলিভিয়ের ০; খালেদ ১৩-১-৩৩-০, মিরাজ ৩৫-৬-৮৫-৩, শান্ত ১-০-৩-০, ইবাদত ১২-১-৪০-৩, মুমিনুল ১-১-০-০, তাসকিন ১১-১-২৪-২)
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৭৪) ৬ ওভারে ১১/৩ (জয় ৪, সাদমান ০ শান্ত ৫, মুমিনুল ২, মুশফিকুর ০; মহারাজ ৩-০-৭-২, হার্মার ৩-১-৪-১)
মুমিনুলকে ফিরিয়ে মহারাজের দ্বিতীয়
মাহমুদুল হাসান জয়ের পর একই ওভারে মুমিনুল হককেও বিদায় করলেন কেশভ মহারাজ। বাঁহাতি স্পিনারের অ্যাঙ্গেলে ভেতরে ঢোকা বলে পিছিয়ে গিয়ে ফ্লিকের চেষ্টায় ব্যর্থ হন মুমিনুল। ব্যাটের কানা এড়িয়ে আঘাত হানে প্যাডে।
এলিবিডব্লিউর জোরাল আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দিলে রিভিউ না নিয়েই ফিরে যান মুমিনুল। ৪ বলে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান করেন শূন্য।
এবার শুরুতেই ফিরলেন জয়
প্রথম ইনিংসে দারুণ বোলিং করলেও উইকেটশূন্য ছিলেন কেশভ মহারাজ। এবার তিনি উইকেট পেলেন তৃতীয় ওভারেই। দ্রুত ফিরিয়ে দিলেন মাহমুদুল হাসান জয়কে।
বাঁহাতি স্পিনারের বলের লাইনে যেতে পারেননি তরুণ এই ওপেনার। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বল আঘাত হানে স্টাম্পে।
প্রথম ইনিংসে প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা ক্রিজে থাকা জয় এবার টিকলেন কেবল ৯ বল। এক চারে ফিরে গেলেন চার রানেই।
বাঁচলেন শান্ত
নিজের দ্বিতীয় ওভারে আরেকটি উইকেট পেতে পেতেও পাওয়া হলো না সাইমন হার্মারের। ওভারের সেটি ছিল দ্বিতীয় বল। অফ স্পিনারের বলে স্কয়ার কাটের চেষ্টায় সফল হননি নাজমুল হোসেন শান্ত। কট বিহাইন্ডের জোরাল আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নেয়নি দক্ষিণ আফ্রিকা।
তবে আল্ট্রা এজে মেলে ব্যাটে বলের স্পর্শের প্রমাণ। সে সময় ২ রানে ছিলেন শান্ত।
আবার ব্যর্থ সাদমান
২৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই ভাঙল বাংলাদেশের শুরুর জুটি। প্রথম ইনিংসে ৯ রান করা সাদমান ইসলাম এবার ফিরলেন শূন্য রানে।
প্রথম ইনিংসে শুরুতে চার উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দেওয়া সাইমন হার্মারই পেলেন প্রথম উইকেট। অফ স্পিনারের দ্বিতীয় বলটি পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন সাদমান। মিডল স্টাম্পে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া বল স্পিন করে তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে কিগান পিটারসেনের হাতে।
বাঁহাতি ওপেনার টেকেন কেবল ২ বল।
২০৪ রানে শেষ দক্ষিণ আফ্রিকা
প্রথম ইনিংসে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা দারুণ ভুগিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই সুযোগ তাদের দেননি সফরকারীরা।
দক্ষিণ আফ্রিকা এবার ১ রানে হারিয়েছে শেষ তিন উইকেট। স্বাগতিকদের ২০৪ রান থামিয়ে লক্ষ্যটা তিনশর নিচে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ।
জয়ের জন্য মুমিনুল হকদের চতুর্থ ইনিংসে করতে হবে ২৭৪ রান, গড়তে হবে রেকর্ড। আগে তাদের সর্বোচ্চ ছিল ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৩৬৭
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৯৮/৪) ১১৫.৫ ওভারে ২৯৮ (জয় ১৩৭, তাসকিন ১, লিটন ৪১, ইয়াসির ২২, মিরাজ ২৯, খালেদ ০, ইবাদত ০*; অলিভিয়ের ১৫-৫-৩৬-১, উইলিয়ামস ১৮.৫-৩-৫৪-৩, হার্মার ৪০-১২-১০৩-৪, মহারাজ ৩৭-১৫-৬৫-০, এলগার ১-০-৮-০, মুল্ডার ৪-১-২৩-১)
