ভারতকে উড়িয়ে ওয়ানডে সিরিজও দ. আফ্রিকার

নতুন বছরে একের পর এক ম্যাচ হেরেই চলেছে ভারত। তিনশর কাছাকাছি পুঁজি নিয়ে তারা লড়াইও করতে পারেনি। তাদের আবারও অনায়াসে হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2022, 04:44 PM
Updated : 21 Jan 2022, 05:56 PM

তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ৭ উইকেটে। পার্লে শুক্রবার ২৮৮ রানের লক্ষ্য স্বাগতিকরা ছুঁয়ে ফেলে ১১ বল বাকি থাকতে।

ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পর ৫০ ওভারের সিরিজও জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা। এই বছরে দেশটিতে দুই সংস্করণে চার ম্যাচ খেলে ভারত হারল সবগুলোই।

ভারতের হয়ে ৭১ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৮৫ রানের ইনিংস খেলেন কিপার-ব্যাটসম্যান রিশাভ পান্ত। তার সঙ্গে শতরানের জুটি গড়া লোকেশ রাহুল দুইবার জীবন পেয়ে করেন ৫৫ রান। বিরাট কোহলি আউট হন শূন্য রানে।

রান তাড়ায় ঝড়ো ফিফটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সুর বেঁধে দেন কুইন্টন ডি কক। শতরানের উদ্বোধনী জুটির পথে ৬৬ বলে ৭৮ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা তিনিই।

আরেক ওপেনার ইয়ানেমান মালান অল্পের জন্য পাননি সেঞ্চুরি, ১০৮ বলে করেন ৯১। প্রথম ম্যাচে জয়ের নায়ক রাসি ফন ডার ডাসেন এবার দলের জয় নিয়ে ফেরেন ৩৮ বলে ৩৭ রান করে।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারত পঞ্চম ওভারেই উইকেট হারাতে পারত, তবে গালিতে রাহুলের ক্যাচ নিতে পারেননি মালান। তখন ৭ রানে ব্যাট করছিলেন ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।

জীবন পেয়ে শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে দলকে এগিয়ে নেন রাহুল। দুজন গড়ে ফেলেন ৬৩ রানের জুটি। এরপর সফরকারীরা খায় জোড়া ধাক্কা। পরপর দুই ওভারে বিদায় নেন ধাওয়ান ও কোহলি।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরের পর প্রথমবার ওয়ানডেতে শূন্য রানে আউট হয়ে ফিরছেন বিরাট কোহলি। ছবি: রয়টার্স

এইডেন মারক্রামের অফ স্পিনে স্লগ সুইপ খেলে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দেন ধাওয়ান। প্রথম ম্যাচে ৭৯ রানের পর বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এবার করলেন ২৯। প্রথম ম্যাচে ফিফটি করা কোহলি এবার পাঁচ বল খেলে খুলতে পারেননি রানের খাতা। বাঁহাতি স্পিনার কেশভ মহারাজের বলে তিনি সহজ ক্যাচ তুলে দেন কাভারে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরের পর প্রথমবার ওয়ানডেতে শূন্য রানে আউট হলেন কোহলি। সব মিলিয়ে এই সংস্করণে তিনি ‘ডাক’ পেলেন ১৪ বার।

একটু পরই রাহুল ও পান্তের জুটি ভাঙতে পারত ৬ রানে। রান নেওয়ার চেষ্টায় দুই ব্যাটসম্যান ছিলেন একই প্রান্তে। রান আউটের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি স্বাগতিকরা।

দুই ব্যাটসম্যানই এরপর খেলেন দারুণ কিছু শট। মহারাজকে লং অনের ওপর দিয়ে ছক্কায় ওড়ানোর পর তাবরাইজ শামসির চার বলের মধ্যে তিনটি চার মারেন পান্ত। কিপার-ব্যাটসম্যান চতুর্থ ওয়ানডে ফিফটি পূর্ণ করেন মাত্র ৪৩ বলে।

৪৬ রানে আরেকবার ক্যাচ দিয়ে জীবন পেয়ে রাহুল পঞ্চাশে পা রাখেন ৭১ বলে। জুটির রানও ছাড়ায় একশ।

৩১ ওভার শেষে ভারতের রান ছিল ২ উইকেটে ১৭৯। সাড়ে তিনশর কাছাকাছি রানও তখন মনে হচ্ছিল সম্ভব। কিন্তু রাহুলের বিদায়ে ১১১ বলে ১১৫ রানের জুটি ভাঙতেই পাল্টে যায় চিত্র।

রাহুলকে ফিরিয়ে প্রথম ওয়ানডে উইকেটের স্বাদ পান মার্কো ইয়ানসেনের জায়গায় সুযোগ পাওয়া সিসান্ডা মাগালা। ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ৭৯ বলে ৪ চারে ৫৫ রানের ইনিংস শেষ হয় সহজ ক্যাচ দিয়ে।

