দুর্দান্ত রাবাদা, কোহলির ব্যাটিং মাস্টারক্লাস

মেঘলা আকাশের নিচে কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজেদের মেলে ধরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা। চার স্পেলের অসাধারণ বোলিংয়ে কাগিসো রাবাদা নাড়িয়ে দিলেন ভারতের ব্যাটিং। এর মাঝেই ধৈর্যের চরম পরীক্ষা দিয়ে, একের পর এক বল ছেড়ে ও দারুণ সব শটে বিরাট কোহলি উপহার দিলেন ব্যাটিং মাস্টারক্লাস। তার দল যদিও গুটিয়ে গেল দুইশ পেরিয়েই।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2022, 05:31 PM
Updated : 11 Jan 2022, 05:41 PM

কেপ টাউনে সিরিজ নির্ধারণী শেষ টেস্টের প্রথম দিন ভারত অলআউট হয়েছে ২২৩ রানে। ব্যাটিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটাও অবশ্য ভালো হয়নি। ফর্মে থাকা ডিন এলগারের উইকেট হারিয়ে দিন শেষ করেছে তারা ১৭ রানে। এখনও পিছিয়ে আছে ২০৬ রানে।

ভারতের ইনিংসের ৩৪ শতাংশ রানই এসেছে চোট কাটিয়ে ফেরা কোহলির ব্যাট থেকে। কঠিন কন্ডিশনে ক্যারিয়ারের ৯৯তম টেস্টে খেলতে নেমে ২০১ বলে তিনি খেলেন ৭৯ রানের ইনিংস; ১২টি চারের পাশে ছক্কা একটি।

২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই পুনে টেস্টের পর এই প্রথম এক ইনিংসে দুইশ বল খেললেন কোহলি। সেঞ্চুরি খরা যদিও তার কাটল না এবারও। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে বিপক্ষে কলকাতা টেস্টে সেঞ্চুরি পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কোনো সংস্করণে তার সেঞ্চুরি নেই টানা ৬১ ইনিংস ধরে।

প্রথম দিনের উইকেটে মিলেছে মুভমেন্ট, সঙ্গে ছিল বাড়তি বাউন্স। দক্ষিণ আফ্রিকার সফলতম বোলার রাবাদা; ২২ ওভারে ৭৩ রানে নেন ৪ উইকেট। এর মধ্যে আছে কোহলির উইকেটও। আরেক পেসার মার্কো ইয়ানসেন নেন তিনটি।

পিঠের চোটে জোহানেসবার্গে খেলতে না পারা কোহলি নিউল্যান্ডসে ফিরে টস জিতে নেন ব্যাটিং। তার জায়গায় দ্বিতীয় টেস্টে সুযোগ পেয়েছিলেন যিনি, সেই হনুমা বিহারি চলে যান বাইরে। চোটে ছিটকে যাওয়া মোহাম্মদ সিরাজের জায়গায় ইশান্ত শর্মার সঙ্গে লড়াইয়ে জিতে সুযোগ পান উমেশ যাদব। স্বাগতিকরা ভাঙেনি ‘উইনিং কম্বিনেশন।’

শুরু থেকেই ভারতের দুই ওপেনারের পরীক্ষা নেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা। তবে লোকেশ রাহুল ও মায়াঙ্ক আগারওয়াল কাটিয়ে দেন ১১ ওভার। এরপরই জোড়া ধাক্কা; পরপর দুই ওভারে ফিরে যান দুই জনই।

একের পর এক ডট বলে ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ তৈরি করার পুরস্কার পায় স্বাগতিকরা। ডুয়ানে অলিভিয়েরের দারুণ ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন রাহুল। রাবাদার বলে শুরুতে একবার ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া মায়াঙ্ক কাজে লাগাতে পারেননি সুযোগ। এই পেসারের বলেই তিনি দ্বিতীয় স্লিপে ধরা পড়েন।

৩৩ রানে ২ উইকেট হারানোর ধাক্কা ভারত সামলে ওঠার চেষ্টা করে কোহলি ও চেতেশ্বর পুজারার ব্যাটে। কোহলি রানের খাতা খোলেন ১৬ বল খেলে, ইয়ানসেনকে তার ‘ট্রেডমার্ক’ কাভার ড্রাইভে চার মেরে। লাঞ্চের আগে এই দুই জন হতে দেননি আর কোনো বিপদ।