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: (আগের দিন ৬/০) ৭৪ ওভারে ২০৪ (এরউই ৮, এলগার ৬৪, পিটারসেন ৩৬, বাভুমা ৪, রিকেলটন ৩৯*, ভেরেইনা ৬, মুল্ডার ১১, মহারাজ ৫, হার্মার ১১, উইলিয়ামস ০, অলিভিয়ের ০; খালেদ ১৩-১-৩৩-০, মিরাজ ৩৫-৬-৮৫-৩, শান্ত ১-০-৩-০, ইবাদত ১২-১-৪০-৩, মুমিনুল ১-১-০-০, তাসকিন ১১-১-২৪-২)
আরেকটি রান আউট
এক বল পর দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক ব্যাটসম্যান ফিরে গেলেন রান আউট হয়ে। ইবাদত হোসেনের বলে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন রায়ান রিকেলটন ও লিজাড উইলিয়ামস। কিন্তু সাদমান ইসলামের দারুণ ফিল্ডিংয়ে সফল হননি তারা। সাদমানের থ্রো পেয়ে লিটন দাস বেলস ফেলে দেওয়ার সময় কিছুটা দূরে ছিলেন উইলিয়ামস।
‘ডায়মন্ড ডাক’ অর্থাৎ শূন্য বলে শূন্য রানে আউট হন উইলিয়ামস।
সোহানের দুর্দান্ত ফিল্ডিং
বদলি ফিল্ডার হিসেবে মাঠে নেমে এই উইকেট ‘এনে দিলেন’ নুরুল হাসান সোহান। ডিপ কাভার থেকে সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট করে দিলেন সাইমন হার্মারকে।
প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ছিলেন তিনি। শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে যোগ করেছিলেন ৬৯ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে তাকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি সোহান।
মেহেদী হাসান মিরাজের বল ডিপ কাভারে পাঠিয়ে তিন রানের চেষ্টায় ছিলেন হার্মার। কিন্তু সীমানা থেকে সোহানের সরাসরি থ্রো স্টাম্পে লাগায় সফল হতে পারেননি।
২৫ বলে এক চারে ১১ রান করেন হার্মার।
৭৩ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৮ উইকেটে ২০৩।
মহারাজকে ফিরিয়ে তাসকিনের দুই
প্রথম ইনিংসে ভোগানো কেশভ মহারাজকে এবার বেশিক্ষণ টিকতে দিলেন না তাসকিন আহমেদ। দারুণ এক ডেলিভারিতে ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে এলবিডব্লিউ করে নিজের দ্বিতীয় উইকেট নিলেন গতিময় এই পেসার।
অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে সুইং করে ভেতরে ঢোকা বল ব্যাটে খেলতে পারেননি মহারাজ। জোরাল আবেদনে সাড়া দিয়ে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার।
৫ বলে ৫ রান করা মহারাজ ফেরেন রিভিউ না নিয়েই।
এই ওভারের প্রথম বলে রায়ান রিকেলটনের বাউন্ডারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার লিড ছাড়ায় আড়াইশ। ক্রিজে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের সঙ্গী সাইমন হার্মার।
মুল্ডারকে ফিরিয়ে মিরাজের তিন
বারবার কোনোমতে বেঁচে যাওয়া ভিয়ান মুল্ডারকে ফেরালেন মেহেদী হাসান মিরাজ। অফ স্পিনারের বলে স্লিপে ইয়াসির আলির হাতে ধরা পড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল লেংথ বল ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন মুল্ডার। কিন্তু ঠিক মতো পারেননি, ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে ইয়াসিরের হাতে।
৪২ বলে ১১ রান করেন মুল্ডার। তার বিদায়ে ভাঙে ৭২ বল স্থায়ী ২০ রানের জুটি।