তৃতীয় উইকেটে ১১৫ রানের জুটি গড়েন লোকেশ রাহুল ও রিশাভ পান্ত। ছবি: রয়টার্স

ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা পান্তকে পরের ওভারে বিদায় করেন শামসি। বাঁহাতি রিস্ট স্পিনারকে বেরিয়ে এসে ছক্কায় চেষ্টায় লং অনে ধরা পড়েন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ৭১ বলে ১০ চার ও ২ ছক্কায় গড়া তার ৮৫ রানের ইনিংস। তার আগের সর্বোচ্চ ছিল ৭৮।

শ্রেয়াস আইয়ার ও ভেঙ্কাটেশ আইয়ার এদিনও পরিস্থিতির দাবি মেটাতে পারেননি। দলের স্কোর ২৮৭ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব শার্দুল ঠাকুর ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের। সপ্তম উইকেটে দুজনে গড়েন ৩৮ বলে ৪৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। প্রথম ম্যাচে নবম উইকেটে জাসপ্রিত বুমরাহর সঙ্গেও অবিচ্ছিন্ন ৫১ রানের জুটিতে পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছিলেন শার্দুল।

৩৮ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় শার্দুল অপরাজিত থাকেন ৪০ রানে। আগের ম্যাচে প্রথম ফিফটিতে তিনি করেছিলেন অপরাজিত ৫০। ২৪ বলে একটি করে চার-ছক্কায় অশ্বিন করেন ২৫।

রান তাড়ায় ডি ককের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় ওভারে ভুবনেশ্বর কুমারকে ছক্কায় ওড়ানোর আগে-পরে মারেন দুটি চার। স্লগ সুইপে ছক্কা মারেন অশ্বিনকে।

ফিফটি তুলে নেন তিনি মাত্র ৩৬ বলে। মালানও খেলেন দারুণ কিছু শট। ষোড়শ ওভারে জুটির রান স্পর্শ করে তিন অঙ্ক।

বিপজ্জনক হয়ে ওঠা ডি কককে এলবিডব্লিউ করে ১৩২ বলে ১৩২ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন শার্দুল। ভারত উইকেটটি পায় রিভিউ নিয়ে। ৬৬ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় সাজানো কিপার-ব্যাটসম্যানের ৭৮ রানের ইনিংস।

৬৬ বলে ফিফটি করে মালান এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। ৭ রান দূরে থাকতে তাকে বোল্ড করে দেন জাসপ্রিত বুমরাহ। ১০৮ বলে ৮ চার ও একটি ছক্কায় গড়া তার ৯১ রানের ইনিংস।

পরের ওভারে নিজের ফিরতি ক্যাচে প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান টেম্বা বাভুমাকে (৩৬ বলে ৩৫) বিদায় করেন যুজবেন্দ্র চেহেল। তবে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো কিছু করতে পারেনি তারা।

৯১ রানের ইনিংসের পথে ইয়ানেমান মালানের একটি শট। ছবি: রয়টার্স

বাকিটা সহজেই সারেন মারক্রাম ও ফন ডার ডাসেন। চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৭৪ রানের জুটিতে আগেভাগেই দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন তারা।

মারক্রাম ৪১ বলে ৪ চারে করেন ৩৭। ফন ডার ডাসেনের ৩৭ রানের ইনিংসে চার দুটি। ৩১ রানে জয়ের প্রথম ম্যাচে ৯৬ বলে অপরাজিত ১২৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।    

আগামী রোববার কেপ টাউনে হবে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে। ভারতের সামনে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর চ্যালেঞ্জ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৫০ ওভারে ২৮৭/৬ (রাহুল ৫৫, ধাওয়ান ২৯, কোহলি ০, পান্ত ৮৫, শ্রেয়াস ১১, ভেঙ্কাটেশ ২২, শার্দুল ৪০*, অশ্বিন ২৫*; এনগিডি ৮-০-৩৫-০, মাগালা ৮-০-৬৪-১, মারক্রাম ৮-০-৩৪-১, মহারাজ ৯-০-৫২-১, ফেলুকওয়ায়ো ৮-০-৪৪-১, শামসি ৯-০-৫৭-২)

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৮.১ ওভারে ২৮৮/৩ (মালান ৯১, ডি কক ৭৮, বাভুমা ৩৫, মারক্রাম ৩৭*, ফন ডার ডাসেন ৩৭*; বুমরাহ ১০-০-৩৭-১, ভুবনেশ্বর ৮-০-৬৭-০, অশ্বিন ১০-১-৬৮-০, চেহেল ১০-০-৪৭-১, শার্দুল ৫-০-৩৫-১, ভেঙ্কাটেশ ৫-০-২৮-০, শ্রেয়াস ০.১-০-১-০)

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুটি শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা ২-০ তে এগিয়ে

ম্যান অব দা ম্যাচ: কুইন্টন ডি কক