আশরাফুলের মন্থর ফিফটির পর সাইফের স্ট্রোকের দ্যুতি

প্রথম দুই ম্যাচে রান তাড়ায় ব্যাটিংয়ে নেমে মোহাম্মদ আশরাফুল বিদায় নেন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগে। এবার আগে ব্যাটিং পেয়ে তিনি ফিফটি করলেন বটে, কিন্তু তার ইনিংসটি ভীষণ ধীরগতির। তাকে আউট করলেন যিনি, সেই সাইফ হাসানের ব্যাটে পরের ভাগে দেখা গেল স্ট্রোকের ফুলঝুরি। প্রায় একশ স্ট্রাইক রেটে খেললেন দুর্দান্ত ইনিংস। ব্রাদার্স ইউনিয়নকে গুঁড়িয়ে দিল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2022, 03:45 PM
Updated : 25 March 2022, 03:57 PM

প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে শুক্রবার শেখ জামালের জয় ৮ উইকেটে। ইউল্যাব ক্রিকেট মাঠে ১৫৯ রানের লক্ষ্য তারা ছুঁয়ে ফেলে ১০২ বল হাতে রেখে।

ব্রাদার্সের হয়ে সর্বোচ্চ রান আসে অধিনায়ক আশরাফুলের ব্যাট থেকে। তবে ৫৫ রানের ইনিংসে তিনি খেলেন ৯৬ বল! চার আছে ৭টি।

প্রতিপক্ষকে অল্প রানে গুটিয়ে দিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন পারভেজ রসুল। ভারতীয় এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডারের বোলিং ফিগার অবিশ্বাস্য। ১০ ওভারের পাঁচটিই মেডেন, স্রেফ ৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা তিনিই।

পরে ৮৫ বলে ৮১ রানের আলো ঝলমলে ইনিংস উপহার দেন সাইফ। ১৩টি চারের পাশে ছক্কা একটি।  লিগে চার ম্যাচে ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের তৃতীয় ফিফটি এটি। প্রথমবার ষাট, এরপর সত্তর, এবার আশির ঘরে গিয়ে আউট হলেন তিনি।

উইকেট থেকে স্পিনারদের জন্য মিলেছে সহায়তা। শেখ জামাল অধিনায়ক ইমরুল কায়েস টস জিতে বোলিং নিয়ে দ্বিতীয় ওভারেই আক্রমণে আনেন রসুলকে। তার হাত ধরেই আসে প্রথম সাফল্য। বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন সাদিকুর রহমান।

অষ্টম ওভারে মাইশুকুর রহমানকে এলবিডব্লিউ করে দেন  আরেক স্পিনার সানজামুল ইসলাম। দারুণ কিছু শটে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ২৮ রান করে ইমতিয়াজ হোসেন এলবিডব্লিউ হন রসুলের বলে।

পরে তার বলেই কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন রাফসান আল মাহমুদ। যদিও আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায় তাকে। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন উইকেটে।

সানজামুলের বলে স্টাম্পড হয়ে আমিনুল ইসলাম বিপ্লব যখন বিদায় নেন, ৭২ রানে ব্রাদার্সের নেই ৫ উইকেট। এরপর আশরাফুল ও লেজের ব্যাটসম্যানদের ছোট ছোট অবদানে কোনোমতে দেড়শ ছাড়াতে পারে তারা।

আশরাফুল ৭৮ বলে ফিফটি করার পর সাইফ বলে এলবিডব্লিউ হয়ে থামেন। সানজামুল ও সুমন খান নেন ২টি করে উইকেট।

রান তাড়ায় সাইফ রানের খাতা খোলেন দ্বিতীয় ওভারে আবু হায়দার রনিকে পরপর দুটি চার মেরে। প্রথমটি বেরিয়ে এসে মিড অফের ওপর দিয়ে, পরেরটি স্ট্রেইট ড্রাইভে। চতুর্থ ওভারে স্পিনার সাকলাইন সজিবকে ইনসাইড আউটে চার মারার পর শেষ বলে বাউন্ডারি মারেন আরেকটি। 

ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান পরে লেগ স্পিনার বিপ্লবের পরপর তিন বলে দারুণ শটে হাঁকান একটি ছক্কা ও দুটি চার। সাকলাইনকে চার মেরে ফিফটি পূর্ণ করেন ৫৫ বলে।

১১১ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে সৈকত আলির বিদায়ে (৩৮)। সাইফ সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে বিদায় নেন লেগ স্পিনার রায়হান উদ্দিনের বলে স্টাম্পড হয়ে।

জহুরুল ইসলামকে (১১*) সঙ্গে নিয়ে বাকিটা সারেন অধিনায়ক ইমরুল (২৪*)।

দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচের সেরা পারভেজ রসুল। ছবি: ওয়ালটন