বাংলাদেশের সেশন
২৮ ওভার, ৫২ রান, ৪ উইকেট। নিশ্চিতভাবেই চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশন বাংলাদেশের। বাধ দেওয়া গেছে রানের গতিতে, নেওয়া গেছে দ্রুত উইকেট। প্রথম সেশনে ৯৯ রানে কেবল একটি উইকেট নেওয়া সফরকারীরা অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে লাঞ্চের পর।
চা-বিরতিতে যাওয়ার সময় দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৫ উইকেটে ১৫৭। ২৯ বলে ৬ রানে খেলছেন ভিয়ান মুল্ডার। ৫৯ বলে বলে রায়ান রিকেলটনের রান ১৮।
দুই জনের জুটিতে ৯ রান এসেছে ৫৩ বলে।
২৯ ওভারে ৬ মেডেনসহ ৫৯ রান দিয়ে দুটি উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। রানের গতি কমিয়ে রাখায় দারুণ অবদান এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডারের। ভালো বোলিং করেছেন ইবাদত হোসেন ও সৈয়দ খালেদ আহমেদও। কাঁধে সমস্যা থাকলেও চমৎকার বোলিংয়ে একটি উইকেট নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ।
দুটি দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন ইয়াসির আলি ও সাদমান হোসেন।
এই সেশনেও একটি খুব কঠিন ও একটি সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ।
মাঠে ফিরে বোলিংয়ে তাসকিন
৫ ওভারের স্পেলের পর উঠে যাওয়া তাসকিন আহমেদ মাঠে ফিরে আবার বল হাতে পেয়েছেন। ড্রেসিং রুমে থাকার সময় গতিময় এই পেসারের ডান কাঁধে টেপ প্যাচানো ছিল।
বোলিংয়ে ফিরে দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম ওভারে তাসকিন দেন দুটি সিঙ্গেল।
ভেরেইনার দুর্ভাগ্য
মেহেদী হাসান মিরাজের বলে রিভার্স সুইপ করতে চেয়েছিলেন কাইল ভেরেইনা। ঠিক মতো শট খেলতে পারেননি তিনি। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জুতায় লেগে, গ্লাভস ছুঁয়ে উঠে যায় ক্যাচ। সিলি পয়েন্ট থেকে ঝাঁপিয়ে মুঠোয় জমান সাদমান ইসলাম।
১ চারে ১৮ বলে ছয় রান করেন ভেরেইনা।
সেই ওভারে নিজের তৃতীয় উইকেট পেতে পারতেন মিরাজ। আগের ইনিংসে গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ পাওয়া ভিয়ান মুল্ডার পেতে পারতেন ‘কিং পেয়ার।’ কিন্তু তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে আসা কঠিন ক্যাচ নিতে পারেননি লিটন দাস, তার প্যাডে লেগে যায় প্রথম স্লিপে। নাজমুল হোসেন শান্তর জন্যও সেটি ছিল খুব কঠিন ক্যাচ, তিনিও চেষ্টায় সফল হননি।
পরের ওভারে আবার বেঁচে যান মুল্ডার। শর্ট বলে ব্যাটের কানায় লেগে আসা ফিরতি ক্যাচ ধরতে পারেননি পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
মাঠের বাইরে তাসকিন
উইকেট নেওয়ার পর আরেকটি ওভার করে মাঠ ছাড়েন তাসকিন আহমেদ। ডান কাঁধে টেপ প্যাচানো অবস্থায় দলের দলের ড্রেসিং রুমে খালেদ মাহমুদ ও রঙ্গনা হেরাথের মাঝে বসে থাকতে দেখা গেছে তাকে।
পিটারসেনকে ফেরালেন মিরাজ
বাংলাদেশ রিভিউ নিলে ফিরে যেতে হতো ১৪ রানে। ‘বেঁচে’ যাওয়ার পর আস্থার সঙ্গে খেলছিলেন কিগান পিটারসেন। ডানহাতি এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে থামালেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
গুড লেংথ বল পিছিয়ে গিয়ে ঠিক মতো খেলতে পারেননি পিটারসেন। বলে চোখ রেখে শর্ট লেগে চমৎকার ক্যাচ নেন মাহমুদুল হাসান জয়। ৮৫ বলে চারটি চারে ৩৬ রান করেন পিটারসেন।