পুজারা এগোচ্ছিলেন ফিফটির দিকে। তাকে কট বিহাইন্ড করে ১৫৩ বল স্থায়ী ৬২ রানের জুটি ভাঙেন ইয়ানসেন। ৭৭ বলে ৭টি চারে গড়া পুজারার ৪৩ রানের ইনিংসটি। অসাধারণ এক ডেলিভারিতে দ্রুত অজিঙ্কা রাহানেকে কট বিহাইন্ড করে ফেরান রাবাদা।

সেঞ্চুরিয়ন টেস্টে দুই ইনিংসেই কোহলি আউট হয়েছিলেন শরীর থেকে বাইরের বল তাড়া করে। এখানেও তাকে একের পর এক অফ স্টাম্পের বাইরে বল করে যান পেসাররা, বিশেষ করে রাবাদা। কোহলিও সেসব ডেলিভারি ছেড়ে দিয়ে দেখান ধৈর্য। 

তার বিপক্ষে স্বাগতিক পেসারদের প্রথম ১০০ বলের ৬৮টি ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে। এর ৪৪টিই ছেড়ে দেন কোহলি। ১০০ বলের মধ্যে তার প্রিয় কাভার ড্রাইভ করেন কেবল তিনটি, সবগুলোতেই পান বাউন্ডারি।

পঞ্চম উইকেটে রিশাভ পান্তের সঙ্গে জমে ওঠে কোহলির জুটি। ভারত অধিনায়ক চার মেরে ফিফটি পূর্ণ করেন ১৫৮ বলে। সঙ্গে জুটির রানও ছাড়ায় পঞ্চাশ। এরপরই ভাঙে ১১৩ বল স্থায়ী ৫১ রানের জুটি। ইয়ানসেনের বাড়তি বাউন্সে গালিতে ধরা পড়েন পান্ত। ৫০ বলে ৪টি চারে এই কিপার-ব্যাটসম্যান করেন ২৭ রান।

এরপর এক প্রান্তে একের পর এক বিদায় নেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, শার্দুল ঠাকুর, জাসপ্রিত বুমরাহ। অন্য প্রান্তে কোহলি চালিয়ে যান লড়াই। জাগান দীর্ঘ সেঞ্চুরি খরা কাটানোর সম্ভাবনা।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাবাদার সঙ্গে দ্বৈরথে পারেননি কোহলি। অফ স্টাম্পের বাইরে বাড়তি বাউন্স পাওয়া বল তাড়া করে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়ে শেষ হয় তার ধ্রপদী ইনিংসটি। পরে মোহাম্মদ শামিকে ফিরিয়ে ইনিংস গুটিয়ে দেন লুঙ্গি এনগিডি। ৫৬ রানের মধ্যে ভারত হারায় শেষ ৬ উইকেট।

জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ধাক্কা খায় পঞ্চম ওভারে। আগের টেস্টে জয়ের নায়ক এলগার স্লিপে ক্যাচ দেন বুমরাহর দারুণ এক ডেলিভারিতে। দিনের বাকিটা কাটিয়ে দেন এইডেন মারক্রাম ও ‘নাইটওয়াচম্যান’ কেশভ মহারাজ।

৪ ওভারের সবগুলো মেডেন নিয়ে বুমরাহর শিকার ওই একটি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত ১ম ইনিংস: ৭৭.৩ ওভারে ২২৩ (রাহুল ১২, মায়াঙ্ক ১৫, পুজারা ৪৩, কোহলি ৭৯, রাহানে ৯, পান্ত ২৭, অশ্বিন ২, শার্দুল ১২, বুমরাহ ০, উমেশ ৪*, শামি ৭; রাবাদা ২২-৪-৭২-৪, অলিভিয়ের ১৮-৫-৪২-১, ইয়ানসেন ১৮-৬-৫৫-৩, এনগিডি ১৪.৩-৭-৩৩-১, মহারাজ ৫-২-১৪-১)

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৮ ওভারে ১৭/১ (এলগার ৩, মারক্রাম ৮*, মহারাজ ৬*; বুমরাহ ৪-৪-০-১, উমেশ ২-০-১০-০, শামি ২-০-৭-১)