বড় ইনিংস পাওনা ছিল এই দুজনের কাছ থেকেই। খুলনা দলের যেমন, তেমনি বাংলাদেশ ক্রিকেটেরও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এমন অভিজ্ঞ দুজনের ব্যাট বিপিএলে প্রত্যাশিত সুর না তুললে হতাশা থাকারই কথা। অবশেষে আক্ষেপ-হাহুতাশের পালা শেষে বড় ইনিংস খেললেন সৌম্য ও মুশফিক। দুজনের দারুণ ব্যাটিং আর দুর্দান্ত জুটিতে সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে প্রত্যাশিত জয় পেল খুলনা টাইগার্স।
ম্যাচের আগে অধিনায়ক বদলে ফেলা সিলেট বিপিএলের সিলেট পর্ব শুরু করল হার দিয়ে। শেষের খানিকটা রোমাঞ্চের পর খুলনা টাইগার্সের জয় ১৫ রানে।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সোমবার খুলনা ২০ ওভারে তোলে ১৮২ রান। সিলেট রান তাড়ার বেশির ভাগ সময় অনেকটা পিছিয়ে থেকে শেষ দিকে একটু নাটকীয়তা ছড়িয়ে করতে পারে ১৬৭ রান।
খুলনার বড় স্কোর আর জয়ের ভিত গড়া হয় সৌম্য ও মুশফিকের ব্যাটে। বিপিএল ক্যারিয়ারে প্রথমবার পুরো ২০ ওভার ব্যাট করেন সৌম্য। নিজের সেরা বিধ্বংসী চেহারায় তিনি ছিলেন না। তবে চারটি করে চার ও ছক্কায় খেলেন ৬২ বলে ৮২ রানের কার্যকর ইনিংস। মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ৩৮ বলে ৬২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।
অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেটে দুজনের জুটি ৮৪ বলে ১৩১ রানের।
ম্যাচে সৌম্যর ভূমিকা শেষ হয়নি স্রেফ ব্যাটিংয়েই। শিশির ভেজা মাঠে ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে উইকেটও নেন তিনি দুটি। ম্যাচ সেরার লড়াইয়ে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
ম্যাচের শুরুতেই কৌতূহল জমে ওঠে সিলেটের হয়ে রবি বোপারা টস করতে নামায়। পরে দল থেকে জানানো হয়, স্বেচ্ছ্বায় নেতৃত্ব ছেড়েছেন আগের ৬ ম্যাচের অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন।
এই বোপারা বিতর্কের জন্ম দেন ম্যাচের নবম ওভারে নখ দিয়ে বল খুঁটে। বল টেম্পারিংয়ের শাস্তি হিসেবে ৫ রান যোগ হয় খুলনার ইনিংসে। বদলে ফেলা হয় বল।
ঘটনাবহুল ম্যাচের শুরুটাও ছিল নাটকীয়। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনা প্রথম ৩ বলে হারায় ২ উইকেট!