ক্রিজে টেম্বা বাভুমার সঙ্গী অভিষিক্ত রায়ান রিকেলটন।
জন্মদিনে এলগারের উইকেট পেলেন তাসকিন
বল হাতে পাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হলো তাসকিন আহমেদকে। তবে ২৭তম জন্মদিনে উইকেট নিতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না গতিময় এই পেসারকে। দারুণ এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ করে দিলেন ডিন এলগারকে।
অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে সুইং করে ভেতরে ঢোকা বল ডিফেন্সের চেষ্টায় ব্যর্থ দেন বাঁহাতি এই ওপেনার। আম্পায়ার জোরাল আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নেন মুমিনুল হক।
ইনিংসে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সফল রিভিউ। অন্য ওপেনার এরেল সারউইকেও এলবিডব্লিউর রিভিউ নিয়েই ফিরিয়েছিল সফরকারীরা।
পরে দেখা গেছে, ব্যাট স্পর্শ করেনি বল। ইম্প্যাক্ট ছিল অফ স্টাম্পে, বল আঘাত হানতো মিডল স্টাম্পের উপরের দিকে। পাল্টায় সিদ্ধান্ত।
ভাঙে ১১৪ বল স্থায়ী ৬৮ রানের জুটি।
ম্যাচে দ্বিতীয় ফিফটি পাওয়া এলগার ১০২ বলে ৭ চারে করেন ৬৪ রান।
তিন সুযোগ আর এক উইকেট
দিনের প্রথম সেশেন ২৯ ওভার বোলিং করে কেবল উদ্বোধনী জুটিই ভাঙতে পেরেছে বাংলাদেশ। এই সময়ে ৯৯ রান যোগ করে লিড দুইশর পথে এগিয়ে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
চতুর্থ দিন লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার সময় দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ১ উইকেটে ১০৫। ৯২ বলে ৬২ রানে খেলছেন ডিন এলগার। ৫৫ বলে ২১ রানে ব্যাট করছেন কিগান প্যাটারসন।
প্রথম ইনিংসে ৬৯ রানের লিড নেওয়া স্বাগতিকরা এগিয়ে ১৭৪ রানে।
এই চিত্রে বোঝা যাচ্ছে না প্রথম সেশনে কতটা ভালো বোলিং করেছে বাংলাদেশ। সৈয়দ খালেদ আহমেদ, ইবাদত হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজের বলে হয়েছে এলবিডব্লিউর জোরাল বেশ কিছু আবেদন।
ইবাদতের বলে সফল রিভিউ নিয়ে সারেল এরউইকে বিদায় করে বাংলাদেশ। উইকেট বাড়তে পারতো আরও কিন্তু সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।
৩৪ ও ৪৩ রানে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বাঁচেন এলগার। মিরাজের বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ ছাড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত। পরে ইবাদতের বলে দ্বিতীয় স্লিপে ব্যর্থ হন ইয়াসির আলি চৌধুরি।
ব্যক্তিগত ১৪ রানে ফিরতে পারেন পিটারসেন। খালেদের বলে তার বিপক্ষে সফরকারীরা এলবিডব্লিউর রিভিউ না নেওয়ায় ‘বেঁচে’ যান তিনি।
উইকেটে স্পিনারদের জন্য সহায়তা আগের চেয়ে অনেকটাই বেড়েছে। মিরাজ ও মুমিনুল হক বেশ টার্ন পেয়েছেন। কিছু কিছু বল নিচুও হয়েছে।
এখন পর্যন্ত কেবল একটি ওভার করেছেন তাসকিন আহমেদ। লাঞ্চের আগে দ্বিতীয় শেষ ওভারে তাকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক মুমিনুল হক।
সুযোগ হাতছাড়া
রিভিউ না নেওয়ায় হাতছাড়া হয়ে গেল কিগান পিটারসেনকে ফেরানোর সুযোগ। এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যেতেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।