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৪৪.১ ওভারে ১৫৮ (ইমতিয়াজ ২৮, সাদিকুর ১, মাইশুকুর ১, আশরাফুল ৫৫, রাফসান ২, আমিনুল ৪, শামসুল ১৫, রাইহানউদ্দিন ১৪, আবু হায়দার ১২, নাঈম জুনিয়র ১০, সাকলাইন ০*; সুমন ৪-০-৩৪-২, রসুল ১০-৫-৯-২, সানজামুল ১০-১-৪২-২, মৃত্যুঞ্জয় ৫.১-২-১৬-১, তাইবুর ৬-০-১৯-০, রবি ৪-০-২২-০, সাইফ ৫-০-১৪-১)

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৩৩ ওভারে ১৬০/২ (সৈকত ৩৮, সাইফ ৮১, ইমরুল ২৪*, জহুরুল ১১*, নাঈম জুনিয়র ৯-১-৩০-০, আবু হায়দার ১-০-৮-০, সাকলাইন ১০-৩-৩০-০, আশরাফুল ৫-০-২৯-০, আমিনুল ২-০-২৮-০, রায়হান ৪-০-২৪-২, রাফসান ২-০-১১-০)

ফল: শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ৮ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: পারভেজ রসুল।

অভিষেকের ব্যাটে শাইনপুকুরের জয়

নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে হাসান মুরাদ লক্ষ্যটা রাখলেন নাগালে। রান তাড়ায় অভিষেক মিত্র খেললেন দারুণ ইনিংস। সঙ্গে মাহিদুল ইসলামের অপরাজিত ফিফটিতে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে হারাল শাইনপুকুর।

বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের জয় ৪ উইকেটে। ২৪৮ রানের লক্ষ্য ১৩ বল হাতে রেখে পেরিয়ে যায় তারা।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে একশর আগেই প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে হারায় গাজী গ্রুপ। সেখান থেকে তারা আড়াইশ কাছাকাছি পুঁজি পায় মূলত আকবর আলী ও গুরিন্দার সিংয়ের ব্যাটে। পঞ্চম উইকেটে তারা গড়েন ৮৫ রানের জুটি।

৬০ বলে ৭ চার ও একটি ছক্কায় ৬১ রান করেন অধিনায়ক আকবর। ৬৯ বলে ২ চার একটি ছক্কায় ৪৯ রান গুরিন্দারের। শেষ দিকে ২টি করে চার-ছক্কায় ১৭ বলে ৩২ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন জুবারুল ইসলাম।

১০ ওভারে ২৫ রানে ৩ উইকেট নেন বাঁহাতি স্পিনার মুরাদ। অফ স্পিনার নাঈম ইসলাম ৪৫ রানে নেন ২টি। 

রান তাড়ায় আনিসুল ইসলাম ইমন বিদায় নেন শুরুতে। দলকে এগিয়ে নেন অভিষেক ও তাসামুল হক। তাসামুলের (৪৫) বিদায়ে ভাঙে ৮৯ রানের জুটি।

৪৫ বলে ফিফটি করে সেঞ্চুরির পথে ছুটতে থাকা অভিষেককে থামান মাহমুদুল হাসান। এরপর দ্রুত সিকান্দার রাজা, সাজ্জাদুল হক ও আলাউউদ্দিন বাবুর বিদায়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় শাইনপুকুর। তবে ৯১ বলে অপরাজিত ৫৩ রানের ইনিংসে দলের জয় নিয়ে ফেরেন কিপার-ব্যাটসম্যান মাহিদুল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৫০ ওভারে ২৪৭/৮ (মারুফ ২২, মাহমুদুল ৭, ফরহাদ ৪৩, আল-আমিন ৯, আকবর ৬১, গুরিন্দার ৪৯, সাঈদ ৫, জুবারুল ৩২*, অনিক ২, হাবিব ১০*; আলাউদ্দিন ৯-০-৫১-০, আসাদুজ্জামান ৯-২-৪৪-০, মুরাদ ১০-১-২৫-৩, আনিসুল ১-০-৭-০, নাঈম ৯-০-৪২-২, রাজা ৭-০-৪০-১, রাহাতুল ৫-০-৩৪-০)

শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ৪৭.৫ ওভারে ২৫০/৬ (অভিষেক ৮৬, আনিসুল ১০, তাসামুল ৩৫, মাহিদুল ৫৩*, রাজা ১০, সাজ্জাদুল ১৭, আলাউদ্দিন ১, রাহাতুল ১৪*; আশিকুর ৯-১-৩৯-১, গুরিন্দার ১০-০-৫০-১, হাবিব ১০-০-৪৬-২, অনিক ৯-০-৫০-১, মাহমুদুল ৯.৫-০-৫৭-১)

ফল: শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: অভিষেক মিত্র।