অনেক নাটকের পর দক্ষিণ আফ্রিকায় যাচ্ছেন সাকিব

দুবাই থেকে ফিরে বৃহস্পতিবার রাতে এক দফা বৈঠক, শুক্রবার ফোনালাপ। শেষ নয় সেখানেই, শনিবার আরেক দফায় বৈঠক বিসিবিতে। সাকিব আল হাসান ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের তিন দফা আলোচনা শেষে এলো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। অনেক অনিশ্চয়তা ও বারংবার সিদ্ধান্ত বদলের পালা শেষে বিশ্রামকে ছুটি দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাচ্ছেন সাকিব।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2022, 08:15 AM
Updated : 12 March 2022, 10:09 AM

বিসিবিতে শনিবার দুপুরে বিসিবি সভাপতিকে পাশে রেখে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব নিজেই জানালেন, তিন সংস্করণ তিনি খেলা চালিয়ে যেতে চান এবং সেটির শুরু দক্ষিণ আফ্রিকা সফর দিয়েই।

সাকিবের সিদ্ধান্ত এলো এমন এক দিনে, তিন ভাগে দক্ষিণ আফ্রিকার পথে থাকা বাংলাদেশ স্কোয়াডের শেষ গ্রুপটিও যেদিন সকালে ঢাকা ছেড়ে গেছে। সাকিব জানালেন, তিনি রওনা হবেন রোববার রাতে।

সাকিবের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে টানাপোড়েন, ছুটি, বিশ্রাম, এসব নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে চলছিল ঝড়। গত বুধবার বিসিবি যখন ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্রাম দিল অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারকে, তখন সেই ঝড়ের আপাতত সমাপ্তি বলেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নাটক নতুন মোড় নিল এবার।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, “গোটা বছরের প্রোগ্রাম নিয়ে ওর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার পর একটা সিদ্ধান্ত আমাদেরকে দিয়েছে ও। সিদ্ধান্ত কী নিয়েছে, ওর কাছ থেকেই শুনুন আপনারা।”

সাকিব জানান, তিন সংস্করণেই খেলতে তিনি প্রস্তুত। ছুটি বা বিশ্রামের সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড।

“যেটা হচ্ছে যে, পাপন ভাইয়ের (নাজমুল হাসান) সঙ্গে কথা হয়েছিল গত পরশু রাতে। কালকেও কথা হয়েছে, আজকেও হয়েছে বোর্ডে। আমরা গোটা বছরের পরিকল্পনা করতে পেরেছি। যেহেতু আমি তিনটি ফরম্যাটেই আছি (বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে), কাজেই তিনটি ফরম্যাটেই আমাকে পাওয়া যাবে সবসময়। বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে, কোন সময় আমাকে বিশ্রাম দেওয়া জরুরি বা নেওয়া দরকার, বোর্ড সেটা সিদ্ধান্ত নেবে, এই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজসহ। তো এই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও আমাকে পাওয়া যাবে।”

গত রোববার দুবাই যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাকিব বলেন, এই মুহূর্তে ক্রিকেট খেলার মতো শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় তিনি নেই। এই অবস্থায় দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গেলে দেশের সঙ্গে গাদ্দারি ও সতীর্থদের প্রতি প্রতারণা হবে বলেও মনে করেন তিনি।

বিসিবি সভাপতি বললেন, মানসিক অবস্থা বিবেচনা করেই সাকিবকে গত দুই দিনে তিনি বারবার ভাবতে বলেছেন।

“পরশু দিন এসে আমাকে বলেছে ও একটু মেন্টালি ডিস্টার্বড। এটা আমরা সকলেই, কোনো না কোনো সময় হয়। মেন্টালি ডিস্টাবর্ড থাকতেই পারে। মেন্টালি ডিস্টার্বড বলে ওর একটু সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছিল। যাহোক, আমার সঙ্গে ওর লম্বা আলাপ আলোচনা হয়েছে। এরপর সে বলেছে, সব ফরম্যাটে খেলতে ইচ্ছুক। পরশু এটা বলার পর আমি বলেছি, ‘আজকে বিশ্রাম নাও, মাথা ঠাণ্ডা করে চিন্তা করে জানিয়ো।’ কালকে আবার ফোন করে বলেছে যে খেলতে চায়।”