সৈয়দ খালেদ আহমেদের চমৎকার এক ডেলিভারি ডিফেন্স করার চেষ্টায় সফল হননি পিটারসেন। সুইং করে ভেতরে ঢুকে তার ব্যাটের কানা এড়িয়ে লাগে প্যাডে। আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নেননি মুমিনুল হক। এ নিয়ে তেমন কোনো কথাও হয়নি সফরকারীদের মধ্যে।
পরে দেখা গেছে ইম্প্যাক্ট ছিল অফ স্টাম্পের ভেতরে। বল লাগতো মিডল স্টাম্পে। সে সময় ১৪ রানে ছিলেন পিটারসেন।
এলগারের ফিফটি, লিড ছাড়াল দেড়শ
দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় থাকা ডিন এলগার পঞ্চাশ স্পর্শ করলেন ৭৩ বলে।
সৈয়দ খালেদ আহমেদের ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচের মতো উঠেছিল কিন্তু গালিতে লাফিয়েও নাগাল পাননি মাহমুদুল হাসান জয়। বাউন্ডারি পেয়ে যান বাঁহাতি ওপেনার। এই চারেই স্বাগতিক অধিনায়ক পৌঁছান পঞ্চাশে।
২৫ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ১ উইকেটে ৮৩। স্বাগতিকরা এগিয়ে ১৫২ রানে।
আবার বাঁচলেন এলগার
চার ওভারের মধ্যে দুবার জীবন পেলেন ডিন এলগার। এবার তার ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হলেন ইয়াসির আলি।
ইবাদত হোসেনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে দিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক। ঠিক মতো পারেননি, ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ যায় দ্বিতীয় স্লিপে। কিন্তু মাথার উপর দিয়ে যাওয়া বলে হাত ছোঁয়ালেও মুঠোয় জমাতে পারেননি ইয়াসির। সে সময় ৪৩ রানে ছিলেন এলগার।
এর আগে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে প্রথম স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তকে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান বাঁহাতি এই ওপেনার।
শান্তর ব্যর্থতায় বাঁচলেন এলগার
দারুণ বোলিং করে যাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ উইকেট পেতে পেতেও পেলেন না। হাতছাড়া হয়ে গেল ডিন এলগারকে ফেরানোর সুযোগ।
অফ স্পিনারের বলে ঠিক মতো ড্রাইভ করতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক। ক্যাচ যায় স্লিপে, কিন্তু জমাতে পারেননি শান্ত। সে সময় ৩৪ রানে থাকা এলগার পরের বলেই মারেন চার।
শুরুর জুটি ভাঙলেন ইবাদত
ইবাদত হোসেনের বলে বেশ ভুগছিলেন সারেল এরউই। বাঁহাতি এই ওপেনার শেষ পর্যন্ত ফিরলেন গতিময় পেসারের বলে এলিবিডব্লিউ হয়ে।
অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে সুইং করে ভেতরে ঢোকা বল ব্যাটে খেলতে পারেননি এরউই। আম্পায়ার জোরাল আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক।
পরে দেখা গেছে, ব্যাট স্পর্শ করেনি বল, লাগতো লেগ স্টাম্পে। পাল্টায় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত। ভাঙে ৪৮ রানের জুটি।
এরউই ৫১ বলের ধৈর্যশীল ইনিংসে করেন ৮ রান।
প্রথম ঘণ্টায় ১৪.৩ ওভারে ৪২ রান তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এতে সবচেয়ে বড় অবদান এলগারের। তিনি ৬০ বলে ব্যাট করছেন ৩৪ রানে।
শতরান ছাড়াল লিড
চতুর্থ দিন সকালে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করছেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার ডিন এলগার ও সারেল এরউই।
অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের ওভারে রান আসছে না। কিন্তু পেসারদের বলে সহজেই রান করছেন দুই বাঁহাতি ওপেনার।
