সবশেষ গত নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল থেকে এবারের দলে পরিবর্তন আরও বেশ কিছু। ১৬ সদস্যের সেই স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, সাইফ হাসান, নুরুল হাসান সোহান, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, শামীম হোসেন ও আকবর আলি।
এবার ১৪ জনের দলের নতুন মুখ কেবল মুনিম। মুশফিক ও লিটনের পাশাপাশি দলে ফিরেছেন সাকিব আল হাসান। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে চোটের কারণে ছিলেন না এই অলরাউন্ডার।
ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও টিকে গেছেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ।
প্রথমবার সুযোগ পেলেও মুনিমের ডাক পাওয়া খুব বিস্ময়কর নয়। বিপিএলে এবার ফরচুন বরিশালের হয়ে ৬ ম্যাচে ১৭৮ রান করেন তিনি ১৫২.১৩ স্ট্রাইক রেটে। ভয়ডরহীন ও আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে নিজেকে আলাদা করে চেনান তিনি। উইকেটের চারপাশে খেলার পাশাপাশি উদ্ভাবনী সব শট খেলেও দেখিয়ে দেন নিজের শটের পরিধি।
বিপিএলে অভিষেক আসরে ঝড়ো ব্যাটিংয়ের আগে গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতেও একই ঘরানার ব্যাটিং দেখিয়ে আলোচনায় উঠে আসেন ময়মনসিংহের ২৩ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। আবাহনী লিমিটেডের হয়ে ওই টুর্নামেন্টে ১৩ ইনিংসে ৩৫৫ রান করেন ১৪৩.১৪ স্ট্রাইক রেটে।
মুনিমের ডাক পাওয়া ছিল যতটা প্রত্যাশিত, ততটাই বিস্ময় জাগানিয়া নাঈম শেখের টিকে যাওয়া। যদিও গত বছর টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান আসে তার ব্যাট থেকেই। তবে তাকে নিয়ে মূল প্রশ্ন স্ট্রাইক রেটে। গত বছর ২৬ ইনিংসে ৫৭৫ রান করেন তিনি কেবল ১০০.৩৪ স্ট্রাইক রেটে।
সবশেষ সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে তিনি করেন ১ ও ২। তৃতীয় ম্যাচে ৪৭ রান করতে পারলেও বল খেলেন ৫০টি। আরও বিপর্যস্ত অবস্থা ছিল তার বিপিএলে।
বিপিএলে মিনিস্টার ঢাকার হয়ে ওপেন করার সুযোগই তিনি সেভাবে পাননি। তাদের হয়ে ইনিংস শুরু করেন তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ শাহজাদ। নাঈম কখনও তিনে, কখনও চারে, এমনকি সাত-আটেও খেলেন। পারফর্ম করতে পারেননি কোনো জায়গায়। এক ম্যাচে তিনে নেমে ১৫ রান করতে খেলেন ৩০ বল! একাদশে জায়গাও হারান এক পর্যায়ে। শেষ ম্যাচে ওপেন করার সুযোগ পেয়ে করেন ৯ বলে ৬ রান। সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টে ৭ ইনিংস খেলে তার রান ৫০।
এতটা খারাপ না করলেও বিপিএলে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি মুশফিক ও লিটনও। খুলনা টাইগার্সের হয়ে ৯ ইনিংসে মুশফিক ফিফটির দেখা পান কেবল একটিতে। ২৫১ রান করেন ১২৯.৩৮ স্ট্রাইক রেটে।
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান সিরিজে তাকে বাইরে রাখার সময় নির্বাচকরা বলেছিলেন বিশ্রাম দেওয়ার কথা। মুশফিক যদিও পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেছিলেন, এটিকে তিনি বাদ পড়া হিসেবে ধরে নিয়েই দলে ফেরার চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন। আপাতত সেই চ্যালেঞ্জে তাকে জয়ী বলা যায়।
বাদ পড়াদের মধ্যে অপ্রত্যাশিত নাম নেই একটিও। নাজমুল হোসেন শান্ত পাকিস্তান সিরিজের ৩ ম্যাচে করেন ৭, ৪০ ও ৫। বিপিএলও তার কেটেছে যাচ্ছেতাই, ১০ ইনিংস খেলে কোনো ফিফটি নেই, ১৮৮ রান করতে পারেন কেবল ৯১.৭০ স্ট্রাইক রেটে।
অনেক আশা জাগিয়ে দলে আসা শামীম বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর পাকিস্তান সিরিজে এক ম্যাচ খেলে করেন ২৩ বলে ২২। বিপিএলে ১০ ইনিংস খেলে ১ ফিফটিতে মোট ১৬৪ রান করেন ১১৭.১৪ স্ট্রাইক রেটে।
বিস্ময়করভাবে পাকিস্তান সিরিজের টি-টোয়েন্টি দলে ডাক পাওয়া সাইফ হাসান দুই ম্যাচ খেলে করেছিলেন ১ ও ০ রান। বিপিএলে তিনি দলই পাননি।
শামীমের মতোই আশা পূরণ করতে ব্যর্থ নুরুল হাসান সোহান। বাংলাদেশের হয়ে ৩০ টি-টোয়েন্টি খেলে তার সর্বোচ্চ রান ৩০। গত বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর পাকিস্তান সিরিজ হয়ে ব্যর্থতার ধারা চলে তার বিপিএলেও। ফরচুন বরিশালের হয়ে ৯ ইনিংসে স্রেফ ৬৬ রান করেন ৯০.৪১ স্ট্রাইক রেটে।
লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের বাদ পড়া সেদিক থেকে খানিকটা কৌতূহল জাগানিয়া। সবশেষ পাকিস্তান সিরিজে খুব খারাপ করেননি। প্রথম ম্যাচে মাত্র দুই বল করলেও পরের দুই ম্যাচে একটি করে উইকেট নেন ৪ ওভারে ২৬ ও ৩০ রান দিয়ে। পরে বিপিএলের ড্রাফটে তাকে নেয়নি কেউ। ড্রাফটের পর মিনিস্টার ঢাকা দলে জায়গা পেলেও ম্যাচ খেলতে পারেননি একটিও।
কিপার-ব্যাটসম্যান আকবর আলি বাদ পড়লেন কোনো ম্যাচ না খেলেই। বিপিএলটা অবশ্য ভালো কাটেনি তার।
সবশেষ সিরিজের স্কোয়াডে থেকেও ম্যাচ খেলার সুযোগ না পাওয়া শহিদুল ইসলাম ও ইয়াসির আলি চৌধুরি টিকে গেছেন দলে। দুজনেরই বিপিএল পারফরম্যান্স ছিল বেশ ভালো।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি সিরিজের ম্যাচ দুটি হবে ৩ ও ৫ মার্চ, মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে।
বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দল: মাহমুদউল্লাহ (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, মুনিম শাহরিয়ার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন, শেখ মেহেদি হাসান, ইয়াসির আলি চৌধুরি, মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, শহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ নাঈম শেখ।