“আমি তারপরও ওকে সময় দিলাম যে কালকে বোর্ডে আসো। আজকে টোটাল প্রোগ্রাম নিয়ে তার সঙ্গে বসলাম। এখন, একটা-দুইটা সিরিজ যদি কেউ না খেলে, এত আলোচনার কিছু নেই। বোর্ডও কাউকে ড্রপ দিয়ে নতুন কাউকে নিতে পারে। এটাকে স্পোর্টিংলি নেন, খেলারই অংশ এবং সারা পৃথিবীতে এটাই হয়ে আসছে।”

সাকিবের মানসিক অবস্থার তুলে ধরতে গত কয়েকদিনের নানা টানাপোড়েনের কথা উল্লেখ করলেন নাজমুল হাসান।

“ওর যদি ধারাবাহিকতা আপনি দেখেন, ও আমাকে প্রথমে বলেছিল, ছুটি চায়। তার পর বলল, খেলবে। তার পর আবার বলল, ও ফিট নয়। তার পরে আবার বলল খেলবে না, আবার বলছে খেলবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে মানসিকভাবে যে একটু সমস্যায় আছে, সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে।”

“আমরা এখন ওকে সাপোর্ট করি, ওকেই সিদ্ধান্ত নিতে দেই। এখানে কোনো চাপ নেই, কিচ্ছু নেই। স্বতস্ফূর্তভাবে যদি সাকিব খেলতে চায়, অবশ্যই স্বাগত।

এই সময়টায় সংশ্লিষ্ট সবারই সাকিবের পাশে থাকা উচিত বলে মনে করেন বোর্ড প্রধান।

“সাকিব যেহেতু আমাকে বলেছে যে ও একটু মেন্টালি ডিস্টার্বড, আমার মনে হয়, এই সময়টায় আমাদের সবার সাকিবের পাশে থাকা উচিত, ওর সঙ্গে থাকা উচিত, মানসিক শক্তি দেওয়া উচিত ওকে। কাজেই এটা নিয়ে আর বেশি আলোচনা, যে সমস্ত লেখালেখি, টক শো হচ্ছে, এটা কারও জন্যই ভালো নয়। একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, সাকিব-তামিম-মুশফিক-রিয়াদ-মাশরাফি, ওরা অনেক দিয়েছে, অনেক কিছু করেছে দেশের জন্য। এটা অস্বীকার করার পথ নেই।”

“মানুষের কোনো একটা সময় শারীরিক বা মানসিক সমস্যা হতেই পারে। ওই সময়টায় আমাদের উচিত তাদের পাশে থাকা, বোর্ডেরও উচিত। আমরা সবসময় ওদের পাশে আছি, সামনেও থাকব।”

সাকিব অবশ্য পরে বললেন, মানসিকভাবে এখন তিনি ভালো জায়গায় আছেন।

বিসিবি সভাপতি জানালেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্টের সিরিজের কোনো ম্যাচে সাকিবকে বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে।

“আমার ধারণা, বেশির ভাগ ম্যাচেই ও খেলবে। এমনও হতে পারে, কোনো একটা ম্যাচে আমরা নাও খেলাতে পারি। ওর তো ইচ্ছে করতে নাও পারে খেলতে।”

“দক্ষিণ আফ্রিকা আমার জানা মতে, সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন সিরিজ খেলতে যাচ্ছি আমরা। আমাদের উপমহাদেশে সবচেয়ে শক্তিশালী হলো ভারত। ওরা তো কিছুদিন আগে হোয়াইটওয়াশড হয়ে এসেছে। আমি নিশ্চিত, সাকিবের অন্তর্ভুক্তিতে টিম স্পিরিট অনেক বেড়ে যাবে।”