ত্রয়োদশ ওভারে বোলিংয়ে আসেন ইবাদত হোসেন। তার দ্বিতীয় বলে ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারি মারেন এলগার। সেই শটেই একশ ছাড়ায় সফরকারীদের লিড।
এক বল পর কিছুটা উত্তেজনা ছাড়ায় মাঠে। ব্যাটসম্যান জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলেও হতাশা থেকে অকারণে থ্রো করেন ইবাদত। ঝাঁপিয়ে ঠেকান লিটন দাস। যদিও এলগারকে লক্ষ্য করে থ্রো করা হয়নি, তবুও এটা ভালোভাবে নেননি বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তিনি কিছু একটা বলেন বোলারকে। ইবাদতও দেন পাল্টা জবাব। পরে আম্পায়ার এসে সরিয়ে নেন বোলারকে।
আম্পায়ার্স কলে বাঁচলেন এলগার
দিনের দ্বিতীয় ওভারেই মিলতে পারতো উইকেট। কিন্তু আম্পায়ার্স কলে বেঁচে গেলেন ডিন এলগার।
মেহেদী হাসান মিরাজের মিডল স্টাম্পে পড়ে স্পিন করে বেরিয়ে যাওয়া বল ব্যাটে খেলতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক। প্যাডে ছুঁয়ে বল চলে যায় সীমানার বাইরে।
আম্পায়ার জোরাল আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। পরে রিভিউয়ে দেখা যায়, বল লাগতো অফ স্টাম্পের বাইরের দিকে। সে সময় ৭ রানে ছিলেন এলগার।
দ্রুত উইকেট চায় বাংলাদেশ
তৃতীয় দিন শেষে ডারবান টেস্ট দাঁড়িয়ে রোমাঞ্চকর এক মোড়ে। ১০ উইকেট হাতে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা এগিয়ে ৭৫ রানে। এখান থেকে নিজেদের নিরাপদ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে বাংলাদেশকে অলআউট করতে হাতে রাখতে হবে যথেষ্ট ওভার।
এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে জেমি সিডন্স দলকে দিয়েছেন আঁটসাঁট বোলিংয়ে চতুর্থ দিন প্রথম সেশনে তিন-চার উইকেট নেওয়ার তাগিদ। বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচের মতে, লাঞ্চের আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ৮০-৯০ রান করে ফেললে ম্যাচ থেকে ছিটকে যাবেন তারা।
তৃতীয় দিন শেষের ছবি
আগের দিন ৯৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে তিনশর কাছে নিয়ে যান মাহমুদুল হাসান জয়। প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা স্থায়ী ম্যারাথন ইনিংসে করেন ১৩৭ রান। তরুণ এই ওপেনারের চমৎকার ইনিংসের জন্যই দক্ষিণ আফ্রিকা ৬৭ রানের চেয়ে বড় লিড নিতে পারেনি।
পরে দ্বিতীয় ইনিংসে কেবল ৪ ওভার ব্যাট করতে পার দক্ষিণ আফ্রিকা। আলোকস্বল্পতা ও বৃষ্টিতে ১৭ ওভার কম খেলা হয়।
তৃতীয় দিন শেষে ৭৫ রানে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা, হাতে রয়েছে ১০ উইকেট। ৩ রান করে অপরাজিত দুই ওপেনার ডিন এলগার ও সোরেল এরউই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৩৬৭
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৯৮/৪) ১১৫.৫ ওভারে ২৯৮ (জয় ১৩৭, তাসকিন ১, লিটন ৪১, ইয়াসির ২২, মিরাজ ২৯, খালেদ ০, ইবাদত ০*; অলিভিয়ের ১৫-৫-৩৬-১, উইলিয়ামস ১৮.৫-৩-৫৪-৩, হার্মার ৪০-১২-১০৩-৪, মহারাজ ৩৭-১৫-৬৫-০, এলগার ১-০-৮-০, মুল্ডার ৪-১-২৩-১)
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ৪ ওভারে ৬/০ (এরউই ৩*, এলগার ৩*; খালেদ ১-০-১-০, মিরাজ ২-১-২-০, শান্ত ১-০-৩-০)