ফর্মে থাকা আন্দ্রে ফ্লেচার ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই ফিরে যান রান আউট হয়ে। পরের বলেই আউট তিনে নামা মেহেদি হাসান। সোহাগ গাজীর বলে তিনি ক্যাচ দেন স্লিপে।
খুলনার রান তখন ২ উইকেটে ১।
তবে জোড়া ধাক্কার পরও দলকে নড়বড়ে হতে দেননি ইয়াসির আলি চৌধুরি। তার ব্যাটেই খুলনার পাল্টা আক্রমণের শুরু। দুই উইকেট হারানোর পর ক্রিজে গিয়ে প্রথম দুই বলই তিনি বাউন্ডারিতে পাঠান দারুণ দুটি শটে।
তাসকিন আহমেদ চোটে ছিটকে পড়ায় সুযোগ পাওয়া একেএস স্বাধীন বিপিএল অভিষেকে ভাঙেন এই জুটি। স্টাম্প সোজা বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান ইয়াসির (১৮ বলে ২৩)।
সৌম্য-মুশফিকের জুটির যাত্রা শুরু সেখান থেকে। জুটির প্রথম তিন ওভারে আসেনি কোনো বাউন্ডারি। পরে সময়ের সঙ্গে তীব্র হতে থাকে রানের স্রোত।
আগের ম্যাচে ৪৩ রানে আউট হওয়া সৌম্য এবার ৪৩ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি। মুশফিকের রান এক পর্যায়ে ছিল ১৮ বলে ১৬। পরে ইনিংসের গতিপথ বদলে ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন স্রেফ ৩২ বলেই।
শেষ দিকে বোলারদের তুলাধুনা করে রান বাড়ান দুজন। শেষ ১০ ওভারে খুলনা তোলে ১০৩ রান।
প্রথম ওভারে টেম্পারিংয়ের জন্য শাস্তি পাওয়ার পর পুরো চার ওভারই শেষ করেন বোপারা। মোসাদ্দেক, আলাউদ্দিন বাবুরা বেশ মার খেলেও বিস্ময়করভাবে স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপুর হাতে বলই তুলে দেননি সিলেটের নতুন অধিনায়ক।
বড় রান তাড়ায় সিলেটের শুরুটায় ওঠেনি প্রত্যাশিত ঝড়। ওপেসার লেন্ডল সিমন্স ১০ রান করতে খেলে ফেলেন ১৭ বল।
আরেক ওপেনার এনামুল হক শুরুর ১২ রান করেন ১২ বলে। তবে এরপর দৃষ্টিনন্দন কিছু শটে তিনি জাগিয়ে তোলেন দলের আশা। তিনটি দারুণ ছক্কা আসে তার ব্যাট থেকে।
সেই আশার সমাপ্তিও তার ব্যাটেই। ৩৩ বলে ৪৭ রানের ইনিংস শেষ হয় থিসারা পেরেরার বলে ইয়াসির আলি রাব্বির দুর্দান্ত ক্যাচে।
এরপর মোহাম্মদ মিঠুন ও রবি বোপারার ব্যর্থতায় ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকে পড়ে সিলেট।
মন্থর শুরুর পর কলিন ইনগ্রাম পরে পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন কয়েকটি বড় শটে। কিন্তু ২৮ বলে ৩৭ করে থামতে হয় তাকেও। মোসাদ্দেক আসরে নিজের সেরা ব্যাটিংটা উপহার দেন এ দিন। ম্যাচ তবুও ছিল এক তরফা।
এরপর শেষ ওভারে ওই নাটক! হাতের জোর ও টাইমিং মিলিয়ে তিনটি ছক্কা মেরে সবাইকে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করেন আলাউদ্দিন বাবু। তবে চতুর্থ বলে তিনি শর্ট বল পেলেও নিতে পারেন কেবল ১ রান। শেষ ২ বল থেকে মোসাদ্দেক যোগ করতে পারেন আরেকটি রান। খুলনা অধিনায়ক মুশফিক যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন।
৭ ম্যাচে খুলনার এটি চতুর্থ জয়। সমান ম্যাচে সিলেট হারল ৫টিতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা টাইগার্স: ২০ ওভারে ১৮২/৩ (ফ্লেচার ১, সৌম্য ৮২*, মেহেদি ০, ইয়াসির ২৩, মুশফিক ৬২*; সোহাগ ৪-০-২৭-১, মোসাদ্দেক ৪-০-৪১-০, স্বাধীন ৪-০-৩৩-১, আলাউদ্দিন ৪-০-৩৮-০, বোপারা ৪-০-৩৪-০)
সিলেট সানরাইজার্স: ২০ ওভারে ১৬৭/৬ (সিমন্স ১০, এনামুল ৪৭, ইনগ্রাম ৩৭, মিঠুন ২, বোপারা ০, মোসাদ্দেক ৩৯*, অলক ২, আলাউদ্দিন ২৫*; খালেদ ৪-০-২৯-১, নাবিল ৪-০-২৭-১, কামরুল রাব্বি ৩-০-৪৬-০, মেহেদি ১-০-১৪-০, থিসারা ৪-০-২৩-২, সৌম্য ৪-০-২৭-২)
ফল: খুলনা টাইগার্স ১৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সৌম্য সরকার