মাশরাফির চেয়ে ৬ উইকেট কম নিয়ে টেস্ট শিকারে বাংলাদেশের হয়ে দুইয়ে আছে শাহাদাত হোসেন। এছাড়া দেশের আর কোনো পেসারের ৪০ উইকেটও নেই। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ইবাদত হোসেন ৪৬ রানে নেন ৬ উইকেট; প্রায় ৯ বছর পর টেস্টে ৫ উইকেটের দেখা পেলেন বাংলাদেশের কোনো পেসার।
পেস বোলারদের জীবন বাংলাদেশে খুবই কঠিন। কন্ডিশন সহায়ক নয়, উইকেটেও সাধারণত রাখা হয় না কোনো সহায়তার উপকরণ। দেশের মাঠে স্রেফ এক পেসার নিয়ে টেস্ট খেলার নজির আছে অনেক। পর্যাপ্ত খেলার সুযোগ না পাওয়ায় দেশের বাইরে খেলার সময় খেই হারিয়েছেন পেসাররা নানা সময়ে। এবার সেই পেসাররাই বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন ইতিহাস গড়া জয়।
দুই ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা ইবাদত। তাসকিন আহমেদ প্রথম ইনিংসে ভালো বোলিং করেও উইকেট পাননি, দ্বিতীয় ইনিংসে নেন তিন উইকেট। তরুণ শরিফুল ইসলাম প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নিয়ে বড় ভূমিকা রাখেন নিউ জিল্যান্ডের স্কোর নাগালের মধ্যে রাখায়।
বিপিএল খেলার লক্ষ্য নিয়ে দীর্ঘদিন পর বোলিংয়ে ফেরার পর বৃহস্পতিবার সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মাশরাফি বললেন, পেসারদের হাত ধরে জয় আসায় তিনি দারুণ খুশি।
“এটা দারুণ ব্যাপার যে পেসাররা ম্যাচ জিতিয়েছে। হ্যাঁ, ব্যাটসম্যানরা রান করেছে। তবে ইবাদত ওই সময়ে উইকেট না নিলে হয়তো আমরা জিততাম না। ড্র হতে পারত। এটা খুব ভালো হয়েছে যে পেস বোলাররা ম্যাচ জিতিয়েছে।”
এই টেস্টের আগে ১০ টেস্টে ইবাদতের উইকেট ছিল স্রেফ ১১টি। বোলিং গড় ছিল ভীষণ বাজে। তারপরও তাকে খেলিয়েছে দল। ২০১৯ সালে অভিষেকের পর থেকে তাকে নিয়মিত রাখা হয়েছে দলের সঙ্গে। ক্যারিয়ারের প্রথম ধাপে টেস্টে মোটেও সুবিধা করতে না পারা তাসকিন গত বছর থেকে ধারাবাহিকভাবেই দারুণ বোলিং করে চলেছেন।
মাশরাফির মতে, ইবাদতকে নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল বলেই ফল মিলেছে।
“পেস বোলারদের নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে পেসাররা কখনও এতটা খারাপ করেনি। টেস্টে একটা জায়গা ছিল, অন্যান্য দেশের মতো প্রভাব আমাদের পেসাররা রাখতে পারেনি। টেস্টে আরও কাজ করার সুযোগ আছে। কাজ করলে ফলও আসবে। তাসকিনের দিকে তাকান, ইবাদত ভালো করছে।”
“ইবাদত ভালো করার কারণ কিন্তু ফ্লুক নয়। ও লম্বা সময় ধরে খেলছে এবং ওকে টেস্টে বিবেচনা করা হয়েছে। তাকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে যে, ‘তুমি টেস্ট খেলছো।’ সে জানে এটা আমার ক্যারিয়ার, আমার ভবিষ্যৎ। এখানে সার্ভিসটা দিতে হবে।”
মাশরাফির বিশ্বাস, পেসারদের যদি যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয় ও তাদের ওপর আস্থা রাখা হয়, এভাবেই তারা নায়ক হতে পারবেন।
“একটা খেলোয়াড়ের সেট হতেও সময় লাগে। ইবাদত আস্তে আস্তে সেট হয়েছে। রাহি অনেক দিন ধরে সার্ভিস দিচ্ছে। ওরা যখন এই জায়গাটা পাবে যে, একটা ফরম্যাটে আমাকে লম্বা সময় দেখা হবে, তখন আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং আস্তে আস্তে ফল মেলে। যখন জায়গাটা পায় তখন ফলাফল আসে।”
“পেসারদের ওপর আপনার আস্থা কতটুকু আছে, এটার ওপরও কিন্তু নির্ভর করে। সেই আস্থা না থাকলে পেসারদেরও নিজেদের ওপর আস্থা কমে আসে। গত বিপিএল থেকে ইবাদত দারুণ বোলিং করছে। টেস্টে হয়ত অনেক সময় উইকেট পক্ষে ছিল না। বাংলাদেশে খেলা হলে স্পিনাররাই বেশি বোলিং করে।”